এই পদক গুরুত্বপূর্ণ কেন?

মাহবুব মজুমদার
মাহবুব মজুমদার

দেশ হিসেবে আমরা এখনো তরুণ। আমাদের শিক্ষার সঠিক অবকাঠামো নেই। দশটা আইআইটি নেই। এমআইটি বা হার্ভার্ড নেই। আমাদের সবচেয়ে মেধাবী মানুষেরা বিদেশে চলে যায় এবং আর ফিরে আসে না। আমরা বিশ্বে সেরা হতে পারি, এই আত্মবিশ্বাস আমাদের মধ্যে নেই।

কিন্তু গণিত অলিম্পিয়াডের আয়োজন আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে, সবচেয়ে কঠিন পরীক্ষাতেও আমরা ধারাবাহিকভাবে বিশ্বসেরাদের কাতারে থাকতে পারি। এ বছর আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডে যত শিক্ষার্থী অংশ নিয়েছে, তাদের মধ্যে সেরা ৩.৫ শতাংশের একজন আমাদের আহমেদ জাওয়াদ চৌধুরী। ১০৭টি দেশের ৫৯৭ জন শিক্ষার্থীর তালিকায় ওর অবস্থান ২৭তম। একেকটি দেশের সেরা ছয়জন আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডে সুযোগ পায়।

বাংলাদেশে যখন গণিত অলিম্পিয়াড শুরু হলো, আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডের প্রশ্ন দেখে দেশের অনেক বিখ্যাত গণিতবিদ বলেছিলেন, আমাদের দেশের ছেলেমেয়েরা কোনো দিন স্বর্ণপদক পাবে না। এমনকি ৬টি প্রশ্নের মধ্যে ১টিও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা সমাধান করতে পারবে কি না, সে ব্যাপারেও সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন কেউ কেউ।

জাওয়াদের স্বর্ণপদক প্রমাণ করে দিয়েছে, আমাদের ছেলেমেয়েদের ছোট করে দেখার কোনো সুযোগ নেই। এমনকি জাওয়াদ যে বিরল মেধাবীদের একজন, তা–ও নয়। গত দুই বছরেও মাত্র ১ নম্বরের ব্যবধানের জন্য আমরা স্বর্ণপদক পাইনি। ভবিষ্যতে আরও অনেক জাওয়াদ, আরও অনেক আসিফ-ই-এলাহীর প্রত্যাশা আমরা করতেই পারি।

জাওয়াদসহ গণিত অলিম্পিয়াডের অন্য শিক্ষার্থীরা দেশের সবার জন্য অনুপ্রেরণা হতে পারে। তারা প্রমাণ করেছে, বাংলাদেশও সেরা হতে পারে। নীতিনির্ধারক, শিক্ষক, ক্ষমতায় থাকা মানুষেরা আমাদের যে মানের সেবা দেন, তাতে আমরা বড় কিছু প্রত্যাশা করতেও ভুলে গেছি। জাওয়াদের কাছ থেকে অনুপ্রাণিত হয়েই আমরা সব ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ মানের সেবা দাবি করতে পারি। শিক্ষা, শিক্ষার অবকাঠামো কিংবা অন্য যেকোনো খাতেই এই দাবিতে অনড় থাকা উচিত।

স্বেচ্ছাসেবক, তরুণ এবং কিছু নিরহংকার মানুষের পরিশ্রমে বাংলাদেশে গণিত অলিম্পিয়াড পরিচালিত হয়। মানের দিক থেকে কোনো ছাড় দেওয়া হয় না বলেই দেশসেরা মানুষেরা এই আয়োজনের সঙ্গে নিঃস্বার্থভাবে কাজ করেন। উদ্যমী মানুষদের কাজে লাগাতে পারলেই জাতি হিসেবে আমরা অনেক দূর যেতে পারব।

লেখক: বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড দলের কোচ