যখন সবাই তার অপেক্ষায়

ছবি: নকশা
ছবি: নকশা

ছোট্ট শিশু আসবে ঘরে, হবু মা-বাবা আর পরিবারের অন্যদের সে নিয়ে চিন্তার শেষ নেই। তবে সব চিন্তার অবসান ঘটিয়ে কখন সেই শিশুটি এসে মাতিয়ে রাখবে সবাইকে, সে সময়ের আশায়ই থাকেন তাঁরা।
শিশুর জন্মের সময় মা থাকেন হাসপাতালে। তাঁকে নিয়ে ব্যস্ত থাকতে হয় পরিবারের সবাইকে। শিশু জন্মের পর দেখভাল করতে হয় মা ও শিশু দুজনেরই। নতুন শিশুটির জন্য পরিবারের সবাই যদি কিছু জিনিস আগে থেকেই গুছিয়ে নেন, তাহলে শিশুর জন্মের পর কাজগুলো একটু সহজ হবে। মা যদি শারীরিক অসুবিধার কারণে নিজে এ কাজগুলো পুরোপুরি করতে না-ও পারেন, অন্যদেরই গুছিয়ে রাখতে হবে এ ব্যাপারগুলো।
অভিনেত্রী দীপা খন্দকার সম্প্রতি দ্বিতীয় সন্তানের মা হয়েছেন। তিনি জানালেন, প্রথম সন্তানের জন্মের সময়কার অভিজ্ঞতা এবার বেশ কাজে লেগেছে। তিনি ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা নতুন অতিথির জন্য সবকিছু এবার গুছিয়ে রাখতে পেরেছিলেন আগে থেকেই। নবজাতকের জন্য তাঁরা ঘর গুছিয়ে রেখেছিলেন, তার জন্য কেনা কাপড়গুলো রাখার জন্য আলাদা জায়গাও ঠিক করে রেখেছিলেন। জামাকাপড়, কাঁথা-বালিশের পাশাপাশি নবজাতকের জন্য প্রায় এক মাস ব্যবহার করার মতো ডায়াপারও কিনে রেখেছিলেন বলে জানালেন তিনি। আর তাঁর সন্তানের জন্য কেনা পোশাকগুলো জীবাণুনাশক তরল দিয়ে পরিষ্কার করে ধুয়ে শুকিয়েও রাখা হয়েছিল।
নবজাতকের জন্য এ ধরনের কিছু বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছেন স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতালের নবজাতক বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সুনির্মল রায়।
ছোট্ট শিশুর ছোট্ট কাপড়
শিশু জন্মের জন্য মা হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার আগেই শিশুর জন্য কাপড় কিনে রাখা ভালো। সুতি কাপড়ের তৈরি ‘জিরো’ সাইজের বেশ কয়েকটি কাপড় কিনে রাখতে পারেন নবজাতকের জন্য। ঠান্ডা আবহাওয়ায় তার জন্য কিনে রাখুন গরম কাপড়ও। তবে খেয়াল রাখতে হবে, নবজাতকের জন্য যেন নরম কাপড় কেনা হয়। জামাকাপড়ের পাশাপাশি ডায়াপার, ন্যাপি এসবও কিনে রাখা উচিত।

আগে থেকেই ঘর গোছানো
ঘরে ধুলাময়লা জমে থাকলে নবজাতকের শ্বাসতন্ত্রে সমস্যা হতে পারে। তাই শিশুর জন্মের আগেই ঘর পরিষ্কার করে রাখুন। ঘরের দেয়ালে ঝুল বা অন্য কোনো ময়লা যেন না থাকে, সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে। যে ঘরে সরাসরি বাইরের ময়লা ও ধুলা ঢোকে, সে ঘরে নবজাতকের জন্য থাকার ব্যবস্থা করবেন না।

ওর জন্য খাবার
নবজাতকের জন্য প্রথম খাবার হলো মায়ের শালদুধ। জন্মের এক ঘণ্টার মধ্যে অবশ্যই তাকে মায়ের দুধ খেতে দিতে হবে। পানি, মধু বা অন্য কোনো কিছুই তার মুখে দেওয়া যাবে না। জন্মের পর প্রথম ছয় মাস পর্যন্ত তার জন্য অন্য কোনো খাবারের ব্যবস্থা করার কোনো প্রয়োজন নেই, মায়ের দুধই তার জন্য যথেষ্ট। আর তাই খেয়াল রাখতে হবে, মা যেন পর্যাপ্ত পরিমাণে পুষ্টিকর খাবার পান।

ছোট্ট বিছানায় ছোট্ট সে জন
নবজাতকের জন্য বেবি কট কিনতে পারেন। ছোট্ট খাটে তাকে মাঝে মাঝে রাখা যেতে পারে। নবজাতকের জন্মের কিছুদিন আগেই তার জন্য ছোট বালিশ, কোলবালিশ, মশারি ও কাঁথা কিনে রাখতে পারেন। শোয়ানোর সময় তার দুই পাশে দুটি কোলবালিশ দিয়ে রাখুন। আর দিনের বেলাতেও মশারির মধ্যে শোয়াতে হবে তাকে।

নাভির যত্ন
নবজাতকের নাভিতে কোনো প্রকার পাউডার বা মলম ব্যবহার করা যাবে না। প্রতিদিন জীবাণুমুক্ত গজের সাহায্যে নাভির স্থানটি পরিষ্কার করুন। কিন্তু সেখানে কোনো কিছু না লাগানোই ভালো। তাই শিশুর জন্য বাসায় এনে রাখুন জীবাণুমুক্ত গজ।

গোসল করাতে হলে
নবজাতকের নাভি পড়ে যাওয়ার দুই-তিন দিন পর তাকে গোসল করাতে পারেন। তার আগে তাকে গোসল না করানোই ভালো।
আর নবজাতককে গোসল করানোর জন্য প্রথমে পানি ফুটিয়ে নিতে হবে। তারপর ঠান্ডা করে ঈষদুষ্ণ পানিতে গোসল করাতে হবে।

কোমল ত্বকে কোমল চুলে
শিশুর জন্মের দুই সপ্তাহ পর থেকে তার ত্বকে শিশুদের জন্য উপযোগী সাবান ব্যবহার করা যেতে পারে। এ সময় থেকে লাগানো যেতে পারে বেবি লোশনও। আবহাওয়া বেশি ঠান্ডা মনে হলে তেল ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে অনেকে শিশু জন্মের পর থেকেই তেল বা লোশন ব্যবহার করতে চান তার কোমল ত্বকে, যা একেবারেই ঠিক নয়।
জন্মের দুই সপ্তাহ পর শ্যাম্পুও করাতে পারেন শিশুকে এবং এ ক্ষেত্রে প্রয়োজন বেবি শ্যাম্পু।
ছোট্ট হলেও সবই চাই
নবজাতকের জন্য আলাদা করে বেবি ওয়েট টিস্যু কিনতে পারেন। চাইলে তুলাও কিনে রাখতে পারেন বিভিন্ন সময় ব্যবহারের জন্য।

হিমেল হাওয়ার ঝুঁকি
আজকাল অনেক বাসাতেই শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র লাগানো থাকে এবং পরিবারের সদস্যরাও এতেই অভ্যস্ত হয়ে পড়েন। তবে মনে রাখতে হবে, আপনার নবজাতকের ঘরে এ ধরনের যন্ত্রের ব্যবহার তার জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। হিমেল হাওয়ার কারণে তার শরীরের তাপমাত্রা কমে যেতে পারে।
গ্রন্থনা: রাফিয়া আলম