নতুন সংখ্যার অপেক্ষায়

প্রথম আলোর উপসাগরীয় সংস্করণের প্রথম সংখ্যা। লেখকের তোলা ছবি
প্রথম আলোর উপসাগরীয় সংস্করণের প্রথম সংখ্যা। লেখকের তোলা ছবি

দেশের সীমানা পেরিয়ে প্রথম আলো এখন কাতারে। এটা আমার কাছে স্বপ্নের মতো। প্রথম আলোর সাপ্তাহিক উপসাগরীয় সংস্করণটি ১৫ অক্টোবর বাংলাদেশের গণমাধ্যম ইতিহাসে সৃষ্টি করল নতুন এক অধ্যায়ের। আমি সেদিনই পত্রিকাটি কিনে ইতিহাসের সাক্ষী হতে পেরে এবং প্রবাসী হয়েও প্রবাসে নিজের দেশের পত্রিকাটি হাতে পেয়ে সম্মানিত বোধ করছি ৷
আমি অবশ্য বেশ কিছুদিন আগেই প্রথম আলো অনলাইনে এই সংবাদটি দেখি। তারপর অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় ছিলাম দিনটির জন্য। এদিকে ১৩ অক্টোবর ‘রস আলো’তে আমার লেখা কৌতুক প্রকাশিত হয়েছিল। প্রথম আলোতে যতবার আমার লেখা প্রকাশিত হয়েছে, ততবার আম্মুর অনুভূতি ছিল খুবই অদ্ভুত রকমের। ফোনে মা বললেন, ‘তোর লেখা পড়ে পত্রিকাটি বুকের মধ্যে জড়িয়ে ধরি। মনে হয়ে তোকেই ধরছি। কয়েকবার পড়ি তোর লেখাটা।’ আমি খুবই অবাক হই মায়ের কথা শুনে৷
যা হোক, ১৫ অক্টোবর সকালে আমাদের বাসা থেকে গাড়িতে প্রায় ১৫ কি ১৬ কিমি. দূরে একটা বড় শপিং সেন্টারে গেলাম প্রথম আলোর কাতার সংস্করণ কিনব বলে। হয়তো আমার বাসার পাশেই পাওয়া যেত। তার পরও ঝুঁকি নেইনি। নিশ্চিতভাবে পাওয়ার আশায় ছুটে গেলাম সেখানে।
খুঁজে পেতে একটুও কষ্ট হয়নি। শপিং সেন্টারে ঢুকেই দূর থেকে চোখে পড়ল প্রথম আলো। মনের অজান্তেই আমার চোখেমুখে হাসির ঝিলিক অনুভব করলাম। আর খুব খুশি খুশি লাগছিল।
একা ছিলাম। ট্রলিতে প্রথম আলো রেখে প্রয়োজনীয় আরও কিছু নেওয়ার জন্য সামনে আসতেই মনে হচ্ছিল কেউ যদি নিয়ে নেয় পত্রিকাটি। যদিও আমি নিশ্চিত ছিলাম, কেউ নেবে না। তবুও মনের মধ্যে বারবার মনে হচ্ছিল একই কথা। তাই বেশির ভাগ সময় ট্রলিতে না রেখে হাতেই রাখলাম।
শেষে কাউন্টারে এলাম। ক্রেডিট কার্ডটি বের করব, এমন সময় ইন্দোনেশিয়ান সেলস লেডি কাউন্টারে পত্রিকাটি হাতে নিল। খুবই কষ্ট করে ইংরেজিতে যেখানে Prothom Alo Weekly Gulf Edition লেখা, সেটি পড়ার চেষ্টা করল। কিন্তু বেচারি প্রথম আলো উচ্চারণ করতে পারল না।
আমি তাঁকে সাহায্য করলাম। প্রথমবার উচ্চারণ না করতে পারলেও দ্বিতীয়বার চমৎকারভাবে উচ্চারণ করল প্রথম আলো। তারপর ইন্দোনেশিয়ান সেলস লেডি আমার দিকে তাকিয়ে ফিক করে হাসি দিল।
সেলস লেডির নাম লাতিফা। আমি তাকে জানালাম, এটা আমার বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় ও পঠিত পত্রিকা। আজই প্রথম কাতারে প্রকাশিত হলো। এবার সে হাসি দিয়ে বলল, ‘ভেরি গুড, থ্রি চিয়ার্স।’ আমি রওনা হলাম বাসার উদ্দেশে। এই সময় মনে হচ্ছিল বাংলাদেশ থেকে কেউ বেড়াতে এসেছে। তাকে অতি যত্নের সঙ্গে বাসায় নিয়ে যাচ্ছি।
প্রথম আলোর সাপ্তাহিক উপসাগরীয় সংস্করণ পড়ে খুবই ভালো লেগেছে। এখন আমি নতুন আরেকটি সংখ্যার অপেক্ষায়।
নুসরাত আহমেদ
দোহা, কাতার।