বিদ্যানন্দের আরেক ঠিকানা

চট্টগ্রামের ষোলশহরেও আছে বিদ্যানন্দের একটি শাখা
চট্টগ্রামের ষোলশহরেও আছে বিদ্যানন্দের একটি শাখা

সরু গলি। ঢোকার মুখে ছোট্ট পরিচিতিফলক: ‘বিদ্যানন্দ, সবার জন্য উন্মুক্ত’। সিঁড়ি ভেঙে দোতলায় উঠতেই বিস্ময়। ছোট্ট পরিচিতিফলকের বিশাল আয়োজন। লম্বা কক্ষের তাকে তাকে সাজানো বই আর বই। উইলিয়াম শেকসপিয়ার, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, শরত্চন্দ্র, হুামায়ূন আহমেদ, মুহম্মদ জাফর ইকবাল, শামসুর রাহমান, নির্মলেন্দু গুমণ। কার বই নেই এখানে।
চার চেয়ারের এক একটি টেবিলে পাঠকের মেলা। সবার বয়স আট থেকে বড়জোর ১৫ বছর। খুদে পাঠকের মনোযোগ বইয়ে। আগন্তুক দেখে চোখ তুলল কয়েকজন। বাকিরা বইয়েই ডুবে থাকল। শুধু কি বইপড়া। চলে পাঠদানও।
এত কিছুর আয়োজন সব কিন্তু বিনা মূল্যেই। শুধু তা-ই নয়, এখানকার শিক্ষার্থীদের বিনা মূল্যে দেওয়া হয় টিফিন, বই, খাতা, পেনসিল ও কলম। সপ্তাহে এক দিন চলে সিনেমা দেখা। বিদ্যা বিলানের এমন আয়োজন! তাই তো সব কক্ষের দেয়ালে সাঁটানো পোস্টারে লেখা: ‘পড়ব, খেলব, শিখব’।
বিদ্যানন্দের চট্টগ্রাম শাখার প্রকল্প পরিচালক মহিউদ্দিন অভি জানালেন, সুবিধাবঞ্চিত শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়াতে ঢাকার পর চট্টগ্রামে বিদ্যানন্দের যাত্রা শুরু গত বছরের পয়লা বৈশাখে। শুরুতে মুরাদপুরের বন গবেষণাগার এলাকায় একটি বাসায় চলে কার্যক্রম। দিনে দিনে ছাত্রছাত্রী বাড়তে থাকায় বদল করতে হয়েছে স্থান। এখন ঠিকানা ষোলোশহর ২ নম্বর গেটের মেয়র গলির এই ভাড়া ভবন। বর্তমানে এই শাখার শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২২০। যার ৭০ শতাংশই মেয়ে। এখানে একাডেমিক কোচিংয়ে পাঠদান চলে প্রথম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত। রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি কোচিংও। প্রায় তিন হাজার বইয়ের পাঠাগার সব পাঠকের জন্য উন্মুক্ত।
এত বড় আয়োজন বিনা মূল্যে? অর্থের সংস্থান হয় কীভাবে? মুখে হাসির রেখা টেনে মহিউদ্দিন অভি বলেন, ‘সব খরচ বহন করেন বিদ্যানন্দের প্রতিষ্ঠাতা পেরুপ্রবাসী কিশোর কুমার দাশ। তা ছাড়া কিছু খাতা ও আমাদের বানানো টি-শার্ট বাইরে বিক্রি করে সামান্য আয় হয়। আর বিদ্যানন্দে কোচিংয়ে পাঠদান করেন বিভিন্ন কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। নেই। স্বেচ্ছাসেবক হিসেইে তাঁরা কাজ করেন।’
মহিউদ্দিনের সঙ্গে কথা বলার ফাঁকে জড়ো হন স্বেচ্ছাসেবকদের কয়েকজন। তাঁদের একজন রহিমা আলম। নাসিরাবাদ সরকারি মহিলা কলেজে স্নাতক তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী। তাঁর কাছে এখানে পাঠদান করা ‘মনের শান্তির জন্য’।
ব্যাখ্যা দিলেন সেই কথার: ‘আমি যে সুযোগ-সুবিধা নিয়ে বড় হচ্ছি, সুবিধাবঞ্চিত এই শিশুরা তো তা পাচ্ছে না। তাদের পরিবারে নুন আনতে পান্তা ফুরায় অবস্থা। তাদের যখন আমি কিছু শেখাতে পারি, তখন অন্য রকম এক ভালো লাগা ছুঁয়ে যায়।’
এদিকে পড়া বাদ দিয়ে স্বেচ্ছাসেবকদের কথা শুনছিল খুদে পাঠক শাহাদাত হোসেন। সে পড়ে বন গবেষণাগার উচ্চবিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণিতে। কাছে যেতেই দেখলাম ভূতের গল্প নিয়ে বসেছে পড়ার জন্য। এখানে আসতে কেমন লাগে? শাহাদাতের পটাপট উত্তর, ‘ভাইয়ারা খুব আদর করেন। আর মজার সব কমিকস ও ভূতের বই পড়তে পারি। খুব আনন্দ লাগে।’

একুশে ফেব্রুয়ারিতে ভাষাশহীদদের জন্য নারায়ণগঞ্জ শাখার খুদে পড়ুয়াদের শ্রদ্ধা
একুশে ফেব্রুয়ারিতে ভাষাশহীদদের জন্য নারায়ণগঞ্জ শাখার খুদে পড়ুয়াদের শ্রদ্ধা