রুখসানাকে রুখবে কে!

বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত রুখসানা বেগম ব্রিটেনের কিক বক্সিং ও মুয়ে থাই চ্যাম্পিয়ন। আজ লন্ডনে তিনি নামবেন ‘ওয়ার্ল্ড টাইটেল ফাইট’ জয়ের লড়াইয়ে।

রুখসানা
রুখসানা

২০০২ সালের কথা। পূর্ব লন্ডনের ব্রিটিশ বাংলাদেশি এক কিশোরী শখের বসে নাম লেখাল স্কুলের কিক বক্সিং কোর্সে। বাঙালি মেয়ের কি এমনতর কিল-ঘুষি আর লাথালাথির খেলায় নিজেকে জড়ানো সাজে? শুরুতে মেনে নিতে পারেননি মা-বাবাও। আর সেই কিশোরী রুখসানাই এখন ব্রিটেন তো বটেই, সারা বিশ্বের সফলতম ক্রীড়াবিদদের একজন। বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এই তরুণীই গেল চার বছর নিজের দখলে রেখেছেন ব্রিটিশ কিক বক্সিং ও মুয়ে থাই চ্যাম্পিয়নের সম্মান। আর আজ তিনি নামছেন বিশ্বসেরার মুকুট দখলের লড়াইয়ে।

রুখসানা আজ নামছেন কঠিন লড়াইয়ে। ছবি: রুখসানা বেগমের ওয়েবসাইট থেকে
রুখসানা আজ নামছেন কঠিন লড়াইয়ে। ছবি: রুখসানা বেগমের ওয়েবসাইট থেকে

লন্ডনের আর্লস কোর্টে ৫০ কেজি ওজন শ্রেণিতে ইউরোপিয়ান মুয়ে থাই চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্সের লুডিভিন লানিয়েরের মুখোমুখি হবেন রুখসানা। তাঁকে ঘায়েল করতে পারলেই ওয়ার্ল্ড টাইটেল ফাইটে বিজয়ীর মুকুট পরবেন রুখসানা।
মুকুটের লড়াই
চ্যাম্পিয়নশিপের এই উত্তেজনার মধ্যেই কথা হলো রুখসানার সঙ্গে। ওয়ার্ল্ড টাইটেল ফাইটের রিংয়ে ওঠার অনুভূতি কেমন? আত্মবিশ্বাস নিয়ে রুখসানা বললেন, ‘কঠোর পরিশ্রম করে চলেছি, রোমাঞ্চকর একটা লড়াইয়ের প্রতীক্ষায় আছি। জেতার জন্যই তো লড়ব।’
পাঠক বলে নিই; মুয়ে থাই ও কিক বক্সিং উচ্চমাত্রার শারীরিক কসরতনির্ভর একটি খেলা। আর এমনতর খেলায় ব্রিটেনের চ্যাম্পিয়ন কি না আমাদের বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত রুখসানা। এই বিস্ময়কর সাফল্য লাভের পথটা অবশ্য মোটেও কণ্টকমুক্ত ছিল না। রুখসানা বলছিলেন, ‘আমার মা-বাবা সিলেটের মানুষ। পূর্ব লন্ডনে আর পাঁচ-সাতজন বাঙালি ছেলেমেয়ের মতোই আমার বেড়ে ওঠা। শখের খেলা ও আত্মরক্ষা দুটিই হবে—এই ভাবনা থেকেই কিক বক্সিংয়ের চিন্তা মাথায় আসে।’
লন্ডনের বেথনাল গ্রিন এলাকার একটি ব্যায়ামাগারে সাবেক বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন, খ্যাতনামা প্রশিক্ষক বিল জাডের কাছে থাইল্যান্ডের ঐতিহ্যবাহী মুয়ে থাই শেখার সুযোগ পান রুখসানা।
রুখসানার প্রথম সাফল্য আসে ২০০৯ সালে। ব্রিটেন জাতীয় দলের হয়ে ব্যাংককে অনুষ্ঠিত ওয়ার্ল্ড অ্যামেচার কিক বক্সিং চ্যাম্পিয়নশিপে তৃতীয় স্থান অর্জন করে আলোচনায় আসেন তিনি। সেই থেকে স্বপ্নের পথচলা শুরু; বাড়তে থাকে তাঁর ওপর দেশ ও দশের প্রত্যাশা। ২০১১ সালে রুখসানা লাটভিয়ায় আয়োজিত ইউরোপিয়ান ক্লাব কাপে সোনা জেতেন। সম্প্রতি ব্রিটেনের উইমেনস হেলথ সাময়িকীর প্রতিবেদনে যুক্তরাজ্যের সেরা ফিটেস্ট নারীর মধ্যে উঠে এসেছে রুখসানা বেগমের কথা।

.
.

এবারের বড় চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় মেয়ে আর একা নন। মেয়ের ওপর পূর্ণ আস্থা মা মিনারা বেগম আর বাবা আওলাদ আলীর। মা মিনারা বেগম বললেন, ‘আগে যারা নানা কথা শুনিয়ে টিপ্পনী কাটত, তারাই এখন বলে আমার মেয়ে নাকি বাঙালির মুখ উজ্জ্বল করেছে।’
ব্রিটেনের বাংলাদেশিদের জন্য এক বড় অনুপ্রেরণা রুখসানা। যাঁর জীবনের মূলমন্ত্র, ‘আপনি কতবার ছিটকে নিচে পড়ে গেলেন সেটা বড় কথা নয়। আপনি কতবার উঠে দাঁড়ালেন, সেটাই আসল।’