Thank you for trying Sticky AMP!!

লাইসেন্সবিহীন এমএলএম কোম্পানির রমরমা ব্যবসা

বহুস্তর বিপণন (এমএলএম) পদ্ধতিতে রাজশাহীতে জমজমাট ব্যবসা করে যাচ্ছে ‘তিয়ানশি বাংলাদেশ’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান। নগরের বড়কুঠি এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় এর কার্যক্রম চলছে। অথচ সরকারি হিসাব অনুযায়ী, দেশে বর্তমানে বৈধ লাইসেন্সধারী কোনো এমএলএম কোম্পানি নেই।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, যৌথ মূলধনি কোম্পানি ও ফার্মগুলোর নিবন্ধকের কার্যালয় (রেজসকো) এবং লাইসেন্স না পাওয়া কোম্পানিগুলো সূত্রে জানা গেছে, রেজসকোর কাছে লাইসেন্সের জন্য মোট ২১টি আবেদন জমা পড়েছে। চারটিকে লাইসেন্স দেওয়া হয়। বাকি ১৭টি পায়নি। এই না-পাওয়া ১৭টির মধ্যে রয়েছে তিয়ানশি বাংলাদেশ। আর যে চারটিকে লাইসেন্স দেওয়া হয়েছিল, মেয়াদ শেষে তাদের লাইসেন্সও আর নবায়ন করা হয়নি।
এদিকে গত ডিসেম্বরে এক সরকারি তথ্য বিবরণীতে জানানো হয়, লাইসেন্স ছাড়া এমএলএম পদ্ধতিতে ব্যবসা করা জামিন অযোগ্য অপরাধ। এতে লাইসেন্স ছাড়া কেউ এ ব্যবসা করলে ও প্রতারণা করে থাকলে কাছাকাছি থানা বা আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে জানাতে সর্বস্তরের জনগণের প্রতি আহ্বান জানায় সরকার।
৮ জুন নগরের টিচার্স ট্রেনিং কলেজ মিলনায়তনে জাঁকালো অনুষ্ঠানের আয়োজন করে তিয়ানশি বাংলাদেশ। এ প্রতিষ্ঠানের প্রাথমিক সদস্যপদ পাওয়া প্রত্যেক ব্যক্তিই নিজেকে কোম্পানির ‘ডিস্ট্রিবিউটর’ বলে পরিচয় দিচ্ছেন। অনুষ্ঠান চলাকালে পুরো মিলনায়তনটি ডিস্ট্রিবিউটরে ঠাসা ছিল। মিলনায়তনের দরজায় চেয়ার-টেবিল নিয়ে তাদের লোক বসানো ছিল। সেখান থেকে টিকিট নিয়ে ভেতরে ঢোকার ব্যবস্থা ছিল। বাইরে দাঁড়িয়ে কথা হয় একজন ডিস্ট্রিবিউটরের সঙ্গে। তাঁদের এই কার্যক্রম ডেসটিনির মতোই কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিক্রয়পদ্ধতি ডেসটিনির মতোই। কিন্তু ডেসটিনির নিজের কোনো ‘প্রোডাক্ট’ ছিল না। তাঁদের প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব প্রোডাক্ট রয়েছে।
কথা হলো আরও কয়েকজনের সঙ্গে। তাঁদের ভাষ্য অনুযায়ী, তাঁদের সব হিসাব হয় ডলারে। প্রথম অবস্থায় একজকে ২৬ ডলার বিনিয়োগ করে ডিস্ট্রিবিউটর হতে হয়। সেই সঙ্গে দুই কপি ছবি ও জাতীয় পরিচয়পত্র অথবা জন্মসনদের ফটোকপি জমা দিতে হয়। তাঁদের হিসাবে ২৬ ডলারে হয় ২ হাজার ৫৬ টাকা। এর মধ্যে থাকে ৬৩৩ টাকার কোম্পানির প্রোফাইল, সিডি, আইডি, ডায়রি ও লাইসেন্স ইত্যাদি। বাকি ১ হাজার ৪২৩ টাকার পণ্য ধরিয়ে দেওয়া হয়। এই পণ্য নিজে ব্যবহার করতে হবে। এ অবস্থায় তাঁর ‘স্ট্যাটাস’ হচ্ছে ‘ওয়ান স্টার’। এর পরে স্ট্যাটাস বাড়াতে হলে তাঁকে ১০০ ডলারের পণ্য কিনতে হবে। এই পণ্য কেনার সময় তাঁকে ৫ শতাংশ কমিশন দেওয়া হবে। এই পণ্য তিনি বাইরে বিক্রি করতে পারেন। এই পর্যায়ে তাঁর স্ট্যাটাস হলো ‘টু স্টারস’। এরপর স্ট্যাটাস বাড়াতে হলে তাঁকে নিজে ৩০০ ডলারের পণ্য কিনতে হবে। এ জন্য কমিশন দেওয়া হবে ২০ শতাংশ। এই পর্যায়ে তাঁর স্ট্যাটাস হবে ‘থ্রি স্টারস’। এরপর আর নিজে পণ্য কিনলেও তাঁর স্ট্যাটাস বাড়বে না। তাঁকে তাঁর অধীনে আরও চারজন ডিস্ট্রিবিউটর জোগাড় করতে হবে। এই চারজনের প্রত্যেককেই ৩০০ ডলারের পণ্য কিনতে হবে। এই চারজনের পণ্যের ওপর তাঁকে ৪ শতাংশ কমিশন দেওয়া হবে। এই পর্যায়ে তাঁর স্ট্যাটাস হবে ‘ফোর স্টারস’।
৯ জুন দুপুরে প্রতিষ্ঠানটির কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, চার কক্ষের কার্যালয়ের একটিতে কিছুই নেই। অপর তিনটিতে আসবাব রয়েছে। আলমারিতে কিছু পণ্য রাখা হয়েছে। একটি কক্ষে এক তরুণী ও অপর একটি কক্ষে এক ব্যক্তিকে পাওয়া গেল। তিনি তাঁর নাম বলতে চাননি। বলেছেন, এখানে তাঁকে সবাই ‘স্বপন স্যার’ জানেন। তিনি একটি বেসরকারি কলেজের রসায়ন বিভাগের শিক্ষক। তিনি বলেন, তিনি এই কোম্পানির একজন ডিস্ট্রিবিউটর। সারা দেশে কোনো এমএলএম কোম্পানির অনুমোদন নেই। আপনাদের কোম্পানি কীভাবে চলছে, জানতে চাইলে তিনি বলেন, তাঁদের লাইসেন্স আছে। জানামতে, সারা দেশে মাত্র চারটি কোম্পানির লাইসেন্স ছিল। তা-ও আর নবায়ন করা হয়নি। এর জবাবে তিনি বলেন, আদালতের ‘স্টে অর্ডার’ নিয়ে তাঁরা চালাচ্ছেন।
গত সোমবার বিকেলে রাজশাহী কার্যালয়ের ডিস্ট্রিবিউটর ও কনসালট্যান্ট রুহুল আমিন চৌধুরীর সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, তাঁরা এমএলএম বোঝেন না। তাঁরা তাঁদের প্রতিষ্ঠানের পণ্য বিক্রি করবেন। সরকার মনে করলে বন্ধ করে দেবে।