'প্রচলিত ধারার বাইরে গিয়ে আমরা একটু ভিন্নধর্মী, মননশীল কাজ করতেই পারি'

ফেসবুকের কল্যাণে সম্প্রতি ডিজিটাল ফেস্টুনে ছাপা একটি বাক্য অনেকের চোখেই পড়েছে। বাক্যটি এ রকম—‘আপনার মেয়েটিকে শ্বশুরবাড়িতে যেমন দেখতে চান, আপনার বাড়িতে বউ হয়ে আসা অন্য মেয়েটিকে সেভাবেই রাখুন।’ লেখাটি সব মহলে বেশ প্রশংসিত হয়েছে। এটি লিখেছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পুলিশ সুপার মো. মনিরুজ্জামান
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পুলিশ সুপার মো. মনিরুজ্জামান। ছবি: প্রথম আলো
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পুলিশ সুপার মো. মনিরুজ্জামান। ছবি: প্রথম আলো

কোন ভাবনা থেকে ফেস্টুনে এই বাক্য লিখেছিলেন?
পরিসংখ্যান পর্যালোচনা করে জানা গেছে, ইদানীং নারী নির্যাতন–সংক্রান্ত মামলা বেশি হচ্ছে। একটু বিশদ আকারে বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় অনেক প্রবাসী থাকেন। তাঁদের অনেকেই বিয়ের পরপরই স্ত্রীকে মা–বাবা, ভাইবোনের কাছে রেখে চলে যান ভিনদেশে। ফলে শ্বশুরবাড়ির সদস্যদের সঙ্গে মেয়েটির যেমন সম্পর্ক গড়ে ওঠার কথা, প্রায়ই তেমনটা হয় না। অনেক সময় মেয়েটি শ্বশুরবাড়ির সদস্যদের দ্বারা শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হন। আর এতেই দূরত্বের সৃষ্টি হয় শ্বশুরবাড়ির সঙ্গে। তারপর সেটা গড়ায় নারী নির্যাতন মামলা পর্যন্ত। সব মা–বাবাই নিজের মেয়েকে শ্বশুরবাড়িতে সুখী দেখতে চান। এ কারণে আমার কাছে মনে হয়েছে, একটি মেয়ে তাঁর মা–বাবার কাছে যতটুকু নিরাপদ, শ্বশুরবাড়িতেও ততটুকু নিরাপদ থাকলে নারী নির্যাতনের মতো মামলাগুলো হতো না। আর শ্বশুরবাড়ির লোকজনরাও হতেন না হয়রানির শিকার। এ জন্য একটা সহজ বা স্পর্শকাতর বাক্য লিখে প্রকাশ করেছি, যা হয়তো অনেকের মনে দাগ কেটেছে।
এটা তো পুলিশের কাজের বাইরে, তবে কেন এই চিন্তা?
প্রচলিত অর্থে ধারণা করা হতে পারে, এটা পুলিশের কাজ নয়। কিন্তু আমি মনে করি, প্রচলিত ধারার বাইরে গিয়ে আমরা একটু ভিন্নধর্মী, মননশীল কাজ করতেই পারি। কারণ, নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটলে পুলিশ আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়। ঘটনাই যদি না ঘটে আর সেটা যদি প্রতিরোধ করা যায়, তাহলে সমাজে বিরাট পরিবর্তন আসবে। তখন নারী নির্যাতনের মামলাও কম হবে। তাই আমার মনে হয়, এটা পুলিশেরও কাজ।
এর ফলে কোনো পরিবর্তন দেখছেন কি?
আসলে এটা তো বস্তুগত পরিবর্তন নয়, আদর্শিক পরিবর্তন—যা সহজে দৃশ্যমান নয়। আমরা মামলা তদন্ত করতে গিয়ে এর পরিবর্তন লক্ষ করছি। আরও অনেক দূর যেতে হবে। পুলিশ শুরু করেছে। সমাজের ইতিবাচক মানুষ, যাঁরা সমাজ নিয়ে ভাবেন, তাঁদের আরও নতুন নতুন ভাবনা নিয়ে এগিয়ে আসার আহ্বান জানাচ্ছি। তবে এ ক্ষেত্রে নির্বাচিত নারী প্রতিনিধিরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারেন। বৃত্তের বাইরে গিয়ে ভিন্নধর্মী চিন্তা করা এবং সেটা ছড়িয়ে দেওয়ার মাধ্যমেই পরিবর্তন সম্ভব। আমি স্বপ্ন দেখতে ভালোবাসি। ভালো কথা বলতে থাকলে পরিবর্তন আসবেই; হয়তো সময় লাগবে।
এর ফলে লোকজনের কোনো ধরনের মন্তব্য পেয়েছেন?
অনেক প্রশংসা পেয়েছি। যেখানেই কোনো অনুষ্ঠান করি, সেখানেই এ ধরনের বাক্য–সংবলিত ফেস্টুন প্রদর্শনের ব্যবস্থা রাখি। নারী নির্যাতন বিষয়ে কাউকে কোনো হুমকি না দিয়ে যদি বলা হয়, ‘আপনার মেয়েটিকে শ্বশুরবাড়িতে যেমন দেখতে চান, আপনার বাড়িতে বউ হয়ে আসা অন্য মেয়েটিকে সেভাবেই রাখুন,’ তাহলে কাজটা অনেক সহজ হয়ে যায়।