ভিনদেশের ক্যাম্পাসে ঈদ

বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছেন বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা। ভিনদেশের ক্যাম্পাসে কেমন কাটে তাঁদের ঈদ। সে কথাই তাঁরা জানিয়েছেন স্বপ্ন নিয়ের মাধ্যমে।

.
.

আনন্দ খোঁজার আনন্দ
মেলবোর্নে প্রথমবার ঈদে নিজেকে খুশি রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করেছি। আগের দিন বাজারে গেলাম। বাবাকে ফোন করে জেনে নিলাম কী কী কেনা লাগবে, ছোটবেলা থেকে এই দায়িত্ব তো তাঁকেই পালন করতে দেখেছি। যা হোক, বিশাল বাজার নিয়ে বিকেল থেকে রান্না শুরু করলাম। রাত ১১টায় এল মায়ের ফোন। তাঁদের গলার স্বরেই ঈদের আনন্দ, আমেজ। মা কথায় কথায় তাঁর রান্নার বর্ণনা দিলেন, ঘর গোছানোর কথা বললেন। ঠিক তখনই বুকের মধ্যে খচ করে উঠল। বুঝলাম, আমার ‘খুশি থাকার’ চেষ্টা বৃথা। যত আয়োজনই করি, যতই নিজেকে বোঝাই, এই ঈদ আর সেই ঈদ এক হবে না—তবু মন মানে না। বাসায় কে কী করছে, সেই চিন্তাই মাথায় ঘুরপাক খেল অনেক রাত পর্যন্ত।
পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে রোবটের মতো রান্না শেষ করেছি। বাবা প্রতি ঈদে রাতে কিছু ফুল নিয়ে আসেন, মায়ের আবদার মেটাতে। সেই প্রথা ধরে রেখে আমিও ফুল আনলাম। বাসার একজন সকাল থেকে কাজে ছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক আপু, আমার একাকিত্ব ঘোচাতে তিনিও যথেষ্ট ‘খুশি থাকার চেষ্টা’ করছিলেন। অনেক বাঙালি বন্ধু বেড়াতে এসেছিল, আমিও অনেকের বাসায় গেছি। রাতে মাকে ফোন করে বলেছি, দিনটা কত চমৎকার গেছে!
এই শহরে এবার আমার তৃতীয় ঈদ। এখন বোধ হয় আমি ‘খুশি থাকা’ শিখে গেছি!
সারজানাআসিফ, চার্লস স্টার্ট ইউনিভার্সিটি, মেলবোর্ন, অস্ট্রেলিয়া

.
.

বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক ঈদ
উমিও শহরটাই বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক। ইউনিভার্সিটি খোলা থাকলে পুরো শহরই প্রাণচাঞ্চল্যে ভরপুর থাকে। এখানে দুটা ইউনিভার্সিটি আছে—উমিও ইউনিভার্সিটি ও সুইডিশ ইউনিভার্সিটি অব এগ্রিকালচারাল সায়েন্স। বাংলাদেশি কমিউনিটির বেশির ভাগই এই দুই ইউনিভার্সিটির বর্তমান অথবা প্রাক্তন ছাত্র। এ ছাড়া অনেকে আছেন, যাঁরা স্থায়ীভাবে ব্যবসা-বাণিজ্য করছেন। উমিওতে বাংলাদেশির সংখ্যা আনুমানিক ১১০। সবাই একসঙ্গে হওয়ার জন্য এখানে ঈদ একটা বড় উপলক্ষ। ঈদের দিন অফিস, ইউনিভার্সিটি—সব খোলা। উমিওতে কোনো মসজিদ নেই। উপযুক্ত জায়গার অভাবে ঈদের নামাজ হয় একটা বড় ইনডোর বাস্কেটবল গ্রাউন্ডে। পুরো উমিওর মুসলিমরা সেখানে এক হয়। ঈদের দিন সকালে দল বেঁধে পাঞ্জাবি পরে বাসে চড়ে আমরা ঈদের নামাজ পড়তে যাই। তারপর শুরু হয় দাওয়াতের পালা। লুচি, সেমাই থেকে শুরু করে ঈদের দিনে দেশে যা যা খাওয়া হয়, এখানেও তার কিছুই বাদ পড়ে না।
ঈদ আয়োজনের একটা বড় অংশ হলো পুনর্মিলনী অনুষ্ঠান। প্রস্তুতি শুরু হয় এক মাস আগে থেকেই। দায়িত্ব দেওয়া হয় নতুন ছাত্রদের। পাশাপাশি সিনিয়ররাও সাধ্যমতো চেষ্টা করেন। মূল রান্না হয় ‘স্টুডেন্ট করিডরে’। বিভিন্ন বাসা থেকেও সবাই রান্না করে নিয়ে আসেন। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, খেলাধুলা আর সব শেষে খাওয়াদাওয়া, ছবি তোলা দিয়ে শেষ হয় আমাদের ঈদ আয়োজন।

রিয়াজআশরাফুল আবেদিন, উমিয়া ইউনিভার্সিটি, সুইডেন

.
.

ছুটির গল্প শুনি
তৃতীয়বারের মতো দেশের বাইরে ঈদ করছি। ভিনদেশে ঈদ বরাবরই অনেক আলাদা। হাজার ব্যস্ততার মধ্যে ঈদের আমেজটা ঠিক পাওয়া যায় না। শপিং করতে যাওয়া না হলেও নতুন কাপড় ঠিকই এসে যায়। ইফতারের পরই চাঁদ দেখতে দৌড়ানো হয় না। তবু চাঁদরাতে কিছু রান্না করে মেহেদি দিতে বসে যাই, এতে যদি একটু ঈদ ঈদ ভাবটা আসে! পরিবারের কিছু মানুষ এখানে, কিছু বাংলাদেশে। সকাল বেলার হইচই; আব্বু আর ভাইয়াদের একসঙ্গে নামাজে যাওয়া; একসঙ্গে নাশতা করা—ব্যাপারগুলো মিস করি। ক্লাস বা কাজ না থাকলে সকালে ঈদের নামাজ পড়তে যাই। তখনই একটু ঈদ ঈদ মনে হয়। মসজিদগুলোতে সবাই বিভিন্ন ধরনের খাওয়া নিয়ে আসে। অনেক দেশের নানান রকম মানুষ। অনেক পার্থক্য সবার মধ্যে, তবু সবাই অনেক কাছের। নামাজ শেষে আত্মীয়স্বজনের বাসায় ঘুরে সময় কাটে। দেশে বন্ধু আর আত্মীয়দের সঙ্গে ফোনে বা ফেসবুকে আলাপ হয়। ঈদের আগে-পরে তাঁদের ছুটির গল্প শুনি। এ সময় ঢাকার ফাঁকা রাস্তাগুলোতে রিকশায় ঘুরতে অনেক ইচ্ছা হয়। এখানের ঈদে অনেক কিছুই আছে, তবু ঈদের ভাবটা নেই। আমার দেশের ঈদের আনন্দটা হাজার মাইল পথ পাড়ি দিয়ে এখানে আসতে আসতে কেমন ফিকে হয়ে যায়। সবাইকে ঈদের শুভেচ্ছা।

অর্পারহমান, ইউনিভার্সিটি অব ম্যাসাচুসেটস, বোস্টন, যুক্তরাষ্ট্র

.
.

‘তোমাদের বিরিয়ানি কিন্তু চাই-ই’
দক্ষিণ কোরিয়ায় ইসলাম ধর্মের অনুসারী মানুষের সংখ্যা হাতে গোনা। আর এ দেশের সসান শহরের হানস্যু ইউনিভার্সিটিতে মুসলমান বলতে বাংলাদেশ, পাকিস্তান, তাজিকিস্তান, উজবেকিস্তান, কাজাখস্তান, নাইজেরিয়া ও চীনের কিছু ছাত্র। স্থানীয় প্রশাসনের ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে খুব ভালো জ্ঞান না থাকায়, রোজা বা ঈদের যে একটা আলাদা আমেজ, তার কোনোটাই এখানে অনুভব করা সম্ভব নয়। আর ঈদ যদি কোনো ছুটির দিনে না পড়ে, তবে ব্যাগ গুছিয়ে ক্লাসে যাওয়া ছাড়া কোনো বিকল্প থাকে না। তাই বলে তো ঈদের দিনে আর বসে থাকা যায় না। নিকটস্থ মসজিদ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনেক দূরে হওয়ায় ডরমিটরির হল রুমেই সকালে জামাত করে ঈদের নামাজের ব্যবস্থা করা হয়। আর ইউটিউবের সাহায্য নিয়ে করা হয় খুতবার ব্যবস্থা। এরপর আগে তৈরি করা সেমাই ও জুস খেয়ে চলে যেতে হয় ক্লাসে। তবে ক্লাস শেষে বিকেলে ভালো খাবারের ব্যবস্থা থাকে। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো, অন্যান্য অমুসলিম বন্ধুও ঈদের দিনের এই ভোজে শরিক হয়। বিশেষ করে ঈদের দু-তিন দিন আগে থেকে ওরা মনে করিয়ে দেয়, ‘তোমাদের বিরিয়ানি কিন্তু রান্না করা চাই-ই চাই’। বাড়িতে ফোন করে পরিবারের লোকজন কীভাবে ঈদ কাটাচ্ছে, সেটা জেনেই আমাদের ঈদ কাটে। ঈদের খুশি পূর্ণাঙ্গ করতে ঈদের পরের যেকোনো ছুটির দিনে আবার বড় করে সবাই মিলে উদ্‌যাপন করা হয়।

রিয়াদজোবায়ের, হানস্যু ইউনিভার্সিটি, সসান, দক্ষিণ কোরিয়া

.
.

‘সপ্তাহব্যাপী ঈদ আয়োজন’ মিস করব
আমি ২০১৩ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্রে আছি। বেশ কয়েকটি ঈদ পার করেছি। বাবা-মা সঙ্গেই আছেন। তবু প্রতিবারই একটা দুঃখবোধ থাকে। সে দুঃখবোধের কারণ—দেশে আমাদের বিশাল পরিবার। নানুবাড়ি-দাদুবাড়ি মিলিয়ে ৫০ জন তো হবেই। তাঁদের সবার সঙ্গে ‘সপ্তাহব্যাপী ঈদ আয়োজন’ মিস করব।
এখানে ঈদ মানেই এক দিনের আয়োজন। সেটার জন্যও সব কাজের ফাঁকে দুদণ্ড সময় বের করে নিতে হয়। খণ্ডকালীন চাকরি আর পড়াশোনার চাপ সেদিনও থাকে। তাই ঈদের দিন সকালে উঠে একটু সাজুগুজু করি। নতুন কাপড় পরা বাদ যায় না সেই আয়োজনে! দেশে সবাইকে ফোন দিই, ‘ঈদ মোবারক’ জানাই। এরপর মনের আনন্দে রান্না করি। তবে সপ্তাহের ছুটিতে বন্ধু, পরিচিত যারা আছি, সবাই একত্র হই। জম্পেশ আড্ডা দিই। কখনো দূরে কোথাও ঘুরতে বেরোই।

সোহাদহোসাইন, লাগুয়ার্দিয়া কমিউনিটি কলেজ, যুক্তরাষ্ট্র

.
.

সালামাত হারিরায়া!
হারিরায়া। প্রথমে শুনেই ভেবেছিলাম, অন্য কোনো ধর্মের গুরুত্বপূর্ণ উৎসব মনে হয়। পরে দেখি, এখানে ঈদুল ফিতরকেই ওরা হারিরায়া বলে। ঈদের আগে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, দোকান, শপিং মল—যেখানেই যান না কেন, সব জায়গায় লেখা দেখবেন ‘সালামাত হারিরায়া’। অর্থাৎ ‘স্বাগত ঈদুল ফিতর’। মালয়েশিয়াতেও বাংলাদেশের মতো ঈদ উপলক্ষে আয়োজন চোখে পড়ার মতো। বিশেষ করে শপিং মলগুলোতে এ সময় একটা বড় অঙ্কের ছাড় পাওয়া যায়।
এখানে ঈদের আয়োজন অনেকটা পরিবারকেন্দ্রিক। যে যার নিজ নিজ পরিবার নিয়ে গ্রামে চলে যান ঈদ করতে। এ কারণে আমরা যারা প্রবাসী বাংলাদেশি, ঈদের আমেজ আমাদের গায়ে তেমন লাগে না। তবে ঈদের দিন সবচেয়ে বড় আনন্দ এটাই যে বিদেশে সব বাংলাদেশির একসঙ্গে হওয়া। সেদিন একসঙ্গে খাওয়াদাওয়া ও ঘোরার সুযোগ হয়। এখানে এসে সবচেয়ে বেশি মিস করি যে বিষয়টা সেটা হচ্ছে নিজ পরিবার, বন্ধুবান্ধব, আর সবচেয়ে বড় কথা—বাংলাদেশের মতো ঈদ আয়োজন। মালয়েশিয়ায় যা রঙিন ব্যানারে ‘সালামাত হারিরায়া’ দেখার মধ্যেই সীমাবদ্ধ!
এমএইচএমমুবাশশির, এমফিল ইন বায়োইনফরমেটিকস, ইউনিভার্সিটি টেকনোলজি মালয়েশিয়া, মালয়েশিয়া।

.
.

ফেসবুকে মজার খাবারের ছবি দেখার মতো...
ঈদের আনন্দ-অনুভূতি দেশের বাইরে স্বাভাবিকভাবেই আলাদা। আর যদি সেটা হয় গ্রীষ্মকালে স্ক্যান্ডিনেভিয়ায় ঈদ—যখন প্রাকৃতিক কারণে দিনে ২০ ঘণ্টা আলো আর ৪ ঘণ্টা আবছা অন্ধকার, তখন চাঁদ দেখা থেকে শুরু করে ঈদের অনেক আনন্দই হয়ে ওঠে ফেসবুকে ঈদের মজাদার খাবারের ছবি দেখার মতো!
গ্রীষ্মে সাধারণত বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস না থাকলেও বিভিন্ন কারণে দেশের মতো ঈদের মজা এখানে কখনোই পুরোপুরি উপলব্ধি করা সম্ভব নয়। বাংলাদেশে ঈদের আমেজ যে কত আনন্দমুখর, তা প্রবাসে সামাজিক রীতি ভিন্ন হওয়ার কারণে খুব একটা টের পাওয়া যায়।
আমার কাছে দেশের বাইরে ঈদ উদ্‌যাপনের ভালো কিছু অভিজ্ঞতার মধ্যে ঈদের দিন সকালে নামাজ পড়তে যাওয়া অন্যতম। এলাকার স্থানীয় মসজিদে বিভিন্ন দেশ থেকে আগত বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হয়। পরে একসঙ্গে খাওয়া-দাওয়া করে ঈদে দেশে থাকতে না পারার দুঃখটা কিছুটা হলেও ভুলে থাকা যায়। ঈদের দিন এখানকার বাংলাদেশিরা নানা রকম আয়োজন করে। দেশীয় মজার সব খাবারের বন্দোবস্ত থাকে। আমি যে শহরে থাকি, সেখানে বাংলাদেশি সংখ্যায় খুব বেশি নয়। ছোট পরিসরেও ঈদের দিন ভালো একটা সময় কাটে সবার সঙ্গে।

দেশ থেকে দূরে আরও একটি ঈদ করব এবার। প্রবাসে পরিবার-পরিজন ছাড়া ঈদে খুব একা লাগলেও পড়ালেখার তাগিদে বাইরে থাকতে হয়। দূর থেকেই দেশের ঈদের আমেজে শরিক হওয়ার চেষ্টা করব। দেশে ও প্রবাসে সব বাংলাদেশির জন্য শুভকামনা ও

মুন্তাসিরইসলাম, লিনশপিং ইউনিভার্সিটি, সুইডেন

.
.

স্কাইপিতে আনন্দ ভাগাভাগি
স্বদেশের মাটিতে ঈদ আর প্রবাসের ঈদ যেন মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। ঈদের সময় এলেই কেন জানি কয়েক বছর আগে ফিরে চলে যাই। সেই সময়টার ঈদের স্মৃতি এখনো হাতড়ে বেড়াই। সেই সকালের নামাজ পড়ে বাড়ি ফিরে মিষ্টি-ফিরনি খাওয়া এখন কল্পনা। এখন ঈদের সকালে থাকে ক্লাস। পড়াশোনার ভিড়ে ঈদের পরের সপ্তাহে বাংলাদেশি বন্ধুদের নিয়ে হয়তো ঈদের আনন্দ ভাগ করার সুযোগ পাই। মন্দের ভালো হিসেবে স্কাইপিতে আর ফেসবুকের মাধ্যমে ঈদের দিনের দেশের মানুষের আনন্দ-উচ্ছ্বাস দেখি। স্কাইপিতে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ‘হাই-হ্যালো’ আর হাল-হকিকত জেনে ‘সাইন আউট’ করে ব্যস্ত হয়ে যাই নিজের কাজে। আমি কাজে ফিরলেও মা-বাবা যে কান্না লুকিয়ে রাখেন, তা ওয়েবক্যামের দিকে তাকিয়ে বুঝি, তখন জীবনের কোনো অর্থ খুঁজে পাই না। হাজারো মাইল দূরে বাংলাদেশে ফিরে যাওয়ার আক্ষেপটা মনের মধ্যে লুকিয়েই ঈদের দিনটা নিজেকে নিয়েই ব্যস্ত থাকি।

ইমরানহাসনাত, ইউনিভার্সিটি অব ওকলাহোমা, যুক্তরাষ্ট্র

.
.

পুরো শহরে আমরা তিন বাংলাদেশি
ফিনল্যান্ডে আসার পর প্রথম রোজা পেলাম ২০১৩ সালে। উত্তর মেরুর কাছাকাছি হওয়ায় এখানে গ্রীষ্মকালীন রোজার দিনগুলো হয় অনেক লম্বা (যেমন এ বছর প্রায় ২১ ঘণ্টা রোজা রাখছি)।
সেই প্রথমবার, সব কটি রোজা শেষ করে যখন ঈদ এল, খুব আনন্দ হচ্ছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ে তখন গ্রীষ্মকালীন ছুটি চলছে। গ্রীষ্মের ছুটির সঙ্গে ঈদের ছুটিটাও সুন্দর মিলে গেল। বিদেশের মাটিতে প্রথম ঈদ, অনুভূতিই অন্য রকম। কিন্তু বিপত্তি হলো অন্য জায়গায়। বিশ্ববিদ্যালয়ে ছুটি হলেও আমার কাজের তো ছুটি নেই। বসকে বলে কয়েক দিনের ছুটি নিলাম। তার ওপর আমি যে শহরে থাকি (রিহিমাকি), সেটা রাজধানী হেলসিঙ্কি থেকে ৭০ কিলোমিটার উত্তরে ছোট্ট একটি শহর। পুরো শহরে আমরা মাত্র তিনজন বাংলাদেশি, সবাই ছাত্র। জানামতে, সবচেয়ে কাছের ঈদের নামাজের জামাত হয় রাজধানীতে। সেখানে বাংলাদেশিরাই এই আয়োজন করে। ঈদের দিন সকালে ভোরে উঠে আমরা রওনা দিলাম হেলসিঙ্কির উদ্দেশে। সেই প্রথম ফিনল্যান্ডের মাটিতে একসঙ্গে এত বাংলাদেশি দেখলাম। এখানে যত কিছুই করি না কেন, দেশে রেখে আসা পরিবার ও বন্ধুদের অনেক মিস করি। তাই তো ঈদের দিন সবার সঙ্গে ফোনে কথা না বললেই নয়। রেজওয়ানুলইসলাম, হামক ইউনিভার্সিটি অব অ্যাপ্লাইড সায়েন্সেস, ফিনল্যান্ড