কৃষি উদ্ভাবনে নিবেদিত

সেলিনা পারভীন। ছবি: অধুনা
সেলিনা পারভীন। ছবি: অধুনা

‘সঠিক লোককে যদি সঠিক জায়গা দেওয়া যায়, তাহলে অবশ্যই সে ভালো কিছু করবে। কিন্তু আমাদের দেশে সেটা খুব কমই হয়।’ বলছিলেন, গাজীপুরের বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিএআরআই) প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা সেলিনা পারভিন বানু। গমের নতুন জাত উদ্ভাবন, সুস্থ বীজ উৎপাদন নিয়ে গবেষণা করছেন দীর্ঘদিন। পেয়েছেন দেশি-বিদেশি স্বীকৃতিও।
সেলিনা পারভীন ১৯৮৫ সালে বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা হিসেবে এই বিএআরইতে যোগ দেন। শুরু থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত কাজ করেছেন গম গবেষণা নিয়ে। গমের নতুন নতুন জাত উদ্ভাবনে রেখেছেন বিশেষ অবদান। মৌলিক গবেষণায় সাফল্যের স্বীকৃতি হিসেবে পেয়েছেন খুরশিদা-মুসলিম স্বর্ণপদক ২০০৯। শুষ্ক মৌসুমে বীজ উৎপাদনের জন্য নার্সারির মাটি পরিষ্কার একটি পলিথিনে চার সপ্তাহ রেখে জীবাণুমুক্ত করে সুস্থ বীজ উৎপাদনের কৌশল উদ্ভাবনের জন্য তিনি এই পুরস্কার পান। এই পদ্ধতি নেপাল, থাইল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, ভিয়েতনাম, ইতালি, মালয়েশিয়া ও ফিলিপাইনে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সেমিনারে তুলে ধরেন সেলিনা পারভীন। গত বছর সেলিনা পেয়েছেন অস্ট্রেলিয়ান ট্রেড কমিশনের পুরস্কার।
সেলিনা পারভীন জানান, তাঁর বাবা শফিউল আলম প্রধান ছিলেন একজন মুক্তিযোদ্ধা। তিনি দীর্ঘদিন পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ এন এন হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন। মা ফাতেমা আলম ছিলেন গৃহিণী। তাঁদের গ্রামের বাড়ি পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ বাবুপাড়া গ্রামে। তিনি ১৯৭৪ সালে দেবীগঞ্জ এন এন হাইস্কুল থেকে এসএসসি, নীলফামারী কলেজ থেকে ১৯৭৬ সালে এইচএসসি পাস করেন। ময়মনসিংহের বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৮২ সালে স্নাতক ও ১৯৮৪ সালে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৯৭ সালে আস্ট্রেলিয়ার সিডনি বিশ্ববিদ্যলয়ে স্নাতকোত্তর এবং ফিলিপাইনের ইন্টারন্যাশনাল রাইস রিসার্চ ইনস্টিটিউট থেকে (আইআরআরআই) পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় ১৯৮১ সালে আবু খালেদের সঙ্গে বিয়ে হয় তাঁর। তাঁদের দুই মেয়ে মাহাদি ফারহান ও মাউফিক ফারহান। ১৯৯২ সালে স্বামী এক সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান।
সেলিনা পারভীন বলেন, ‘বাবা ছিলেন শিক্ষক। তাই আমার বিয়ের পর বাবা বলেছিলেন, “বিয়ে করছ ঠিক আছে, কিন্তু লেখাপাড়া করতে হবে।” মাঝে যখন অস্ট্রেলিয়ার সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ে এমএসসি করতে যাই, তখন বড় মেয়ের বয়স ছিল ছয় বছর আর ছোট মেয়ের এক। ওদের নিয়েই চলে যাই সিডনিতে।’
বর্তমানে সেলিনা পারভীন বিএআরআই থেকে যেসব জাতের উদ্ভাবন হয়েছে সেসবের তালিকা তৈরি করছেন। একইসঙ্গে গবেষণা করছেন ফরমালিনের বিকল্প মিথাইল সাইক্লো প্রোপেন (এমসিপি) নিয়ে।