চাপ ভুলে খেলে যাও : ক্রিস গেইল

সাম্প্রতিক সময়ে ক্রিকেট-দুনিয়ার অন্যতম আলোচিত ক্রিকেটার ক্রিস গেইল। পুরো নাম ক্রিস্টোফার হেনরি গেইল। জন্ম ১৯৭৯ সালে, জ্যামাইকাতে। ঝোড়ো ব্যাটিংয়ের জন্য তিনি সবার প্রিয। চলতি ক্রিকেট বিশ্বকাপে জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্বকাপের ইতিহাসে প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে ডাবল সেঞ্চুরি (২১৫ রান) করেন তিনি।

ক্রিস গেইল
ক্রিস গেইল

অনেক বছর আগে আমি ক্রিকেট মাঠে প্রথম নেমেছিলাম। সেই আমি এখনো মাঝেমধ্যে পেছন ফিরে তাকাই। প্রথম টেস্ট ম্যাচ ম্যাচ খেলার সময় আমি ভীষণ চিন্তিত ছিলাম। মাঠে নামার সময় একটু আবেগকাতরও ছিলাম। সে সময়কার সব গল্প সেকেন্ড-মিনিট ধরে এখনো মনে পড়ে। প্রথম টেস্টে আমি বিখ্যাত বোলার অ্যামব্রোস ও ওয়ালশের সঙ্গে এক ঘরে থেকেছিলাম। তাঁদের বোলিংয়ের সময় স্লিপে দাঁড়িয়ে বেশ কটা ক্যাচও ধরেছিলাম। সুন্দর এক স্মৃতিময় ম্যাচ ছিল সেটি। প্রথম ম্যাচে ব্যাটিংয়ে নামার সময় আমার অন্য রকম ভালো লাগছিল। ক্রিজে সেট হয়ে বল খেলে যাচ্ছিলাম। কিন্তু আমি রানআউট হয়ে ড্রেসিংরুমে ফিরি। রুমে ফিরে গিয়ে শিশুর মতো কেঁদেছিলাম। কিন্তু আমি জানতাম, একদিন বড় হবই। সেই আমার জন্য শততম টেস্ট খেলা ছিল ভীষণ আবেগের এক স্মৃতি।
রাস্তায় ক্রিকেট খেলে বড় হওয়া এক ক্রিকেটারের জন্য এ এক বিশাল পাওয়া। রাস্তা থেকে চলে গিয়েছিলাম লুকাস ক্রিকেট ক্লাবে, সেখান থেকে আমি গেইল শততম টেস্ট খেলে ফেলেছি। এ আমার অগ্রযাত্রার অবিশ্বাস্য এক গল্প। জীবনের অনেকটা সময় আমি ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্রিকেটে ব্যয় করেছি। তার পরও মানুষ আমার কাজের কথা ভুলে যায়।
আমার ছোটবেলা কেটেছে জ্যামাইকার রোলিংটন শহরে। সাবিনা পার্কের ছায়ায় বড় হতে হতে সব সময় দুটো স্বপ্ন দেখতাম। জ্যামাইকার হয়ে ক্রিকেট খেলা ছিল আমার প্রথম স্বপ্ন। আর দ্বিতীয় স্বপ্ন ছিল একটু বড় কিন্তু কঠিন। একদিন আমি ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে খেলার স্বপ্ন দেখতাম। আমি সৌভাগ্যবান বলেই আমার দুটো স্বপ্নই পূরণ হয়েছে।
আমি কেন যে ছক্কা হাঁকাই কিংবা বড় বড় শট খেলি, তা নিজেও জানি না! কোনো কিছু বেশি চিন্তা না করেই বলে ফেলি বা করে ফেলি। নিজেকে খুশি রাখতে হলে আমাকে মন ও শরীরকে একসঙ্গে পরিচালনা করা শিখতে হবে। দ্বিধা রেখে কোনো কাজ করা যাবে না। বাস্তব জীবনে কিংবা মাঠে-সবখানেই আমাদের চেষ্টা করতে হবে, কিন্তু সব সময় মাথা ঠান্ডা রাখতে হবে আমাদের।
আমি সব সময় নিজের সঙ্গে নিজে কথা বলি। ক্রিকেট মাঠে নিজেকে ভালো করার জন্য পরামর্শ দিই। নিজেকে বোঝাই, সাফল্যের জন্য চাপ না নিয়ে চুপ থাকো। আমি বিশ্বাস করি, সময় নিয়ে নিজের সর্বোচ্চ চেষ্টা করলেই যেকোনো কঠিন ম্যাচ জেতা যায়। আমার ওপর ক্রিকেট মাঠের চাপ তো থাকেই, সঙ্গে থাকে দর্শকদের প্রত্যাশা। দর্শকেরা ক্রিস গেইলের কাছে শুধু রান বা ছক্কা প্রত্যাশা করেন না, তার কাছে বল আর ফিল্ডিংয়েও দর্শকেরা বিনোদন চান। আমি সৌভাগ্যবান, আনন্দ নিয়ে ক্রিকেট খেলি। দর্শকদের আনন্দ বুঝতে পারি। আমি পয়সা উসুল করে দিই তাঁদের। কখনো কখনো প্রথম বলেই বল বাউন্ডারির বাইরে পাঠিয়ে দিই। তখন আমার বোলারের কথা ভাবতে ইচ্ছা করে। কিন্তু আমাদের খেলা দেখার জন্য সাধারণ মানুষ মাঠে আসে। আমাদের সেরা খেলাটাই তাদের দেখানো উচিত। আর সে কারণেই বল মাঠের বাইরে পাঠাতেই আমার যত আনন্দ।
আমি ক্রিকেট মাঠে অনেক প্রতিকূল পরিস্থিতি দেখি। শুধু মাঠেই নয়, মাঠের বাইরেও অনেক প্রতিকূলতা দেখতে হয় আমাকে। কিন্তু আমার শক্তি কী, তা আমি জানি। মানসিকভাবে নিজেকে শক্ত রাখি। সেই শক্তিতেই সামনে এগিয়ে যাই। আগে মানসিক শক্তির জোর বাড়াতে হবে, তাহলেই কব্জিতে শক্তি আসে।
বিশ্বকাপে প্রথম ডাবল সেঞ্চুরির পর আমি যে পরিমাণ খুদেবার্তা পেয়েছি, তা সারা জীবন ক্রিকেট খেলেও পাইনি। আমার মনে হয়, আমার শত্রুও আমার ভালো খেলা প্রত্যাশা করে। বিশ্বজুড়েই আমি মানুষকে বিনোদন দিতে চাই। সাধারণ মানুষ আমার কাছে সব সময় যেন বিনোদনই প্রত্যাশা করে। আমার মনে হয়, সবাই আমার ভালো চায় আর সে জন্যই রান করি। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ডাবল সেঞ্চুরি ছিল আমার জ্বলে ওঠার প্রমাণ। এই রান আমার জন্য নতুন এক শুরু। আমি এই শীর্ষ থেকে যতটুকু সম্ভব আরও ওপরে উঠতে চাই।
ইএসপিএন ক্রিকইনফোতে প্রকাশিত সাক্ষাৎকার অবলম্বনে লিখেছেন জাহিদ হোসাইন খান