দূরের ঈদ, কাছের ঈদ-২

নিগার সুলতানা, কানাডা
নিগার সুলতানা, কানাডা

মনে পড়ে দেশের কথা
কিছুদিন হলো বাংলাদেশ ছেড়ে কানাডায় পড়াশোনা করতে এসেছি। কানাডার হাড়কাঁপানো ঠান্ডা এখনও সয়ে উঠতে পারিনি। দেশের ঈদ আর প্রবাসের ঈদ তো আলাদা হবে; তা দিন যতই ঘনিয়ে আসছে, ততই টের পাচ্ছি। বাংলাদেশে ১৫ রোজার পরেই যেন ঈদের দৌড়ঝাঁপ লেগে যেত, ঘরে-বাইরে সবখানে। ঢাকার নিউমার্কেট ও গাউছিয়ায় কাপড় কেনার জন্য দৌড়াদৌড়ি। আগের দিন হাতে মেহেদি নিয়ে বসে থাকা। বাদাম-মসলা-মাংস রেডি করে রাখা। দরজায় ঝালর লাগানো ছিল দেশের ঈদের আনন্দ। কিন্তু প্রবাসে সেই পরিচিত বাংলাদেশকে পাচ্ছি না। আসছে ঈদ, কিন্তু তার আমেজ কই? সবার মধ্যে শুধুই কর্মব্যস্ততা! দেশ ছেড়ে, পরিবার ছেড়ে কয়েক হাজার মাইল দূরে বসে আমার প্রথম ঈদ। পরিচিত বাঙালিরা সবাই খালি দেশের ঈদের গল্প বলে। আগামীবারও আমি প্রবাসে বসে দেশের ঈদ নিয়ে হা-হুতাশ করব বলেই মনে হচ্ছে। দেশের সবার জন্য ঈদ মোবারক!

নিগার সুলাতানা
ইউনিভার্সিটি অব ওয়াটার লু, কানা��

সরদার ইয়াফী মুনতাসীর
সরদার ইয়াফী মুনতাসীর

নানা রঙের আনন্দ
মনে পড়ে, ছোটবেলায় বাবার ধমকে ঘুম ভেঙে তাড়াহুড়া করে শেষ সময়ে ঈদগাহে দৌড়ে ঢুকতাম। সেটা এখন কল্পনা। জীবনযুদ্ধে শামিল হতে কয়েক হাজার মাইল পাড়ি দিয়ে চলে এলাম ভ্যাঙ্কুভারে, উচ্চতর গবেষণা করতে। দেশের বাইরে প্রথম ঈদ। প্রবাসে আসার পর প্রথম মাসেই ঈদ, স্থানীয় কারও সঙ্গে তখনো তেমন একটা জানা-পরিচয়ও হয়ে ওঠেনি। ভাগ্য তা-ও ভালো ছিল, দেশেরই ক্লাসমেট ছিল তিনজন। ভাবলাম, সকাল সকাল দেব দৌড়, দুপুরে উদরপূতির্ করতে। কিন্তু বিধিবাম, ঘুম ভাঙল নামাজের একদম শেষভাগে। দৌড়াতে গিয়ে মনে পড়ল, মসজিদ তো আর হাতের কাছে নেই, সে তো ১১ কিলোমিটার দূরে। অতঃপর দিলাম দৌড় বন্ধুর বাড়িতে। রান্নায় ও খুব পটু। পোলাও, গরুর মাংস ভুনা, পরোটা দেখে মনটাই ভালো হয়ে গেল। যদিও মায়ের হাতের রান্নার সঙ্গে কারও তুলনা কখনোই হয় না, তবু ওই খাবার তখন আমার কাছে অমৃত। দেশের বন্ধুরা হয়তো নেই, সেই আমেজও হয়তো নেই, কিন্তু সেই অতিথিপরায়ণতা একেবারে মুছে যায়নি। দিনগুলো সব কোথায় হারিয়ে গেল কে জানে। হয়তো আর ওইভাবে ফিরে আসবে না, কিন্তু স্মৃতির চিলেকোঠায় ঠিকই রয়ে যাবে চিরদিন।

সরদার ইয়াফী মুনতাসীর

মাস্টার্স অন এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং, দি ইউনিভার্সিটি অব ব্রিটিশ কলাম্বিয়া, কানাডা