গিয়ান বিবেক থাকা চাই

দিনাজপুরের তারগাঁও-উপরপরিতে মাটিকাঁপা দেওয়ানি পালা
দিনাজপুরের তারগাঁও-উপরপরিতে মাটিকাঁপা দেওয়ানি পালা

দিনাজপুরের তারগাঁও-উপরপরিতে পৌঁছেই জানতে পারি, স্থানটি বোচাগঞ্জ, বিরল ও কাহারোল নামের তিনটি উপজেলার সঙ্গমস্থল। ত্রিধারার মিলনস্থল বলেই হয়তো সেখানকার মানুষগুলোকে খুবই রহস্যময়, লাজুক ও আত্মগোপনকারী বলে মনে হয়। কেননা, দিনাজপুরের নাট্যকার ও গবেষক টিটো রেদওয়ানের সহযোগিতায় তারগাঁও-উপরপরির পার্শ্ববর্তী গ্রাম পশ্চিম সুলতানের ভাবোরদিঘি বাজারে সাক্ষাৎ পাই প্রায় অর্ধশত বছর বয়সী মঙ্গলুচন্দ্র রায়ের, আলাপের প্রাথমিক পর্বে মানুষটি স্বীকারই করতে চাননি যে তিনি লেখাপড়া জানেন; উল্টো আমাদের দিকেই প্রশ্ন ছুড়ে দেন, ‘লেখাপড়া জানব কী করে? কোনোদিন স্কুলে যাবারই তো সুযোগ পাই নাই। তবে মজার ব্যাপার হলো—কোনোদিন স্কুলে না গেলেও আমার এখনকার পেশা কিন্তু মাস্টারি, আমি বহু দিন থেকেই মারাঘোরার মাস্টারি করি।’
মঙ্গলুচন্দ্র রায়ের কথাগুলো খুব রহস্যময় ঠেকে। জানতে চাই, ‘“মাস্টারি” শব্দটি তো বুঝলাম, কিন্তু “মারাঘোরা” আসলে কী?’
উত্তরে বললেন, ‘মারাঘোরা বোঝেন না! তাহলে “বান্ধানীগান” বোঝেন? আসলে, আমাদের এলাকায় যাকে মারাঘোরা বলে, তাকেই আবার কেউ কেউ বলে বান্ধানীগান।’
টিটো রেদওয়ানকে জিজ্ঞাসা করি, ব্যাপারটা কী? আপনি না আমাকে ‘পালাটিয়া’ দেখাতে এই অঞ্চলে টেনে এনেছেন; এবং আগেই বলে রেখেছিলেন, এই এলাকার পালাটিয়ার প্রধান অভিনয়শিল্পী ও সংগঠক হলেন মঙ্গলুচন্দ্র রায়। কিন্তু তাঁর মুখে এ কী শুনছি! তিনি নাকি মারাঘোরার মাস্টার!
সবকিছু বুঝিয়ে বললেন টিটো, ‘আপনার সমস্যা বুঝেছি। আসলে, এখানকার মানুষ যাকে মারাঘোরা বা বান্ধানীগান বলেন, আমরা গবেষকেরা তার নাম দিয়েছি পালাটিয়া।’
গবেষকদের এ ধরনের কীর্তি আমাদের বেশ জানা আছে, এই যেমন বিদেশি ব্যালাডের অনুসরণে বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলের ‘কিচ্ছা’কে দীনেশ চন্দ্র সেন নাম দিয়েছিলেন ‘গীতিকা’। পরবর্তীকালের গবেষকেরা তাকে আবার ‘পালাগান’ হিসেবে অভিহিত করেছিলেন। অতএব, মারাঘোরা বা বান্ধানীগানকে পালাটিয়া নাম দেওয়াতে আমাদের মনে তেমন বিস্ময় জাগে না।
আমাদের কথোপকথনের মধ্যে মারাঘোরার মাস্টার মঙ্গলুচন্দ্র রায় বললেন, ‘আপনারা যা-ই বলেন না কেন, মারাঘোরাতে আমরা সমাজের মানুষের জীবনকে প্রকাশ করি। এই যদি আমি এ বছরের মারাঘোরার পালা মাটিকাঁপা দেওয়ানির কথা বলি, তাতে গ্রামের এক চেয়ারম্যানের চালাকির কথা আছে, আবার অভাবী ও অসুস্থ বাবার বিএ পাস করা সন্তানের বেকারত্বের কথা আছে; রয়েছে দারোগা-পুলিশের কথাও। আমাদের সমাজে যা প্রায় সব সময় ঘটে থাকে। কয়েক বছর পরপর আমরা মারাঘোরার নতুন পালা রচনা করি; একটা কথা জানবেন, আমরা যারা পালা রচনা করি—তাদের বলা হয় মারাঘোরার মাস্টার, যেমন আমি একজন মাস্টার, মানে বই-মাস্টার হিসেবে আমি মারাঘোরার আসরের জন্য মাটিকাঁপা দেওয়ানি পালাটি রচনা করেছি।’
তার মানে আপনি পালা রচনা করেন! কিন্তু আপনিই বললেন যে আপনি কখনো স্কুলে যাননি! তাহলে লেখেন কী করে?

মাটিকাঁপা দেওয়ানি পালার দৃশ্য
মাটিকাঁপা দেওয়ানি পালার দৃশ্য

প্রশ্নের কোনো উত্তর না দিয়ে মৃদু হাসেন তিনি। আর তাঁর ওই মাস্টারি বিশেষণ বা খেতাবটি ধাঁধায় ফেলে দেয় আমাদের। একপর্যায়ে মঙ্গলুচন্দ্র রায়ের আন্তরিকতায় মুগ্ধ হয়ে কইনগরের ঝোলঝলি পাড়ায় তাঁর বাড়িতে আতিথেয়তা গ্রহণ করি আমরা। তখন নিজের মাটিলেপা ঘরের বারান্দায় আমাদের একান্তে পেয়েই কি তিনি ভেঙে দিলেন তাঁর লেখাজোখার রহস্য? বললেন, ‘আমি স্কুলে যাইনি, তবে লেখাপড়া শিখেছি নিজের চেষ্টায়, একা একা। এভাবেই মারাঘোরার বই-মাস্টার হয়ে উঠেছি।’
এবার মঙ্গলুচন্দ্র রায়ের হাতে লেখা পালাটির পাণ্ডুলিপি দেখি আমরা। একসময় ওই পাণ্ডুলিপিটি হাতে নিয়ে অগ্রসর হতে থাকি আসরের দিকে।
আসর শুরুর আগে বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা কুশীলবদের কেউ কেউ নানা রঙে মুখমণ্ডল অলঙ্কিত করেন, চরিত্রানুযায়ী পরেন বিচিত্র পোশাক।
চারদিক দর্শকবেষ্টিত ভাবোরদিঘি বাজারের এক প্রান্তের খোলা স্থানে মাটিকাঁপা দেওয়ানি ও জালিমচোর-এর আসর বসে। এর সূচনায় কেন্দ্রে বসা বাদ্যযন্ত্রী দলের সদস্যরা হারমোনিয়াম, কর্নেট, করতাল-মন্দিরা ও তবলা-নালের সমন্বয়ে একটি গানের সুর-তাল তুলে কনসার্ট করেন কিছুক্ষণ। কনসার্ট শেষে চারজন কুশীলব আসরে এসে বাদ্যযন্ত্র ও বাদ্যযন্ত্রীদের প্রণাম করে চারদিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে আরম্ভ করেন বন্দনাগীত, ‘সৃষ্টিকর্তা তুমি নিরাঞ্জন/ চরণে করি হে প্রণাম।/ এসো মাতা সরস্বতী, করি মিনতি/ লজ্জা দিয়ো না তুমি। পূর্ব-পশ্চিম, উত্তর-দক্ষিণ/ করি আমরা বন্দনা/ প্রণাম করি যত দেবতা।/ এই আসরে গান শোনাব, নাম মাটিকাঁপা/ ভালোমন্দ শুনিবেন দশ বাবা।’ বন্দনাগীতের চার পুরুষ কুশীলবের মধ্যে তিনজন আসেন নারীর বেশ ধারণ করে।
এই গীতের সুর-তালের মায়ামোহের মধ্যে মঙ্গলুচন্দ্র রায়ের পাণ্ডুলিপিতে চোখ রাখি। দেখি, বানানরীতির ভিন্নতা ছাড়া কুশীলবদের গীতবাণীর সঙ্গে হাতে লেখা এ পাণ্ডুলিপির কোনো ফারাক নেই। তবে প্রথম দৃশ্যের অভিনয় শুরু হতেই পাণ্ডুলিপির সঙ্গে কোনো মিল খুঁজে পাই না। কারণ, সংলাপাত্মক অভিনয়াংশের কোনো হস্তলিখিত রূপ পাণ্ডুলিপিতে নেই। কিন্তু সংলাপাত্মক অভিনয়ের মধ্যে মধ্যে গীতবাণীর লিখিত রূপ প্রত্যক্ষ করা যায় পাণ্ডুলিপিতে। এতে আমরা সহসা চর্যাপদ-এ উদ্ধৃত বুদ্ধ নাটক সম্পর্কে গবেষকদের সেই সিদ্ধান্তের যৌক্তিকতা খুঁজে পাই—চর্যার পদ বা গানগুলো তো মূলত বুদ্ধ নাটকের আসরে মৌখিক বর্ণনা ও সংলাপের মধ্যে মধ্যে গীত হতো। আবার আমাদের মনে হয় সেই সব গবেষক-লেখকের গবেষণাকর্মের কথা, যাঁরা গ্রামীণ আসরে অভিনীত পালার হাতে লেখা পাণ্ডুলিপি অবলম্বনে গবেষণা ও সম্পাদনা করেন বা হস্তলিখিত পাণ্ডুলিপিকে নাট্যপালার অবিকৃত রূপ বলে ধারণা করেন। অনেক গবেষককে দেখেছি, মারাঘোরার (বা পালাটিয়ার) হাতে লেখা পাণ্ডুলিপি অবিকৃতভাবে গবেষণায় গ্রহণ করতে। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে লিখিত পালার মৌখিক উপস্থাপনা নিয়ে কোনো তুলনামূলক আলোচনা করেন না তাঁরা, ফলে ভ্রান্তির সৃষ্টি হয় মাঝেমধ্যে। মাটিকাঁপা দেওয়ানি পালার হস্তলিখিত পাণ্ডুলিপি ও তার মৌখিক উপস্থাপনা দেখে এ বিষয়টি আরও বিস্তৃত আকারে ধরা পড়ে আমাদের চোখে। উদাহরণ দিয়ে বিষয়টি পরিষ্কার করা যাক। যেমন মাটিকাঁপা দেওয়ানির হাতে লেখা পাণ্ডুলিপির প্রথম দৃশ্যের উদ্ধৃতি (বানানরীতি অবিকৃত রাখা হলো):
প্রথম দৃষ্য:
মাটিকাঁপার প্রবেশ: পড়ে শর্বনাশ ও গীত:
১। সবায় যানে তোগ চিনে চিনিবার বাকি নাই, ও তোর মতন মানুষ নাই।
চি: গটায় ঘুরেক ইউনিয়নটা মানুষের নাগা ঝগড়া, ফাকরি বইডাগিক ভিক্ষা দিসনা
সুতুরীর প্রবেশ ও গীত:
২। আহুকেতু শনি দিষ্টান সয়তানের না আরাম ও তোর নাই আল্লা ভগবান।
মাটিকাঁপার গীত:
চি: বিষ খাওয়া ফাসি নাগা বাচাই দিন
ভগবানটা মানুষ মোলে কথা কহে না।
সুতুরীর গীত:
চি: যার নাই ধর্ম তার অভাব কষ্ট, আশা হবে বার যাই।
গিয়ান বিবেক থাকা চাই।
(মাটিকাঁপা ও সর্বনাশ বন্ধুর বাড়ি যায়ার কথা বলিয়া প্রস্থান) পড়ে সুতুরী।
লক্ষণীয়, উপর্যুক্ত উদ্ধৃতিতে একজন স্বশিক্ষিত লেখক মঙ্গলুচন্দ্র রায়ের বানানরীতি প্রত্যক্ষ করা যাচ্ছে এবং একই সঙ্গে পালাতে কোনো সংলাপাত্মক অভিনয়ের লিখিতরূপ দেখা যাচ্ছে না। এবার যদি প্রথম দৃশ্যের অভিনয়ের ধারণকৃত ভিডিও চিত্রটি দেখি, তাহলে তাতে নিম্নরূপ অভিনয় ও সংলাপগীত প্রত্যক্ষ করা যায়:
বন্দনার পর আরেকটি জনপ্রিয় গানের কনসার্ট বেজে ওঠে, সেই কনসার্টের শেষে আসরে ‘হা হা হা’ হাস্যধ্বনি করে প্রবেশ করেন মাটিকাঁপা। তিনি একা একা বলেন, ‘আমি এবার ইলেকশনে দাঁড়াব। কিন্তু কে আমাকে ভোট দেবে? দেখি একবার সর্বনাশকে ডেকে সে কী বলে—
: সর্বনাশ, সর্বনাশ, সর্বনাশ।
: জি হুজুর।
দূর থেকে ‘জি হুজুর’ বলে দৌড়ে এসে সর্বনাশ চরিত্রটি আসরে প্রবেশ করে বলেন—
: আমায় কেন ডেকেছেন হুজুর?
: এই বল, আমি যদি চেয়ারম্যান ইলেকশনে দাঁড়াই লোকে আমায় ভোট দিবে?
: হ্যাঁ, ভোট দিবে।
: কেন ভোট দিবে ভেঙে বল?
এবার সর্বনাশ চরিত্র গীত-সংলাপে বলে ওঠেন—
সবাই জানে তোগ
চিনবার বাকি নাই
তোর মতন মানুষ নাই।
গীত থামিয়ে সর্বনাশ আবার যেন একই কথা গদ্য-সংলাপে বলেন—
: এই শোনেন মাটিকাঁপা, তোগে সবাই জানে, সবাই চিনে, তোগ চিনবার বাকি নাই, তোগে কেউ ভোট দিবে না! তুই ভোটে দাঁড়াস না।
: এই মাটিকাঁপা যেদিক দিয়ে যায়, আদাপ-নমস্কার কেই দেয় না। তার পরও আমি চেয়ারম্যানে দাঁড়াব। আর পুরাতন চেয়ারম্যান তো ভালো কাজ করছে, আমি কী করব? পুরাতন চেয়ারম্যান রাস্তাঘাট সব ভালো করে দিয়েছে। আমার একটাই প্রশ্ন, লোকে কেন আমায় ভালোবাসে না?
: তোরে কেন ভালোবাসে না, তুই কহেছু। (এই সংলাপের সাথে সর্বনাশ চরিত্র এবার গান ধরেন—)
গটায় ঘুরেক ইউনিয়নটা
মানুষের নাগাও ঝগড়া
ফকির বইডাগিক ভিক্ষা দিস না।
বলি ও মাটিকাঁপা মানুষের ঝগড়া থামাও, ফকিরকে দাও ভিক্ষা, তাহলে লোকে ভোট দিবে।
: না না, আমি ওই ফকিরবেটাকে ভিক্ষা-খয়রাত, দান-খয়রাত আমি করব না। আমি চেয়ারম্যান হতে চাই, কিন্তু কাউরে কিছু দিতে পারব না। তুই উপায় বলে দে।
: তাহলে তোমার উপায় আমি বলতে পারব না, সুতুরী বলতে পারে।
: ডাকো তাকেই।
মাটিকাঁপার আদেশমতো সর্বনাশ চিৎকার করে ডাকতে শুরু করেন—
: এই বৌদি, বৌদি।
সর্বনাশের চিৎকার শুনে নারীর বেশে পুরুষ অভিনয়শিল্পী সুতুরী আসরে প্রবেশ করেন এবং বলেন—
: এই কী হয়ছে, ডাকিস কেনে?
: মাটিকাঁপা ইলেকশনে দাঁড়াবে।
সর্বনাশের মুখে কথাটা শুনেই সুতুরী মাটিকাঁপার দিকে তাকিয়ে ‘ইয়া আল্লাহ’ বলে থুতু ফেলেন। তা দেখে মাটিকাঁপা উত্তেজিত হয়ে উঠে বলেন—
: থুতু ফেলিস না, আমিই চেয়ারম্যান হব।
: হতে পারবি তো?
: হ্যাঁ, হব।
এ কথা শুনে সুতুরী গানের সুরে বলেন—
আহুকেতু শনির দৃষ্টি
শয়তানের নাই আরাম
ও তোর নাই আল্লাহ ভগবান।
দেখ মাটিকাঁপা, যাঁর জন্য পৃথিবী সৃষ্টি হয়েছে তাঁকেই তুই মানিস না!
: আমি যা ইচ্ছা তা-ই করি, সব আমি করি, ভগবান করে না। আমি যাহা করি তা-ই হয়।
বিষ খাওয়া ফাঁসি নাগা বাঁচাউ দি
ভগবান মানুষ মলে কথা কহে না।
মানুষ মলে তো ভগবান কথা কহে না, আমি কথা কহে সান্ত্বনা দিই।
মাটিকাঁপার কথা শুনে সুতুরী তাকে গানে গানে স্মরণ করিয়ে দেন যে—
যার নাই ধর্ম তার অভাব কষ্ট
আশা হবে পরাজয়
গিয়ান বিবেক থাকা চাই।
সুতুরীর এই গানে উত্তেজিত হয়ে মাটিকাঁপা প্রথম দৃশ্য থেকে প্রস্থান করেন।
এভাবে মোট ২৭টি দৃশ্যের মৌখিক সংলাপ সৃষ্টির মাধ্যমে মাটিকাঁপা দেওয়ানি পালাটি সমাপ্ত হয়। সমসাময়িক কালের সামাজিক মানুষের বিচিত্র জিঘাংসা মূলত সংলাপাত্মক-গীতাভিনয় ও হাস্যরসের মাধ্যমে মারাঘোরার এক একটি আসরে অভিনীত পালাসমূহের ভেতর দিয়ে উপস্থাপিত হয়।
মাটিকাঁপা দেওয়ানির এ ধরনের আসর থেকে জানতে পারি, মঙ্গলুচন্দ্র রায়ের এই মারাঘোরা দলটি প্রায় অর্ধশত বছর আগে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন কইনগরের ঝড়ুরাম রায়, প্রতিষ্ঠানকালীন দলটি নালচিয়া গোঁসাই, ধেল্লি পাগলি প্রভৃতি পালা অভিনয় করে। ঝড়ুরাম রায়ের তিরোধানের পর দলপ্রধানের দায়িত্ব গ্রহণ করেন মঙ্গলুচন্দ্র রায়। তিনি জানান, দিনাজপুর জেলার বোচাগঞ্জ, বিরল ও কাহারোল অঞ্চলটি বহু ধরনের পরিবেশনাশিল্পে সমৃদ্ধ। এ অঞ্চলের পাহাড়পুর গ্রামে রামায়ণ ও কীর্তন গানের প্রসিদ্ধ দল আছে। এ ছাড়া, তারগাঁও গ্রামে সত্যপীরের গান, সুলতানপুর-বালিহারা-বিষ্ণুপুর প্রভৃতি গ্রামে কবিগান, কান্দেনা বিষহরির একাধিক দল রয়েছে। এ ধরনের তথ্য প্রাপ্তিতে গবেষণার বিচিত্র দুয়ার যেনবা আমাদের বারবার আহ্বান করে, দিনাজপুরের নিগূঢ় রহস্যভুবনে উঁকিঝুঁকি দিতে। কারণ, এর মধ্যেই আমাদের কাছে স্পষ্ট হয়েছে লেখ্য ও মৌখিক পাণ্ডুলিপির ভিন্নতা।