বুয়েট যেখানে সেরা

প্রথম পর্যায়ে যুক্তরাষ্ট্রে এবং দ্বিতীয় পর্যায়ে যুক্তরাজ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বিজয়ী হয়ে এল বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) একটি দল। তারা অর্জন করল ‘বেস্ট এডুকেশনাল ইমপ্যাক্ট অ্যাওয়ার্ড’ এবং এক হাজার ডলার প্রাইজমানি।
শেফিল্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে বিচারকদের সঙ্গে বুয়েটের শিক্ষার্থী জাহিন মুস্তাকিন
শেফিল্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে বিচারকদের সঙ্গে বুয়েটের শিক্ষার্থী জাহিন মুস্তাকিন

আবারও প্রমাণ মিলল বাংলাদেশের তরুণেরা সুযোগ পেলে বিশ্বের সামনে তুলে ধরতে পারেন নিজেদের মেধা, সঙ্গী হতে পারেন দেশের গৌরবের। প্রথম পর্যায়ে যুক্তরাষ্ট্র এবং দ্বিতীয় পর্যায়ে যুক্তরাজ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বিজয়ী হলো বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) তড়িৎকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থীদের একটি দল। ‘আইইইই ইন্টারন্যাশনাল ফিউচার এনার্জি চ্যালেঞ্জ (আইএফইসি)-২০১৫’ শীর্ষক প্রতিযোগিতায় চীন, ভারত, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশের ৩০টি দলকে পেছনে ফেলে বুয়েটের এই দলটি জিতে নিল ‘বেস্ট এডুকেশনাল ইমপ্যাক্ট অ্যাওয়ার্ড’ এবং এক হাজার ডলার প্রাইজমানি।
বুয়েট দলের সদস্যরা হলেন জাহিন মুস্তাকিন, রিফাত কায়সার, হাসান মনির, তারিকুল ইসলাম, সৈয়দ ইমাম হাসান, রাফিউল আমিন, অনিক চৌধুরী, সৈয়দ আসহাব উদ্দীন, আবুল আল আরাবি, খালেদ বিন মইনুদ্দীন, রাকিবুল ইসলাম চৌধুরী ও শরিফুল ইসলাম ফয়সাল।
বরাবরের মতো এবারও আইএফইসি ২০১৫ সালের আয়োজক ছিল ইনস্টিটিউট অব ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ার্স (আইইই), পাওয়ার অ্যান্ড এনার্জি সোসাইটি। কয়েকটি ধাপে আয়োজিত এবারের প্রতিযোগিতার প্রথম ধাপ সম্পন্ন হয় যুক্তরাষ্ট্রের নর্থ ক্যারোলাইনা অঙ্গরাজ্যের শার্লোটে। আর দ্বিতীয় ধাপ সম্পন্ন হয় যুক্তরাজ্যের দক্ষিণ ইয়র্কশায়ারের শেফিল্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে। দলের প্রতিনিধি হিসেবে জাহিন মুস্তাকিন ও রিফাত কায়সার অংশ নেন যুক্তরাষ্ট্রে এবং জাহিন মুস্তাকিন অংশ নেন যুক্তরাজ্যের শেফিল্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের চূড়ান্ত পর্বে।

বুয়েটের এই দলটিই পেয়েছে আইএফইসি ‘বেস্ট এডুকেশনাল ইমপ্যাক্ট অ্যাওয়ার্ড’
বুয়েটের এই দলটিই পেয়েছে আইএফইসি ‘বেস্ট এডুকেশনাল ইমপ্যাক্ট অ্যাওয়ার্ড’

আগস্টের দ্বিতীয় সপ্তাহে দেশে ফিরলে বুয়েট ক্যাম্পাসে কথা হয় জাহিন মুস্তাকিন ও দলের অন্য সদস্যদের সঙ্গে। জাহিনের কাছে আমরা প্রশ্ন রাখি, কী ছিল সেই উদ্ভাবন, যার জন্য অর্জিত হলো এই গৌরব? উত্তরে জাহিন বলেন, ‘আমরা একটা ইনভার্টার তৈরি করেছি, যা একই সঙ্গে গ্রিড থেকে শুধু ব্যাটারি চার্জই করে না বরং ব্যাটারি থেকে শক্তি গ্রিডেও সরবরাহ করে। এ জন্যই এটাকে আমরা বলছি, “সিঙ্ক্রোনভার্টার”, যেটা অনেকটা সিঙ্ক্রোনাস জেনারেটরের মতো কাজ করে। এই ইনভার্টার ডিজাইনের জন্যই আমরা পেয়েছি পুরস্কারটি।’
যোগ করেন রিফাত কায়সার, ‘পৃথিবীব্যাপী নবায়নযোগ্য শক্তি এবং এর কার্যকর ব্যবহার নিয়ে অনেক কাজ হচ্ছে। কিন্তু আমাদের দেশে এ ধরনের উদ্যোগ সীমিত। প্রতিযোগিতার জন্য আমরা তাই এমন একটা যন্ত্র বানাতে উদ্যোগী হই, যা কিনা একই সঙ্গে বিদ্যুৎ সংরক্ষণ করবে এবং প্রয়োজনের সময় সরবরাহ করবে।’
জাহিন মুস্তাকিন জানান, ‘প্রতি দুই বছর অন্তর আয়োজিত এ প্রতিযোগিতার মূল লক্ষ্য হলো উইন্ড টারবাইনের মতো পরিবর্তনশীল উৎস থেকে স্থিতিশীল শক্তি সরবরাহ করার জন্য একধরনের ইনভার্টার ডিজাইন করা, যা মূলত অধিক শক্তি উৎপাদনের সময় উদ্ধৃত শক্তি সঞ্চয় করে রাখবে এবং উৎপাদনের ঘাটতির সময় তা সরবরাহ করবে, যেন পাওয়ার গ্রিডে সব সময় সুষম শক্তির সরবরাহ নিশ্চিত হয়।’

দলের অন্যতম সদস্য হাসান মনির বলেন, ‘বর্তমানে বাংলাদেশের বৈদ্যুতিক সমস্যার কারণে প্রায় সব বাসাতেই ইনভার্টার ব্যবহার করা হয়। যেখানে বাজারে প্রচলিত সাধারণ ৫০০ ওয়াটের ইনভার্টারগুলোর খরচ পড়ে ৩০ হাজার টাকার বেশি, সেখানে আমাদের তৈরি ইনভার্টারে খরচ হবে অর্ধেকের মতো। সম্পূর্ণ প্রকল্পটি বাণিজ্যিকভাবে চালু করা সম্ভব হলে খরচ আরও কমে আসবে।’