Thank you for trying Sticky AMP!!

ভারত থেকে অনুপ্রবেশ ঠেকাতে রাত জেগে গ্রামবাসীর পাহারা

ভারত থেকে অনুপ্রবেশ ঠেকাতে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সঙ্গে রাজশাহীর চরখানপুর সীমান্ত পাহারা দিচ্ছেন গ্রামবাসী। সীমান্তে নজরদারি জোরদার করার জন্য চরখানপুর গ্রামের প্রায় আড়াই শ বাসিন্দা রাত জেগে পালাক্রমে এই কাজ করছেন গত ২৮ নভেম্বর থেকে।

গ্রামটির বাসিন্দারা জানান, গত ২৮ নভেম্বর তাঁদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন বিজিবি ব্যাটালিয়ন-১–এর আওতাধীন চরখানপুর সীমান্ত ফাঁড়ির সদস্যরা। চরখিদিরপুরে প্রথম আলো ট্রাস্ট পরিচালিত আলোর পাঠশালা মাঠে ওই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। গ্রামবাসীসহ সেখানে উপস্থিত ছিলেন সীমান্ত ফাঁড়ির নায়েক সুবেদার নজরুল ইসলাম ও ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) দুজন সদস্য। সভায় সীমান্তে অনুপ্রবেশ ঠেকাতে গ্রামবাসীর সহযোগিতা চায় বিজিবি।

চরখানপুর সীমান্ত ফাঁড়ির ইনচার্জ (দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) নায়েক সুবেদার নজরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, গত ২৭ নভেম্বর তাঁরা জানতে পারেন ভারত থেকে ওই সীমান্তপথে অনুপ্রবেশ ঘটতে পারে। এ জন্য পরের দিনই তিনি গ্রামের ইউপি সদস্য এরশাদুল হক ও কোহিনুর বেগমকে ডেকে বৈঠক করার সিদ্ধান্ত নেন। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় গ্রামের বাসিন্দারা সন্ধ্যা ছয়টা থেকে সকাল ছয়টা পর্যন্ত পালা করে পাহারায় থাকবেন। পরে ওই দিন সন্ধ্যা ছয়টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত এক দল আর রাত ১২টা থেকে সকাল ছয়টা পর্যন্ত আরেক দল গ্রামবাসী বিজিবির সঙ্গে যোগ দেন। উৎসাহ দিতে অংশগ্রহণকারীদের খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

গতকাল রোববার রাতে পদ্মা নদী পার হয়ে চরখানপুরে গিয়ে দেখা যায়, টর্চলাইট ও লাঠি হাতে নিয়ে সীমান্ত পাহারা দিচ্ছেন গ্রামের বাসিন্দারা। সীমান্তের ১৬৩-১ এস পিলারের পাশে দায়িত্বে ছিলেন স্থানীয় ইউপি সদস্য এরশাদুল হকসহ ১০ জন বাসিন্দা। তাঁদের সঙ্গে বিজিবির সদস্যরাও ছিলেন। গ্রামটির পশ্চিম পাশে বড় একটি মাঠের পুরো অংশই ভারতীয় সীমানার মধ্যে পড়েছে। মাঠের ধার দিয়ে বাংলাদেশের সীমান্তরেখা। এই সীমান্তরেখা বরাবর দাঁড়িয়ে থেকে তারা অনবরত টর্চলাইট ঘোরাচ্ছিলেন। একবার ডান পাশ থেকে এক জোড়া টর্চের আলোয় মাঠ আলোকিত হয়ে উঠছিল আবার বাঁ পাশ থেকে আরেক দলের টর্চের আলো পড়ছিল।

সীমান্তে অনুপ্রবেশ ঠেকাতে রাত জেগে রাজশাহীর চরখানপুর সীমান্ত পাহারায় গ্রামবাসী। ছবি: প্রথম আলো

ইউপি সদস্য এরশাদুল হক বলছিলেন, বিজিবির প্রস্তাব অনুযায়ী গ্রামের মানুষকে বুঝিয়ে এই দায়িত্ব পালনে উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। পালা করে গ্রামের সবাই এই দায়িত্ব পালন করছেন।

ওই সীমান্ত পিলারের কাছে পাহারায় আবদুস সাত্তার নামের একজন বয়স্ক বাসিন্দাকেও দেখা যায়। তিনিও একটি লাঠি হাতে দাঁড়িয়ে ছিলেন সবার সঙ্গে। পাহারায় ছিলেন গ্রামের কৃষক মো. জুয়েলও (২৮)। তিনি বলছিলেন, দিনের বেলায় মাঠের কাজ শেষে রাতে সীমান্ত পাহারা দিতে এসেছেন। গতকাল আলোর পাঠশালার দশম শ্রেণির ছাত্র মিন্টু শেখের (১৬) পাহারা দেওয়ার পালা পড়েছিল সন্ধ্যা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত। মিন্টু জানায়, রাতের প্রথমার্ধে পড়াশোনার ফাঁকে ফাঁকে এসে পাহারায় দাঁড়ায় সে। দেশের ভালোর জন্য গ্রামের লোকেরা বিজিবিকে সহযোগিতা করছে। এ কাজ করে তারও ভালো লাগছে।

সীমান্তবর্তী এই গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, সৌরবিদ্যুতের আলোতে ছোট ছোট দোকানের সামনে আড্ডা দিচ্ছেন গ্রামের বাসিন্দারা। একটি দোকানের আড্ডায় যোগ দিলে গ্রামবাসী জানান, অন্য সময়ের চেয়ে রাতে তাঁরা এখন আগের চেয়ে বেশি সময় আড্ডা দেন। এতে যাঁরা সীমান্তে পাহারা দিচ্ছেন, তাঁরাও কাজে উৎসাহ পাচ্ছেন।