মানুষের মধ্যে ভালোটা খোঁজো: জিমি ফ্যালন

জিমি ফ্যালন
জিমি ফ্যালন
>জিমি ফ্যালন একজন মার্কিন কমেডিয়ান ও উপস্থাপক। ‘দ্য টুনাইট শো স্টারিং জিমি ফ্যালন’অনুষ্ঠানটির জন্য তুমুল জনপ্রিয় তিনি। অভিনয়, গান আর প্রযোজনার সঙ্গেও যুক্ত আছেন। ৪ জুন যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার মার্জরি স্টোনম্যান ডগলাস হাইস্কুলের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে বক্তা ছিলেন তিনি।

সমাবর্তন বক্তা বললে আমাদের চোখে ভাসে একজন অনুপ্রেরণাদায়ী, বাগ্মী, পৃথিবী বদলে দেওয়া মানুষের মুখ। আবার হাইস্কুলের শিক্ষার্থী বলতে আমরা বুঝি অপরিপক্ব তরুণদের, যারা এখনো বড় হতে শিখছে, যারা একটু অদ্ভুত। আজ এমন এক অনুষ্ঠানে তোমাদের স্বাগত জানাচ্ছি, যেখানে ঠিক উল্টোটা ঘটছে!

আজ হাইস্কুলের দিন শেষ হচ্ছে, তোমরা নিশ্চয়ই গর্বিত। ২০১৮ সালের হাইস্কুল পেরোনো শিক্ষার্থীরা, আজ থেকে ক্লাসে আর তোমাদের দেখা হবে না। জানি, আগামী ১০ বছর তোমরা একে অন্যকে দেখার জন্য রাত দুটোর সময় ফেসবুক সার্চ করবে।

প্রথম কথা হলো: যখন সামনে এগোনো কঠিন মনে হবে, বুঝে নিয়ো তোমার জন্য ভালো কিছু অপেক্ষা করছে। এগিয়ে যাও। গত মার্চ মাসে ওয়াশিংটন ডিসিতে আয়োজিত ‘মার্চ ফর আওয়ার লাইভস’ (গত ১৪ ফেব্রুয়ারি মার্জরি স্টোনম্যান ডগলাস হাইস্কুল প্রাঙ্গণে গুলি করে ১৭ জনকে হত্যা করেছিল নিকোলাস ক্রুজ নামে এক তরুণ। এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বন্দুকের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণের দাবিতে মার্চ মাসে একটি পদযাত্রা আয়োজন করেছিল শিক্ষার্থীরা—বি.স.) আন্দোলনে তোমাদের অনেকের সঙ্গে আমার দেখা হয়েছে। অসাধারণ একটা দিন ছিল। ধন্যবাদ তোমাদের সাহস আর মনোবলের জন্য। সেদিন তোমাদের অসাধারণ কিছু বক্তৃতা শুনেছি, যা আমি কখনোই দিতে পারতাম না। আমি আর আমার স্ত্রী আমাদের দুই মেয়েকে সেদিন সঙ্গে এনেছিলাম। আমরা ওদের দেখাতে চেয়েছিলাম, আশা আর আলোর মিশ্রণ দেখতে কেমন! আমার খুব সৌভাগ্য, তোমাদের শিক্ষকদের সঙ্গে দাঁড়িয়ে আমি তোমাদের দেখছিলাম। তোমরা কি জানো, শিক্ষকেরা তোমাদের নিয়ে কতখানি গর্বিত! সত্যি বলছি। তাঁরা রীতিমতো কাঁপছিলেন আর বলছিলেন, ‘ওই ছেলেটা আমার ছাত্র! ওই মেয়েটা আমার ছাত্রী! আমি ওদের ইতিহাস পড়িয়েছি!’ আর এখন? তোমরাই ইতিহাস তৈরি করছ। কী দারুণ, তাই না!

আমার শিক্ষকেরা আমাকে নিয়ে এভাবে কখনো গর্ব করেননি। আমি সেরা ছাত্র ছিলাম না। বলছি না আমি বোকা ছিলাম। আমি ছিলাম স্রেফ আর দশজনের মতো। সব সময় পড়তে ভালো লাগত না। তাই আমাকে ‘সামার স্কুল’-এ যেতে হয়েছে। মা-বাবা তখন বলেছেন, ‘কী হে বুদ্ধিমান, এবার নিজের দিকে তাকাও। সামার স্কুলে যাচ্ছ। এখন কেমন লাগে? গ্রীষ্মের পুরো ছুটিটা বরবাদ করলে। খুব মজা, তাই না?’ আমার ভীষণ মন খারাপ হয়েছিল। শোবার ঘরে গিয়ে আমি একা একা কেঁদেছিলাম। কিন্তু মজার ব্যাপার কী জানো, সামার স্কুল আমি উপভোগ করেছি। সেখানে আরও ১৫টা ‘আমি’র সঙ্গে আমার দেখা হয়েছে। সেখানে অন্য মানুষগুলো বেশ মজার আর কেমন যেন একটু বোকা বোকা। সামার স্কুল আমি ভালোবেসে ফেলেছি। এখানেই আমি আমার মনের মতো কিছু বন্ধু পেয়েছি।

অতএব আমি যেটা বলতে চাইছি—প্রতিটি খারাপ অভিজ্ঞতা থেকে একটা না-একটা ভালো কিছু বেরিয়ে আসতে পারে। কখনো কখনো ব্যর্থতা আমাদের সম্পূর্ণ নতুন একটা পথের সন্ধান দেয়, যে পথে যাওয়ার কথা হয়তো তুমি কখনো কল্পনাও করোনি, কিন্তু এই পথই তোমাকে আরও উন্নত ও শক্তিশালী করে। তোমরা এরই মধ্যে সেটা প্রমাণ করেছ। তোমাদের একটা ভয়াবহ অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। কিন্তু সেটা তোমাদের থামিয়ে দিতে পারেনি। তোমরা একটা আন্দোলন শুরু করেছ। সেই আন্দোলন শুধু ফ্লোরিডায় না, শুধু আমেরিকায় না, সারা বিশ্বে ছড়িয়ে গেছে। সারা পৃথিবী তোমার কণ্ঠস্বর শুনেছে, এই সিদ্ধান্ত তুমি নিয়েছ। একটা খারাপ অভিজ্ঞতা থেকে একটা ইতিবাচক পরিবর্তন আনার কাজ তুমিই করেছ। ভয়কে ছাপিয়ে আশার হাত ধরেছ তুমিই!

আমরা জানি না ভবিষ্যতে আমাদের জন্য কী অপেক্ষা করছে। এটাই স্বাভাবিক। আমার পরামর্শ হলো, তুমি কী করতে চাও সেটা নিয়ে ভেবো না। বরং ভাবো, তুমি এটা কেন করতে চাও? বাকি সমস্যাগুলোর সমাধান এমনিই হয়ে যাবে। আমি আমার কাজটা ভালোবাসি। আমি কৌতুক বলে মানুষকে হাসাই এবং এটা একটা দারুণ কাজ। মানুষ সব সময় আমাকে জিজ্ঞেস করে, ‘তোমার কাজের সবচেয়ে ভালো দিক কোনটা?’ আমি বলি, ‘আমি মানুষকে আনন্দ দিই। এটাই সবচেয়ে ভালো দিক।’

ছয়-সাত মাস আগে একটা মেয়ে আমার দিকে ছুটে এল। বলল, ‘জানো, আমি খুব খারাপ সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিলাম। খুব হতাশ লাগছিল। এমন সময় আমি ইউটিউবে তোমার সবগুলো ভিডিও দেখলাম, আর আমার মন ভালো হয়ে গেল। আমি শুধু তোমাকে ধন্যবাদ জানাতে চাই।’ এরপর আমরা প্রায় ২০ মিনিট কথা বললাম। সে বলল, ‘আমি কি একটা সেলফি তুলতে পারি?’ বললাম, ‘হ্যাঁ, অবশ্যই।’ সে বলল, ‘আমি কি স্ন্যাপচ্যাটের জন্য তোমার সঙ্গে আরেকটা সেলফি তুলতে পারি?’ আমি বললাম, ‘নিশ্চয়ই পারো।’ দুটো সেলফি তোলার পর সে রীতিমতো চিৎকার করে বলল, ‘কী সৌভাগ্য, বিশ্বাস হচ্ছে না আমি জিমি কিমেলের সঙ্গে দেখা করেছি!’

কথা হলো: আমি আমার কাজটা ভালোবাসি। মেয়েটা যদি জানত আমি কে, তাহলে তার সত্যিই হাসি পেত।

আরেকটা প্রশ্ন প্রায়ই লোকে আমাকে জিজ্ঞেস করে। ‘ছোটবেলার আমার সঙ্গে এখনকার আমার দেখা হলে আমি তাকে কী বলতাম?’ অনেক কথাই বলতাম। প্রথমটা হলো: বাছাধন, কার্বোহাইড্রেটযুক্ত খাবার একটু কম খেয়ো। ছোটবেলার আমার জন্য বড়বেলার আমার দ্বিতীয় পরামর্শ হতো: শোনো। আশপাশে সবার কথা মন দিয়ে শোনো। পৃথিবীতে হাজারো রকমের কণ্ঠস্বর আছে। প্রত্যেকের কথায় ভিন্ন সুর, ভিন্ন স্বাদ, ভিন্ন রং। কিন্তু আমরা সবাই একই রংধনুর অংশ। আর এই রংধনুতে যতখানি হলুদ লাগবে, ততখানিই লাগবে লাল, নীল, সবুজ, বেগুনি...। সবার মধ্যেই কিছু না কিছু ভালো আছে। মানুষের ভালোটা খুঁজে বের করো। আমরা যদি একে অপরের কথা শুনি, তাহলে আমরা সেটা পাব।

নতুন কিছু চেষ্টা করো। অতীতকে মনে রাখো, কিন্তু সেখানে পড়ে থেকো না। আশপাশের মানুষকে সম্মান করো। হাসো। চিঠি লেখো। মানুষকে ‘হ্যালো’ বলো। যত পারো হাসো। নাচো, মন খুলে।

বেশির ভাগ সমাবর্তন বক্তা বলেন, ‘তোমরাই আমাদের ভবিষ্যৎ।’ আমি সে কথা বলব না। বরং বলব, তোমরাই আমাদের বর্তমান। তোমরা ভালো করছ। সফল হচ্ছ। পৃথিবী বদলে দিচ্ছ। চালিয়ে যাও। আমাদের আরও গর্বিত করো। ধন্যবাদ।

(সংক্ষেপিত)
ইংরেজি থেকে অনুবাদ: মো. সাইফুল্লাহ
সূত্র: টাইম ডট কম