স্কটল্যান্ডের গণভোট যত এগিয়ে আসছে তত বদলাচ্ছে দৃশ্যপট

‘না’ ভোটের পক্ষে প্রচারাভিযান
‘না’ ভোটের পক্ষে প্রচারাভিযান

স্কটল্যান্ডের স্বাধীনতার প্রশ্নে গণভোটের তারিখ যত এগিয়ে আসছে, উত্তেজনা তত বাড়ছে। প্রতিমুহূর্তে বদলে যাচ্ছে দৃশ্যপট। একটু আগে স্কটল্যান্ডের রাজনৈতিক দৃশ্যপট যেখানে হ্যাঁর (ইয়েস) পক্ষে প্রতিভাত হচ্ছে, কিছু পরেই তা না প্রচারাভিযানের প্রদীপের আলোয় জ্বলে উঠে সবকিছু তছনছ করে দিচ্ছে।
১৩ সেপ্টেম্বর রাত পর্যন্ত একটি জনমত জরিপে দেখা গেছে ৮ পয়েন্টে এগিয়ে আছে ‘না’ প্রচারাভিযান। অর্থাত্ যুক্তরাজ্য ইউনিয়নের মধ্যে থাকার পক্ষে জনমত এগিয়ে। এই জনমত জরিপ করেছে সারভেশন। তাদের নতুন জরিপে দেখা গেছে, যুক্তরাজ্যের ভেতরে থাকার জন্য স্বাধীনতাকামী ‘হ্যাঁ’ প্রচারভিযানের চেয়ে ‘না ’ ৮ পয়েন্ট এগিয়ে আছে। অর্থাত্ স্বাধীনতার পক্ষে জনগণ হ্যাঁ বলেছেন ৪২ শতাংশ। যুক্তরাজ্যের মধ্যে থাকার পক্ষে না প্রচারাভিযান। না বলেছেন ৪৯ শতাংশ।
একই দিন রাতে স্কটল্যান্ডে এক প্রচারাভিযান সভায় বক্তৃতা দেওয়ার সময় ব্রিটেনের সাবেক প্রধানমন্ত্রী গর্ডন ব্রাউন বলেছেন, নীরব ভোটারদের বেশির ভাগ অংশ না ভোটের পক্ষে। কারণ, হলিরুড সরকারের স্কটিশ পার্লামেন্টকে আরও অধিক নিরাপদ ক্ষমতা দেওয়ার অঙ্গিকারে দেশের জনগণ ইউনিয়নের মধ্যে থাকাকেই নিরাপদ ও যুক্তিসঙ্গত মনে করছেন। স্কটসম্যান পত্রিকার উদ্ধৃতি দিয়ে স্থানীয় স্কটিশ লেবার দলের নেতারা এ সংবাদ জানিয়েছেন।
এ দিকে স্কটল্যান্ড স্বাধীন হয়ে গেলে যুক্তরাজ্যের (ইউনাইটেড কিংডম) তিনশ বছরের ইউনিয়নের ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠানসমূহ—এনএইচএস, বিবিসি, স্পোর্টস ও সেনাবাহিনী ইত্যাদির কি হবে এবং কেমন করে এর সমন্বয় সাধন হবে তা নিয়ে শুরু হয়েছে বিতর্ক। ওয়েস্ট মিনিস্টারসহ সর্বত্র এ নিয়ে বিতর্ক তুঙ্গে। তাছাড়া এমন প্রশ্নও উত্থাপিত হচ্ছে স্বাধীন স্কটল্যান্ডের ফলে ২০১৫ সালের নির্বাচন ও ব্রিটিশ পাসপোর্ট ব্যবহারে ভিসা প্রক্রিয়া নিয়ে।
তরুণ ভোটারদের অনেকেই কিন্তু স্কটল্যান্ডের স্বাধীনতার বিপক্ষে। তারা ইউনিয়নের মধ্যে নিজেদের ভবিষ্যত্ নিরাপদ মনে করছেন। (তরুণ ভোটারদের মতামত দেখতে এই ভিডিও লিংক ক্লিক করুনঃ www.youtube.com/watch?v=XFLWpJNpfhI)

‘হ্যাঁ’ ভোটের পক্ষে প্রচারাভিযানে বক্তব্য রাখছেন অ্যালেক্স সামন্ড
‘হ্যাঁ’ ভোটের পক্ষে প্রচারাভিযানে বক্তব্য রাখছেন অ্যালেক্স সামন্ড

অন্যদিকে এক স্কটিশ ব্যবসায়ীর উদ্ধৃতি দিয়ে স্কাই রিপোর্ট করেছে, স্কটল্যান্ড স্বাধীন হয়ে গেলে অর্থনীতি অনিশ্চয়তার যে বক্তব্য দেওয়া হচ্ছে তা সঠিক নয়। বরং তাঁর মতে এর ফলে নতুন নতুন ব্যবসার দরজা খুলে যাবে। স্কটিশ ওই ব্যবসায়ী বলছেন, ইউরোপের মধ্যে স্কটল্যান্ড হলো ব্যবসা-অর্থনীতির তীর্থ ক্ষেত্র।
পাশাপাশি বুকিস ঘরগুলোতে স্কটল্যান্ডের গণভোট নিয়ে চাঞ্চল্যকর বাজিমাত চলছে প্রতিনিয়ত। কিন্তু অন্যান্য সকল জনমত জরিপে আজ (১৪ সেপ্টেম্বর) ভিন্ন চিত্র ফুটে উঠেছে। সানডে টাইমস-এর প্যানিলবেইস-এর জরিপে না প্রচারাভিযান ৫০.০৬শতাংশ, হ্যাঁ প্রচারাভিযান ৪৯.৪ শতাংশ। আর অবজার্ভারের জরিপ অনুযায়ী না ৫৩ শতাংশ, হ্যাঁ ৪৭ শতাংশ ।
এই যখন অবস্থা ঠিক তখনি ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন সস্ত্রীক গতকাল এক বিয়ের অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার ঘটনা স্থানীয় মিডিয়ায় ব্যাপক কৌতূহলের জন্ম দিয়েছে। মিডিয়া বলছে, ব্রিটেনের ভাঙ্গন রোধে তাঁর (ক্যামেরন) যেখানে প্রচারাভিযানে থাকার কথা, সেখানে তিনি হালকা মেজাজে বিয়ের দাওয়াতে গিয়েছেন।
ওদিকে ব্রিটেনের রানী স্কটল্যান্ড সফরকালে শেষ পর্যন্ত নিরবতা ভঙ্গ করে মন্তব্য করেছেন। তিনি ভোটাররা ভেবে চিন্তে ভবিষ্যতের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন বলে আশা প্রকাশ করেছেন। বালমোরালের কাছে ক্যাথি কার্ক চার্চে সার্ভিসে যোগদানের সময় বাহিরে এমন মন্তব্য করেন তিনি।
স্কটল্যান্ডের ফার্স্ট মিনিস্টার ও এসএনপি নেতা অ্যালেক্স সামন্ড আজ স্কটিশ স্বাধীন প্রচারাভিযান (ইনডিপেনডেন্ট ক্যাম্পেইন) চলাকালে বক্তৃতায় বলেছেন, স্কটল্যান্ডের সম্ভাব্য স্বাধীনতা নিয়ে ফ্রান্স, ইতালি ও স্পেনসহ অন্যান্য ইউরোপীয় দেশগুলোর সঙ্গে তাদের আলোচনা চলছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নে স্বাধীন স্কটল্যান্ডের যোগদান নিয়েও আলোচনা অব্যাহত আছে বলে তিনি জানিয়েছেন। স্কটল্যান্ড থেকে স্কটম্যানের উদ্ধৃতি দিয়ে এ সংবাদ ইংল্যান্ডের পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে।
সামন্ড আরও বলেছেন, ইউরোপের ২৮টি দেশের সঙ্গে স্বাধীন স্কটল্যান্ডের সদস্যপদ নিয়ে আলোচনা চলছে। কোনো কারণে গণভোটে হেরে গেলে স্কটল্যান্ডের সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্তির ব্যাপারে আবার আবেদন করা হবে। আমরা এখন এই আলোচনার কেন্দ্রে অবস্থান করছি। আমাদেরকে ইইউর সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করতে হচ্ছে প্রয়োজনীয় চুক্তি সম্পাদনের জন্য।
সাংবাদিকেরা এ সময় অ্যালেক্স সামন্ডকে প্রশ্ন করেন, ইতালি, ফ্রান্স ও স্পেনসহ অন্যান্যদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন কি না। জবাবে তিনি বলেন, আলোচনা চলছে এবং সকল সেপারিস্ট গ্রুপের সঙ্গে একইভাবে আলোচনা চলছে।
তিনি আরও বলেন, টিম স্কটল্যান্ড আলেস্টার ডার্লিং এবং গর্ডন ব্রাউন ভোটের পর আলোচনায় অন্তর্ভুক্ত হবেন ব্রিটেনের সঙ্গে অন্যান্য সকল বিষয়ে আলোচনা অব্যাহত রাখার জন্য। স্বাধীনতার প্রশ্নে গণভোট একজন মানুষের জীবনে একবারই হয়ে থাকে এবং এবারের গণভোটে হেরে গেলে তিনি পুনরায় আর গণভোটের দাবি জানাবেন না।
এদিকে আজ সোমবার ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন, এড মিলিব্যান্ড ও নিক ক্লেগের এক সঙ্গে স্কটল্যান্ড সফরের কথা রয়েছে। তাঁরা স্কটল্যান্ডের একীভূত ইউনিয়নের মধ্যে থাকার জন্য ফিরতি প্রচারাভিযানে অংশ নেবেন।
সৈয়দ শাহ সেলিম আহমেদ
লন্ডন, যুক্তরাজ্য
<[email protected]>