সাজজিদ 'ক্যামেরাওয়ালা'

সাজজিদ আহমেদ। ছবি: সংগৃহীত
সাজজিদ আহমেদ। ছবি: সংগৃহীত

ক্যাম্পাসে সবাই তাঁকে ডাকে ‘ক্যামেরাওয়ালা’ বলে। এক কাঁধে ব্যাগ, তো অন্য কাঁধটা বেশির ভাগ সময় থাকে ক্যামেরার দখলে। ব্যস, এভাবেই সাজজিদ আহমেদের নাম হয়ে গেছে ‘সাজজিদ ক্যামেরাওয়ালা’। ক্যাম্পাসে কিংবা ক্যাম্পাসের বাইরে, হাঁটতে-চলতে যেখানেই ছবি তোলার কোনো বিষয় পেয়ে যান, সঙ্গে সঙ্গে নিজের ক্যামেরায় ধরে রাখতে দেরি করেন না। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের যেকোনো অনুষ্ঠান কিংবা বিভাগের আয়োজন, ছবি তোলার দরকার পড়লেই সিনিয়র-জুনিয়র সবাই খোঁজে সাজজিদকে। নিজের তোলা ছবি দিয়েই ঝুলিতে ভরেছেন বেশ কয়েকটি জাতীয় ও আঞ্চলিক পুরস্কার। সাজজিদ পড়ছেন ইংরেজি বিভাগের শেষ বর্ষে। এখন তিনি খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় ফটোগ্রাফি সোসাইটির সভাপতি।

সাজজিদের আলোকচিত্রী হওয়ার গল্পটা একটু অন্য রকম। ডিএসএলআর ক্যামেরা কিনলাম আর ‘ফটোগ্রাফার’ হয়ে গেলাম, তা নয়। বলছিলেন, ‘স্কুলে পড়ার সময় বাসার মোবাইল ফোন নিয়ে যশোর শহরের অলিতে গলিতে ঘুরতাম। ২০১১ সালে কলেজে ওঠার পর “এক্সেস টু লাইফ ফটোগ্রাফি কমপিটিশন অ্যান্ড এক্সিবিশন”-এর খবর পেলাম। দৃক গ্যালারিতে হবে প্রদর্শনী। কী মনে করে যেন নিজের তোলা একটা ছবি পাঠালাম। আমি তখন মাত্র কলেজের ফার্স্ট ইয়ারে পড়ি। ভেবেছিলাম, সারা দেশ থেকে আলোকচিত্রীরা ছবি পাঠাবে। সেখানে আমার ছবি কি আর পাত্তা পাবে!’ পুরস্কার-টুরস্কার নয়, নিজেকে যাচাই করাই ছিল লক্ষ্য। কিন্তু সাজজিদকে অবাক করে দিয়ে সারা দেশের আলোকচিত্রীদের পাঠানো ছবিগুলোর মধ্য থেকে প্রথম পুরস্কার জিতে নেয় তাঁর তোলা ছবিটা। পুরস্কারের অর্থমূল্য ছিল ১০ হাজার টাকা। সেই পুরস্কারই তাঁকে আত্মবিশ্বাস এনে দেয়, আরও ভালো ছবি তোলার নেশা পেয়ে বসে। এভাবেই আলোকচিত্রী হওয়ার প্রেরণা পান তিনি।

সাজজিদ আরও বেশ কিছু পুরস্কারের পাশে লিখিয়েছেন নিজের নাম। বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢোকার সময় মা-বাবার কাছে আবদার করে চেয়ে নিয়েছিলেন একটা শখের ডিএসএলআর ক্যামেরা। ছেলের ছবি তোলার এই আগ্রহ দেখে মা-বাবা তাঁকে নিরাশ করেননি। আর সেই ডিএসএলআরে তোলা ছবি দিয়েই দেশীয় প্রতিযোগিতাগুলোর মধ্যে প্রায় ত্রিশটির বেশি পুরস্কার নিজের করে নিয়েছেন। এর মধ্যে আছে ২০১২ সালে ন্যাশনাল জিওগ্রাফি আয়োজিত ‘চিলড্রেনস আই অন আর্থ ইন্টারন্যাশনাল ফটোগ্রাফি এক্সিবিশন অ্যান্ড কমপিটিশন’-এ পাওয়া সম্মাননা এবং আজারবাইজানে আলোকচিত্র প্রদর্শনীতে নিজের ছবি প্রদর্শনের সুযোগ। এ ছাড়া বিভিন্ন সময় বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় আয়োজিত আলোকচিত্র প্রতিযোগিতায় পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।

বেড়ে ওঠা যশোর শহরে। বাবা সুলতান আহমেদ ও মা জেবুন নাহারের বড় সন্তান সাজজিদ পড়েছেন যশোর জিলা স্কুল এবং সরকারি এম এম কলেজ, যশোরে। দেশের দুঃখ-দুর্দশায় ভারাক্রান্ত মানুষগুলোর চিত্র আরও ভালোভাবে বিশ্বের কাছে তুলে ধরতে চান বলেই ভবিষ্যতে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থার হয়ে কাজ করার স্বপ্ন দেখেন এই তরুণ।