নারী কাজ করেন বেশি, বিশ্রাম পান কম

নারী পুরুষের তুলনায় কাজ করেন বেশি। কিন্তু বিশ্রাম ও বিনোদনের সময় পান কম। দেশের উত্তরাঞ্চলীয় দুটি জেলার নারী-পুরুষের ওপর করা এক গবেষণায় এ তথ্য বেরিয়ে এসেছে। 

আজ মঙ্গলবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে অ্যাকশন এইড বাংলাদেশ ও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর জেন্ডার অ্যান্ড সোশ্যাল ট্রান্সফরমেশন (সিজিএসটি) আয়োজিত সেমিনারে গবেষণার তথ্য উপস্থাপন করা হয়।

গবেষক সিমিন আহমেদ বলেন, লালমনিরহাট ও গাইবান্ধা দুটি জেলাতেই নারীর প্রতি পুরুষের মনোভাবের ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে। তবে গাইবান্ধার পুরুষেরা কিছুটা পিছিয়ে আছেন। তাঁরা নারীর কাজের চেয়ে পুরুষের কাজকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন। পাশাপাশি নারীরা যদি তাঁদের কোনোভাবে অসন্তুষ্ট করেন, তবে তাঁদের শারীরিকভাবে নির্যাতনকে সমর্থন করেন। 
গবেষণার ফলাফলে বলা হয়েছে, নারীর সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য সেবামূলক কাজের স্বীকৃতি, কাজের পরিমাণ কমানো ও পুনর্বণ্টন দরকার। 
সিমিন আহমেদ জানান, গবেষণার আওতায় আসা জেলা দুটিতে নারীরা গড়ে প্রতিদিন ছয় ঘণ্টা সেবামূলক কাজে এবং পাঁচ ঘণ্টা উৎপাদনমূলক কাজে ব্যয় করেন। সে জায়গায় পুরুষ গড়ে এক ঘণ্টা সেবামূলক কাজে ও সাত ঘণ্টা উৎপাদনমূলক কাজে ব্যয় করেন।

গবেষণাটিতে সেবামূলক কাজ বলতে বোঝানো হয়েছে রান্নাবান্না, গৃহস্থালির কাজ ও পরিবারের সদস্যদের যত্ন নেওয়া। উৎপাদনমূলক কাজের আওতায় ছিল গরু, ছাগল, হাঁস-মুরগি পালাসহ আয় হয় এমন কাজ। অনুৎপাদনশীল কাজের মধ্যে পড়েছে অবসর, নিজের যত্ন নেওয়া এবং সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কাজ।

নভেম্বর ২০১৩ থেকে অক্টোবর ২০১৪ পর্যন্ত লালমনিরহাটের সদর উপজেলার দুটি ইউনিয়নের ১২০ জন নারী-পুরুষ এবং গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার চারটি ইউনিয়নের ১৮৫ জনের ওপর গবেষণাটি করা হয়। তবে সিমিন আহমেদ বলেছেন, এই গবেষণাটি গোটা উত্তরাঞ্চল বা পুরো বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করে না। এলাকাভেদে বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে অনেক বৈপরীত্য ও বৈচিত্র্য আছে।

অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের গবেষক প্রতিমা পাল মজুমদার বলেন, সংসারে সেবামূলক কাজের স্বীকৃতি মিললে তা মানুষের জীবনমানের উন্নতি ঘটায় ব্যাপকভাবে। নারীদের ওপর সেবামূলক কাজের চাপ কমাতে জীবন যাপনপদ্ধতি সহজ করা প্রয়োজন বলে তিনি মন্তব্য করেন। 
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর গবেষক শামসুল আলম বলেন, অস্ট্রেলিয়ায় সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখা গেছে, নারীরা বিনা পয়সায় যে সেবামূলক কাজ করেন, বৈশ্বিক আয়ে তার অবদান ৫০ শতাংশেরও বেশি।

ইউএনউইমেনের এ-দেশীয় পরিচালক ক্রিস্টিন হান্টার নারীকে উৎপাদনশীল কাজে যুক্ত করতে নারীবান্ধব কাজের পরিবেশের ওপর গুরুত্ব দেন।

মহিলা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহীন আহমেদ চৌধুরী বলেছেন, নারীকে ক্ষমতায়িত করতে ছেলেদের এগিয়ে আসতে হবে। নারীদের মধ্যেও ক্ষমতায়িত হওয়ার ইচ্ছা থাকতে হবে।

সেবামূলক কাজে পুরুষদের অংশগ্রহণ ছাড়া নারীর উৎপাদনমূলক কাজে যুক্ত হওয়া কঠিন বলে মন্তব্য করেন বাংলাদেশ উইমেন এন্টারপ্রেনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি নাসরিন আউয়াল।

অ্যাকশনএইডের এ-দেশীয় পরিচালক ফারাহ কবীর বলেন, এক দিনের জন্য নারীরা কাজ বন্ধ রাখলে জীবনব্যবস্থায় ধস নামবে। তিনি মা-বাবা ও আদালতের অনুমতিতে ১৬ বছর বয়সে বিয়ে দেওয়ার জন্য সরকারের যে তোড়জোড়, তার কঠোর সমালোচনা করেন।

সেমিনারের শেষে ঘুড়ি ওড়ানো হয়। এর ব্যাখ্যায় ফারাহ কবীর বলেন, ঘুড়ি সব সময় ছেলেরাই ওড়ায়। নারীরা আকাশে উড়তে চায় বলেই ঘুড়ি উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে।