খেলাতে সফল, খামারেও সফল

নিজের খামারে শিরিন সুলতানা।  ছবি: সংগৃহীত
নিজের খামারে শিরিন সুলতানা। ছবি: সংগৃহীত

প্রতি মুহূর্তেই যেখানে লড়াই করে টিকে থাকতে হয়, সেখানে লড়াই করেই দেশকে আরও একটু এগিয়ে নেওয়ার গল্পটি আর সাধারণ থাকে না। একজন শিরিন সুলতানার গল্প তেমনই। শিরিন পেশায় রেসলার ও ব্যবসায়ী। পরিবারে আর কেউ নেই রেসলিং অর্থাৎ কুস্তিতে। এমনকি পুরো ময়মনসিংহ বিভাগে তিনি ছাড়া আর কেউই নেই এই খেলায়। ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়ার এই লড়াকু মেয়ে বারবার চমক দেখিয়েছেন দেশে-বিদেশে।

২০০৮-০৯ সময়টায় বদলে যায় শিরিনের জীবন। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদে ‘ট্যালেন্ট হান্ট’ প্রতিযোগিতা থেকে মাত্র এক মাসের একটি প্রশিক্ষণ পান। এরপর শুধুই এগিয়ে চলা। ২০০৯ সালেই স্বর্ণপদক জিতে নেন জাতীয় রেসলিং চ্যাম্পিয়নশিপে। এরপর ২০১৫ সাল পর্যন্ত টানা জিতে গেছেন স্বর্ণপদক।

রেসলিংয়ের পাশাপাশি অন্য খেলাতেও নিজের প্রতিভা দেখিয়েছেন শিরিন সুলতানা। জাতীয় রোইয়িং চ্যাম্পিয়নশিপে স্বর্ণপদক পেয়েছেন টানা চারবার (২০১০-১৩)। ২০১৫ সালে জাতীয় মহিলা কাবাডিতে স্বর্ণপদক জেতেন। জাতীয় উশু চ্যাম্পিয়নশিপে রৌপ্যপদক পান ২০১০ ও ২০১১ সালে। ২০১৪ সালে জিতে নেন স্বর্ণপদক।

দেশের মাটিতে জয়ের পাশাপাশি আছে বিদেশ বিজয়ও। দ্বিতীয় ইন্দো-বাংলাদেশ রেসলিং চ্যাম্পিয়নশিপে স্বর্ণপদক পান ২০১২ সালে। ২০১৩ সালে এশিয়ান রেসলিং প্রতিযোগিতায় পান ব্রোঞ্জপদক। এ ছাড়া এশিয়ান গেমস, এশিয়ান ইনডোর এবং মার্শাল আর্ট গেমস পুরস্কার, ইসলামিক সলিডারিটি গেমসসহ আরও অনেক আসরে পেয়েছেন পদক। এ ছাড়া প্রেসিডেন্ট আনসার মেডেল, ক্রীড়া লেখক সম্মাননা, হিউমান রাইটস সম্মাননা, মে দিবস সম্মাননাসহ আরও অনেক স্বীকৃতি পেয়েছেন শিরিন সুলতানা।

যখন তিনি কুস্তিগির
যখন তিনি কুস্তিগির

এখানেই শেষ নয় শিরিনের কথা। ২০১৩ সালে পোলট্রি ব্যবসা শুরু করেন। গতকাল শনিবার মুঠোফোনে কথায় কথায় শিরিন বললেন, ‘বাড়িতে আমাদের বেশ জায়গাজমি খালি ছিল। আমি একদিন ভাবলাম এখানে পোলট্রি ফার্ম করা যায়। শুরু করি ৩ হাজার ৬০০ মুরগি দিয়ে। এখন আছে ৩০ হাজারের বেশি।’ প্রতিদিন নতুন মুরগি জন্মাচ্ছে আর বিক্রিও তো হচ্ছে। মাছ চাষেরও দুটি প্রকল্প আছে শিরিনের। আর কী করেছেন? শিরিন বলেন, ‘মাছের আরও তিনটি প্রকল্প শুরু হবে কিছুদিনের মধ্যেই। অনেকটা জায়গা নিয়ে দেশি লেবু আর পেঁপে চাষ শুরু করেছি। খুব তাড়াতাড়িই ফলন পাওয়া যাবে।’ তাঁর এই ব্যবসায় প্রকল্পগুলোতে কাজ করছেন প্রায় ২০ জন কর্মী। এখনো বিয়ে করেননি শিরিন। দুই ভাই ও তিন ভাইবোনের মধ্যে একমাত্র তিনিই এসেছেন রেসলিংয়ে। অন্যরা ব্যবসায়ী।

প্রশ্ন করলাম, খেলা থেকে ব্যবসা—এত কিছু করতে গিয়ে কোনো সমস্যা হয়েছে কখনো? জবাব দিলেন শিরিন—‘কিছু সমস্যা তো হয়ই। সেগুলো বাড়তে না দিয়ে দ্রুত সমাধান করে ফেলার চেষ্টা করি। আর রেসলিংয়ে আমার সমস্যা যা হওয়ার কথা ছিল তা অনেকটা কমে গেছে আমাদের আগে যাঁরা খেলেছেন তাঁদের জন্য।’

শিরিন সুলতানা জানান, ২০০৪ সালে তাঁর অগ্রজরা যখন রেসলিং শুরু করে, তখন হয়েছে নানা সমস্যা। কাজে বাধা দেওয়ার চেষ্টা থেকে এমনকি স্টেডিয়াম ঘেরাও পর্যন্ত হয়েছে। কিন্তু তাঁরা থেমে থাকেননি। তাই আজ থেমে থাকা চলবে না তাঁরও। প্রথম দিকে পরিবারের মানুষদের কিছুটা আপত্তি থাকলেও তাঁর সফলতার পাশে ছিলেন সবাই।

দেশকে নিয়ে তাঁর ভাবনার প্রতিফলন সম্ভবত নানাভাবেই চোখে পড়ে। কিন্তু সফলতার এমন শীর্ষে থেকে দেশের জন্য কৃষিকাজ করার ভাবনা তাঁকে সাধারণের চোখে সফল করে তুলছে বারবার।