শিশুর বিচার হবে শিশু আদালতে

নিউমার্কেট এলাকা থেকে গত বুধবার সন্দেহভাজন হিসেবে এই দুই কিশোরকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ ছবি: ইউসুফ সাদ
নিউমার্কেট এলাকা থেকে গত বুধবার সন্দেহভাজন হিসেবে এই দুই কিশোরকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ ছবি: ইউসুফ সাদ

শেরপুর জেলার ঝিনাইগাতী উপজেলার বালিয়াচণ্ডী গ্রামের আবদুল হাকিমের বয়স মাত্র আট বছর। কিন্তু এই বয়সেই সে মারপিট ও চুরির মামলার আসামি। বাবা নবীউল হকের কোলে চড়ে সে শেরপুরের আদালতে আসে। এত ছোট শিশুর আদালতে আসার খবর এলাকার মানুষের মনে ব্যাপক কৌতূহলের জন্ম দেয়। খবরটি ২০১২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে বিভিন্ন গণমাধ্যমে আসে।সদ্য পাস হওয়া শিশু আইনে বলা আছে, প্রাপ্তবয়স্ক আসামিদের সঙ্গে শিশুদের বিচার করা যাবে না।। কিন্তু এমন ঘটনা ঘটছে অহরহ।। কিশোরদেরও বিচার করা হচ্ছে সাধারণ আসামিদের সঙ্গে, জেলে সাধারণ আসামিদের সঙ্গে রাখা হচ্ছে।শিশু আইনে বলা আছে, প্রতিটি জেলা সদরে এবং ক্ষেত্রমতে মেট্রোপলিটন এলাকায় কমপক্ষে একটি শিশু আদালত থাকবে। এই আদালত শিশুদের বিভিন্ন অপরাধের বিচার করবেন। এ ছাড়া আইনে বলা হয়েছে, নয় বছরের কম বয়সী শিশুকে কোনো অবস্থাতেই গ্রেপ্তার বা আটক করা যাবে না। নয় বছরের ওপরে কোনো শিশুকে গ্রেপ্তার করার পর তাকে হাতকড়া বা কোমরে দড়ি লাগানো যাবে না।দেশে গাজীপুরের টঙ্গী, কোনাবাড়ী ও যশোরে তিনটি কিশোর আদালত রয়েছে, যা মোটেও পর্যাপ্ত নয়। টঙ্গী ও যশোরে কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রের কিশোর আদালত শুধু ছেলেদের জন্য। সারা দেশে মেয়েশিশুদের বিচারের জন্য কোনাবাড়ী কিশোরী উন্নয়ন কেন্দ্রে একটি কিশোরী আদালত রয়েছে। ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেট—এই তিন বিভাগ টঙ্গী কিশোর আদালতের অন্তর্ভুক্ত এবং খুলনা, রাজশাহী ও বরিশাল যশোর কিশোর আদালতের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। অর্থাৎ, প্রতি তিনটি বিভাগের জন্য একটি করে কিশোর আদালত রয়েছে। দূরত্বের কারণে এসব আদালতে প্রতিনিয়ত শিশু-কিশোরদের উপস্থাপন ও সাক্ষ্য গ্রহণ করাসহ নানা ধরনের জটিলতা সৃষ্টি হচ্ছে। গুরুতর অভিযোগে অভিযুক্ত শিশু-কিশোরদের বিচার এ আদালত আমলে নিতে পারেন না।

আইন বিশেষজ্ঞরা বলেন, শিশু-কিশোর অপরাধের বিচারকাজ পরিচালনার ক্ষেত্রে অপরাধের কারণ ও ধরন এবং তাদের অধিকার, মানবিক মর্যাদা, সংশোধনের সুযোগ ও অন্য কল্যাণকর দিকগুলো আইন অনুসারে অবশ্যই বিবেচনা করতে হবে। অথচ এগুলো সুনির্দিষ্টভাবে অনুসরণ করা হচ্ছে না।

আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদ এ ব্যাপারে বলেন, ‘প্রাপ্তবয়স্ক অপরাধীদের সঙ্গে শিশু অপরাধীদের না রাখা, একই অপরাধে অভিযুক্ত প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি ও শিশুদের জন্য পৃথক চার্জশিট প্রদান, পৃথক শিশু আদালতে শিশুদের বিচার করা, শিশু আদালতকে শিশুবান্ধব করে গড়ে তোলাসহ নতুন শিশু আইনে বিভিন্ন বিধান রাখা হয়েছে। এগুলো কঠোরভাবে মানতে হবে। তিনি বলেন, প্রতিটি জেলায় একটি করে কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে শিশু-কিশোরদের সংশোধনের হার বৃদ্ধি করা এখন সময়ের দাবি।