আমরা পেরেছি

>গত কয়েক বছর আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডে (আইএমও) বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা খুব ভালো ফল পেলেও স্বর্ণপদকটা অধরাই থেকে যাচ্ছিল। এবার সেই পদক এসেছে চট্টগ্রামের ক্যান্টনমেন্ট ইংলিশ স্কুল ও কলেজের ছাত্র আহমেদ জাওয়াদ চৌধুরীর হাত ধরে। রোমানিয়ার ক্লুজ-নাপোকা শহরে বসেছিল ৫৯তম আইএমওর আসর। স্বপ্ন নিয়ের জন্য স্বর্ণপদক জয়ের পেছনের গল্প লিখেছে আহমেদ জাওয়াদ চৌধুরী
আহমেদ জাওয়াদ চৌধুরী
আহমেদ জাওয়াদ চৌধুরী

ডাচ–বাংলা ব্যাংক–প্রথম আলো গণিত উৎসবে যখন প্রথম অংশ নিই, তখন আমি সবে মাত্র ক্লাস ফাইভ থেকে সিক্সে উঠেছি। গণিতের সমস্যাগুলো সেই সময় থেকেই খুব ভালো লাগত। ৫০০ মজার সমস্যা কিংবা প্রাণের মাঝে গণিত বাজে—এই বইগুলো খুব আনন্দ নিয়ে পড়তাম। কিন্তু গণিত অলিম্পিয়াডে এসেই প্রথম বুঝতে পারলাম, আমি যতটা ভেবেছি, গণিতের জগৎ তার চেয়ে অনেক বড়। ‘সেরাদের সেরা’ হওয়ার সুবাদে সেবার আমি প্রাথমিক গণিত ক্যাম্পে অংশ নেওয়ার সুযোগ পাই। গণিতের জগতের মতো আমার জগৎটাও বড় হতে থাকে। গণিতের মাধ্যমে কত বন্ধু বানানো যায়, মজা করা যায়, একটু একটু করে আমি বুঝতে পারি।

নবম-দশম শ্রেণির গণিত বইয়ের সমস্যাগুলো সে সময়ই সমাধান করে ফেলেছিলাম। এ ক্ষেত্রে মুহম্মদ জাফর ইকবাল স্যারের গণিত এবং আরো গণিত বইটা খুব কাজে এসেছে। ক্লাস এইটে পড়ার সময় যখন আবার গণিত ক্যাম্পে যাওয়ার সুযোগ হলো তখন বুঝলাম, আমার যাত্রা কেবল শুরু। দ্য আর্ট অ্যান্ড ক্র্যাফট অব প্রবলেম সলভিং বইটা তখন অসম্ভব ভালো লেগেছিল। খুব সাধারণ ভাষায় লেখা এত অসাধারণ বই আমি আগে হাতে পাইনি। এ ছাড়া প্রবলেম সলভিং স্ট্র্যাটেজিস, জিওম্যাট্রি রিভিজিটেড, ওয়ান হান্ড্রেড ফোর নাম্বার থিওরি প্রবলেমস; বইগুলো পড়ে অনেক কিছু শিখেছি। আনন্দ পেয়েছি।

আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডে সুযোগ পাওয়ার পর দলের অন্য সদস্যদের সঙ্গে অনুশীলন করতে করতে আরও অনেক কিছু শিখলাম। আর্ট অব প্রবলেম সলভিং-এর ওয়েবসাইটে (artofproblemsolving.com) বিভিন্ন দেশের গণিত অলিম্পিয়াডে দল নির্বাচনের জন্য যে পরীক্ষা নেওয়া হয়, সেসব পরীক্ষার প্রশ্ন পাওয়া যায়। এই সমস্যাগুলোর সমাধান করতে করতে আমার অভিজ্ঞতা আরও বাড়ল। বিশেষ করে আইএমওর পুরোনো প্রশ্ন, আমেরিকা, রাশিয়া, ইরান ও চীনের গণিত অলিম্পিয়াডের প্রশ্নগুলো আমার খুব কাজে এসেছে।

রোমানিয়ায় আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডে বাংলাদেশ দল
রোমানিয়ায় আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডে বাংলাদেশ দল

চট্টগ্রাম ম্যাথ সার্কেলের সঙ্গে ছিলাম। সেখানে ক্লাস নিতে নিতে ও ক্যাম্পের আয়োজন করতে করতে নিজের দক্ষতা যাচাই করা শিখেছি। ২০১৭ ও ২০১৮ সালে জাতীয় গণিত ক্যাম্পে আমি প্রশিক্ষক হিসেবে কাজ করি। ক্যাম্পে সমবয়সী, ছোট, বড় ভাইদের সঙ্গে অনুশীলন করার সুযোগ আমাকে সবচেয়ে সাহায্য করেছে। উন্নতিটা যে একটু একটু করে হয়েছে, সেটা আন্তর্জাতিক অলিম্পিয়াডে আমার ফল দেখলেও বোঝা যায়—২০১৬ সালে ব্রোঞ্জ, ২০১৭ সালে রুপা আর সব শেষে ২০১৮ সালে এল স্বর্ণপদক।

আমার আজকের সাফল্যের পেছনে অনেকের অবদান আছে। ধন্যবাদ জানাব মাহবুব স্যার (বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড দলের কোচ মাহবুব মজুমদার) ও মুনির স্যারকে (বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটির সাধারণ সম্পাদক মুনির হাসান), যাঁদের ছাড়া বাংলাদেশ আইএমওতে যেতে পারত না। অবশ্যই বলতে হয় প্রথম আলো,বন্ধুসভা ও গণিত অলিম্পিয়াড কমিটির কথা। মুভার্স (গণিত অলিম্পিয়াডের স্বেচ্ছাসেবক দল) ভাইদের পরিচালনা আমাদের ক্যাম্পকে সফল করে। তা ছাড়া যাঁদের দেখানো পথে হেঁটে আমি এত দূর এসেছি—মুগ্ধ ভাই, ধনঞ্জয় ভাই, সৌরভ ভাই, মাহি ভাই, আদিব ভাই, সানজিদ ভাই, তূর্য ভাই—ধন্যবাদ জানাই তাঁদের সবাইকে। আসিফ-ই-এলাহী ভাইয়ের কথাও বলতেই হয়, স্বর্ণপদক জয়ের স্বপ্ন দেখার সাহস পেয়েছি তাঁকে দেখেই। সব শেষে বলব আমার দলের সদস্যদের কথা। তারা ছিল বলেই গত কয়েকটা বছর অসাধারণ কেটেছে!