'বাস্তবতা আর কল্পনার ভেতর সেতুবন্ধ তৈরির চেষ্টা করেছি'

>এ বছর কথাসাহিত্য ও প্রবন্ধে বাংলা একাডেমি পুরস্কার পেয়েছেন শাহাদুজ্জামান ও মোরশেদ শফিউল হাসান। এই দুই লেখকের সাক্ষাৎকার দিয়ে সাজানো হলো এই সংখ্যা
শাহাদুজ্জামান। ছবি: খালেদ সরকার
শাহাদুজ্জামান। ছবি: খালেদ সরকার

মাসউদুল হক: এ বছর কথাসাহিত্যে বাংলা একাডেমি পুরস্কার পেলেন আপনি। পুরস্কারপ্রাপ্তিতে আপনার প্রতিক্রিয়া জানার মধ্য দিয়ে কথা শুরু হোক।
শাহাদুজ্জামান: যে কাজটা আমি শ্রম ও ভালোবাসা দিয়ে নিরন্তর করি, তার জন্য বাংলা একাডেমি যে আমাকে পুরস্কৃত করেছে তাতে আমি আনন্দিত। আমার লেখাকে সম্মানিত করার মাধ্যমে আমার পাঠক-পাঠিকারাও সম্মানিত হলেন।
মাসউদ: গত শতকের আশির দশকের মাঝামাঝি থেকে লিখতে শুরু করেছেন আপনি। প্রায় তিন দশক ধরে লেখালেখি করছেন। এই সময়ে দাঁড়িয়ে আপনার লেখালেখির অভিযাত্রাকে কীভাবে দেখেন?
শাহাদুজ্জামান: বলা যায় কৈশোরেই সাহিত্যের একটা ঘোর লেগেছিল আমার। বাবা-মা দুজনেই সাহিত্যানুরাগী। পারিবারিক লাইব্রেরি ছিল আমাদের। নানা রকম বইপত্রের ভেতর বড় হয়েছি। সেই ছেলেবেলাতেই দেখেছি, সাহিত্যের ভেতর দিয়ে জীবনের দিকে তাকালে জীবনটা রহস্যময়, মায়াবী হয়ে ওঠে। সাহিত্য আমাকে জীবনের ব্যাপারে আরও কৌতূহলী করেছে। লেখালেখি করব এমন কোনো ভাবনা কখনো ছিল না। আধা সামরিক বিদ্যালয় ক্যাডেট কলেজে পড়েছি, পরবর্তী সময়ে ডাক্তারি পড়েছি, ডাক্তার হিসেবে গ্রামগঞ্জে ঘুরেছি, বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি করতে গিয়েছি, কিন্তু সাহিত্যের ঘোর আমাকে ছাড়েনি। বাস্তবতা আর কল্পনার ভেতর ছোটাছুটি করেছি। কপালকুণ্ডলার সেই প্রশ্ন, ‘পথিক তুমি কি পথ হারাইয়াছ?’ কানে বেজেছে আমার। পথ হারিয়েছি অনেকবার, সাহিত্য আমাকে পথ দেখিয়েছে। জীবন যাপন করতে গিয়ে যেসব প্রশ্ন, কৌতূহল ও দ্বিধার ভেতর দিয়ে গিয়েছি, সেগুলো মোকাবিলা করতেই একসময় শুরু করেছি লেখালেখি। লেখালেখির ভেতর দিয়ে দ্বিতীয় জীবন তৈরি করে বাস্তবতা আর কল্পনার ভেতর একটা সেতুবন্ধ তৈরির চেষ্টা করেছি। তিন দশক ধরে নানা বিষয়ে অবিরাম লিখে আমি আসলে নিজে যে জীবনটা যাপন করছি, তাকেই আবার বুঝে ওঠার চেষ্টা করছি। পরে খানিকটা বিস্ময়ের সঙ্গেই একসময় আবিষ্কার করেছি, আমার এই ব্যক্তিগত অভিযাত্রায় সঙ্গী হয়েছেন অনেক পাঠক-পাঠিকা। তাঁরা আগ্রহের সঙ্গে পড়ছেন আমার লেখা এবং সেই লেখাকে তাঁদের জীবনের জন্য প্রয়োজনীয়ও মনে করছেন। আমার জন্য এটা ভীষণ অনুপ্রেরণার।
মাসউদ: অনুবাদ ও প্রবন্ধ দিয়ে শুরু করেছিলেন লেখালেখি। পরবর্তী সময়ে মনোনিবেশ করলেন কথাসাহিত্যে—গল্প ও উপন্যাসে। লেখালেখিতে মাধ্যমের এই রূপান্তরের কারণ কী?
শাহাদুজ্জামান: আশির দশকের মাঝামাঝি ছাত্রাবস্থায় একাধারে রাজনীতি ও সংস্কৃতির নানা কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিলাম। সে সময় রাজনীতি ও শিল্প-সাহিত্যের আন্তসম্পর্কটি বোঝার জন্য উদ্গ্রীব হয়ে উঠি। বিষয়টা নিয়ে বিভিন্ন ইংরেজি প্রবন্ধ পড়ছিলাম তখন। লেখাগুলো নিংড়ে পড়তে এবং অন্যদের সঙ্গে ভাগাভাগি করে নেওয়ার ভাবনা থেকে প্রথমে অনুবাদ শুরু করি। পরবর্তী সময়ে নিজেই মূলত শিল্প-সিহত্য ও রাজনীতিবিষয়ক নানা প্রবন্ধ লিখতে শুরু করি। একপর্যায়ে এসে অনুভব করলাম, নিত্যদিনের সুখ-দুঃখ আর প্রেম-সংশয়ের যে অভিজ্ঞতাগুলো হচ্ছে, সেগুলো অন্যের লেখা অনুবাদ করে কিংবা প্রবন্ধ লিখে আর ধরা যাচ্ছে না। এই ভাবনা থেকেই আমার গল্প-উপন্যাস লেখার শুরু।
মাসউদ: আপনার গল্প-উপন্যাস এমনকি অনেক অনুবাদকর্মেও নজরে পড়ে মার্ক্সীয় দর্শন এবং সমাজতান্ত্রিক ভাবধারার প্রতি অনুরাগ। লেখকের জন্য রাজনৈতিক মতাদর্শ অনুসরণ করা কতটা জরুরি?
শাহাদুজ্জামান: আশির দশকে যখন লেখালেখি শুরু করেছি, তখন পৃথিবী পুঁজিবাদী আর সমাজতান্ত্রিক—এ দুই শিবিরে বিভক্ত। সে সময় তৃতীয় বিশ্বের একজন বিবেচক তরুণের জন্য একটা বৈষম্যহীন সমাজতান্ত্রিক সমাজের স্বপ্ন দেখা ছিল স্বাভাবিক প্রবণতা। আমিও সে সময় মার্ক্সীয় দর্শন দিয়ে আকৃষ্ট হয়েছি। আমার প্রথম দিককার লেখাপত্রে এর প্রভাব আছে। পরবর্তী সময়ে বিশ্বপরিস্থিতি বদলেছে, সমাজতান্ত্রিক সমাজ নানা ভাঙচুরের অভিজ্ঞতার ভেতর দিয়ে গেছে। এখন বাস্তবতাকে নতুন করে বুঝে নেওয়ার প্রয়োজন আছে। একটা বৈষম্যহীন, ন্যায্য সমাজের আকাঙ্ক্ষা থেকে সরে আসার তো কোনো কারণ নেই। তবে তেমন সমাজ তৈরির পথ নিয়ে আরও ভাবার আছে। মার্ক্সবাদের অনেক যন্ত্রিক প্রয়োগ হয়েছে। আমাদের স্থানিক অভিজ্ঞতাগুলোকে আরও নিবিড়ভাবে বোঝার দরকার এখন। বিশেষ রাজনৈতিক মতাদর্শ অনুসরণ করা লেখকের জন্য জরুরি না, তবে লেখকের অবশ্যই একটা রাজনৈতিক বিশ্ববীক্ষা থাকা দরকার।
মাসউদ: গল্প-উপন্যাস ছাড়াও ভ্রমণকাহিনি লিখেছেন আপনি। চলচ্চিত্র নিয়ে আপনার বই আছে। নাটক ও চিত্রকলার ওপরও লিখেছেন। শিল্প-সংস্কৃতির নানা মাধ্যমে বিচরণ আপনার কথাসাহিত্যিক সত্তায় কতটা প্রভাব ফেলেছে বলে মনে করেন?
শাহাদুজ্জামান: লেখালেখি শুরু করার আগে শিল্প-সাহিত্যের নানা শাখায় সক্রিয় ছিলাম আমি। যুক্ত ছিলাম চলচ্চিত্র সংসদ আন্দোলনে, গ্রুপ থিয়েটারে, সংগীতের চর্চা করেছি, ছিলাম চিত্রকলা দলের সঙ্গে। ফলে আমার একটা বহুমাত্রিক আগ্রহ রয়েছে বরাবর। নানা মাধ্যমে আমার এই সংশ্লিষ্টতা অবশ্যই আমার লেখায় প্রভাব ফেলেছে। আমার গল্প-উপন্যাসে চলচ্চিত্র, নাটক বা চিত্রকলার লক্ষণ পাওয়া যাবে। এমনকি আমার গল্প বা উপন্যাসের ভেতর আমি কবিতা, প্রবন্ধ বা গবেষণার উপাদান মিলিয়ে দিতে পছন্দ করি। ফলে আমার গল্প-উপন্যাসগুলোকে প্রচলিত সংজ্ঞায় ফেলা প্রায়ই সমস্যাজনক হয়ে ওঠে। আমার লেখাকে অনেক সময় ‘ডকু ফিকশন’ বা ‘মেটাফিকশন’ হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে। তবে বিশেষ কোনো ‘ক্যাটাগরি’ বা বিভাগের বদলে আমার লেখাগুলোকে আমি বরং ‘সাহিত্যকর্ম’ হিসেবেই দেখি, যাতে হয়তো সাহিত্যের নানা শাখা দেয়াল ভেঙে ঢুকে পড়েছে। বিশ্ব প্রেক্ষাপটেও তো সাহিত্যের সংজ্ঞা ক্রমশ বিস্তৃত হচ্ছে। বেলারুশের সাংবাদিক লেখিকা স্ভেতলনা আলেক্সিয়েভিচ বা গীতিকার বব ডিলানের সাহিত্যে নোবেল পাওয়া তার ইঙ্গিত দেয়।
মাসউদ: সম্প্রতি একজন কমলালেবু নামে একটি বই বের হয়েছে আপনার। বইটির কেন্দ্রে আছেন কবি জীবনানন্দ দাশ। এই বই উপন্যাস কি উপন্যাস নয়—এ নিয়ে তর্ক শুরু হয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতে। কেউ কেউ বলছেন, ফিকশন বা উপন্যাসের প্রধান শর্ত হলো কল্পনা; সেটি এই বইতে নেই। এ বিষয়ে আপনার মত জানতে চাই।
শাহাদুজ্জামান: আগেই বলেছি, আমার লেখায় সাহিত্যের নানা শাখার স্বভাব একত্রে এসে জড়ো হয় বলে এর ‘ক্যাটাগোরাইজেশন’ বা শ্রেণীকরণ অনেক ক্ষেত্রে সমস্যার জন্ম দেয়। এ বইয়ের ক্ষেত্রেও তা-ই হয়েছে। আমার মনে হয়, ‘উপন্যাসের প্রধান শর্ত’ এই ধারণাটি মীমাংসিত কোনো বিষয় নয়। উপন্যাস মাধ্যমটির বয়সই তো মাত্র কয়েক শতক, এর আগে উপন্যাস বলে কোনো ব্যাপার ছিল না। উপন্যাসের চরিত্রও কালে কালে বদলেছে। একসময় ইউরোপীয় লেখকেরা ‘উপন্যাসের প্রধান শর্ত’ বলে কিছু বিষয়কে দাঁড় করিয়েছিলেন। কিন্তু লাতিন আমেরিকার ঔপন্যাসিকেরা উপন্যাসের ইউরোপীয় সেই শর্ত মানেননি। আবার চেক লেখক মিলান কুন্ডেরা বলছেন, নতুন যুগের উপন্যাসের মূল কাজ হচ্ছে ‘ডিসকভারি অব প্রোজ’ বা গদ্যের নব আবিষ্কার। প্যারিস রিভিউ পত্রিকার এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলছেন, উপন্যাসের আছে ‘...tremendous synthetic power, that it could be poetry, fantasy, philosophy, aphorism, and essay all rolled into one. ’ (‘...একটি অসাধারণ সংশ্লেষি ক্ষমতা। এটা হতে পারে কবিতা, কল্পকাহিনি, দর্শন, প্রবন্ধ ও নীতিবাক্যের একটা মিশ্রণ’। ) কুন্ডেরা উপন্যাসের কোনো নির্দিষ্ট শর্তের বদলে সেখানে জ্ঞানকাণ্ড, রসকাণ্ডের সব শাখাকে মিলিয়ে ফেলার কথা বলছেন। উপন্যাসের সংজ্ঞাকে উন্মুক্ত রাখছেন। উপন্যাসে কল্পনা প্রধান শর্ত কি না, কল্পনা বলতে ঠিক কী বোঝানো হচ্ছে—এসব প্রশ্নসাপেক্ষ। একজন কমলালেবু বইটিতে সচেতন সিদ্ধান্তে আমি কোনো কাল্পনিক চরিত্র রাখিনি। আমার ঘনিষ্ঠজনেরা জানেন, বইটির প্রথম ড্রাফটে তেমন চরিত্র ছিল। কিন্তু বইটি লেখার উদ্দেশ্যের সঙ্গে সংগতি রেখে পরবর্তীকালে তা বাতিল করেছি এবং ঘটনা, চরিত্র যতটা সম্ভব বাস্তবঘনিষ্ঠ রেখেছি। কিন্তু কল্পনা ছাড়া বইটি কী করে লেখা সম্ভব হতো আমার জানা নেই। জীবনানন্দের জীবনের সৃষ্টিশীল প্রজ্ঞার যে দুরূহ যাত্রা, তাকে ধরতে গিয়ে তাঁর কবিতা, গল্প, ডায়েরি, প্রবন্ধ, চিঠি, বক্তৃতা—একটির সঙ্গে আরেকটিকে বোনার চেষ্টা করেছি কল্পনার সুতায়। জীবনানন্দের জটিল, সর্পিল জীবনযাত্রার আলো-অন্ধকারকে ছায়ার মতো অনুসরণ করতে গিয়ে তাঁর জীবনের অনেক মুহূর্ত ও পরিস্থিতিকে কল্পনা করে নিতে হয়েছে। জীবনানন্দের জীবনের তথ্যনির্ভর বস্তুনিষ্ঠ একটি জীবনী লিখব এমন কোনো ভাবনা থেকে বইটি লিখতে শুরু করিনি। সে কাজটি ভালোভাবেই করেছেন প্রভাতকুমার দাশ বা ক্লিনটন বুথ সিলি। একজন কমলালেবু জীবনানন্দকে নিয়ে আমার একান্ত ব্যক্তিগত একটি যাত্রার বয়ান। এটি একজন ক্ষুদ্র সৃজনশীল মানুষের অন্য এক মহান সৃজনশীল মানুষকে মোকাবিলা করার ইতিবৃত্ত। আমার নিজের লেখক সত্তার পথ পরিক্রমার এই পর্যায়ে এসে এই বইটি লেখার পেছনে একটা ‘সাবজেক্টিভ’ (বিষয়ভিত্তিক) মাত্রা আছে। এখানে আমি নিজে একজন অদৃশ্য চরিত্র। উপন্যাস বস্তুত একটি বিশেষ পাঠ অভিজ্ঞতা। একজন কমলালেবু বইটির যে কম্পোজিশন, সেটা অনেক পাঠক-পাঠিকা উপন্যাস হিসেবেই পাঠ করেছেন, তা অনলাইনের সেই বিতর্কের ভেতরই আমি লক্ষ করেছি। তাঁরা উপন্যাসের প্রচলিত সংজ্ঞাকে প্রসারিত করে নিয়েছেন। তবে আমি মনে করি, বইটি উপন্যাস কি উপন্যাস নয়—এ প্রশ্নের চেয়েও জরুরি আজকের পৃথিবীতে জীবনাননন্দকে আমি কেন প্রবলভাবে প্রাসঙ্গিক ভাবছি সেই প্রশ্নটি।
মাসউদ: অসাধারণ কিছু অনুবাদ, গবেষণা ও প্রবন্ধের বই থাকার পরও আপনি আস্তে আস্তে কথাসাহিত্যিক হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠছেন। কথাসাহিত্যিক হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠায় আপনার এই কাজগুলো আড়ালে চলে যেতে পারে কি?
শাহাদুজ্জামান: আগেই বলেছি, আমি লিখি জীবনের নানা প্রশ্ন ও কৌতূহলতাড়িত হয়ে। কোনো একটা ভাবনা করোটিতে বহন করে বেড়াই, তারপর একসময় কোনো একটা লেখার ভেতর দিয়ে সেই ভাবনার ভারমুক্ত হওয়ার চেষ্টা করি। কোনো ভাবনা প্রকাশ করি গল্পে, কোনোটা প্রবন্ধে, কোনোটা আবার উপন্যাসে বা পত্রিকার কলামে। আমি আসলে গল্পকার, ঔপন্যাসিক, প্রাবন্ধিক, কলাম লেখক—এমন বিশেষ একটি পরিচয় তৈরির কথা কখনো ভাবিনি। যে ভাবনার জন্য যে মাধ্যমটা উপযুক্ত, তাকে বেছে নিয়েছি। আমার অনেক পাঠক-পাঠিকা আছেন, আমাকে তাঁরা শুধু ক্রাচের কর্নেল বইটির লেখক হিসেবে জানেন। আবার অনেকে আমাকে মূলত গল্পকার হিসেবেই পাঠ করতে চান। অন্যদিকে অনেক পাঠককে পেয়েছি, যাঁরা আমাকে কেবল পত্রিকার কলাম লেখক হিসেবে জানেন। আমার সাক্ষাৎকারগ্রন্থ কথা পরম্পরা বা অনুবাদ সমগ্র-এর একটি নির্দিষ্ট পাঠকগোষ্ঠী আছে। আবার ধরুন হাসপাতাল নিয়ে আমার চিকিৎসা নৃবিজ্ঞানের বইটি কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত আছে। আমার বিবিধ লেখালেখির যদি পৃথক ধরনের পাঠক-পাঠিকা থাকেন, তাতে আমি বিশেষ সমস্যা দেখি না।
মাসউদ: ব্রিটেনের গ্লাসগো বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা ও অধ্যাপনা করছেন আপনি। এ ধরনের বড় একাডেমিক দায়িত্বের পাশাপাশি সক্রিয় আছেন নানামাত্রিক লেখালেখিতে। পরস্পরের ভেতরে ভারসাম্য রাখেন কেমন করে?
শাহাদুজ্জামান: এ দুই জীবনের ভারসাম্য রাখাটা খুবই কঠিন, দড়ির ওপর চলার মতন ব্যাপার। জীবন-জীবিকা, সংসার মেলাতে অনেক টানাপোড়েনের ভেতর দিয়ে যেতে হয়। এ ক্ষেত্রে আমার স্ত্রী ড. পাপড়ীন নাহার—যে নিজেও একজন একাডেমিক গবেষক ও সাহিত্যানুরাগী—যদি আমার পাশে না থাকত, তবে এই ভারসাম্য রক্ষা করা আমার পক্ষে দুরূহই হতো। জীবনানন্দ যাকে বলেছেন ‘কারুবাসনা’, তার লোভে এক জীবনে অনেক জীবন যাপনের সাধ হয়। তাই কঠিন হলেও একাধারে কয়েকটা জীবন যাপন করি। আল বেরুনীর একটা কথা আমাকে খুব টানে। তিনি বলেছিলেন, বিধাতা তুমি আমাকে দীর্ঘ জীবন দিয়ো না, বরং বিস্তৃত জীবন দাও।