জার্মানিতে ব্যতিক্রমী এক প্রদর্শনী

জার্মানির হ্যানোভার শহরে ‘নতুন শিকড়’ প্রদর্শনীতে দর্শকদের ভিড়
জার্মানির হ্যানোভার শহরে ‘নতুন শিকড়’ প্রদর্শনীতে দর্শকদের ভিড়

শহরের নাম হ্যানোভার। জার্মানির লোয়ার সাক্সেনি প্রদেশের রাজধানী এটি। ৭৭৫ বছরের পুরোনো এই শহরের অধিবাসী ৫ লাখ ৫০ হাজার। এর মধ্যে প্রায় ৭৫ হাজারই অভিবাসী। অর্থাৎ এখানে বসবাস করছে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের ১০০-এর বেশি দেশ ও নানা সংস্কৃতির মানুষ।

কিন্তু বলা নেই কওয়া নেই, হঠাৎ জার্মানির লোয়ার সাক্সেনি প্রদেশের প্রসঙ্গ উঠছে কেন?

ঘটনা হলো, লোয়ার সাক্সেনি প্রদেশের সরকার এবং প্রদেশে অভিবাসীদের আন্তসাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো যৌথভাবে উদ্যোগ নিয়েছে একটি প্রদর্শনীর। ‘নতুন শিকড়’ নামে গত ৪ জুন শুরু হওয়া এই ব্যতিক্রমী প্রদর্শনীটি মূলত অভিবাসীদের—অংশ নিয়েছেন ২৯ জন অভিবাসী। অংশগ্রহণকারী হিসেবে এখানে আছে বাংলাদেশও। কেননা, বাংলাদেশি অভিবাসী সরাফ আহমেদের ছবি স্থান পেয়েছে এখানে।

লোয়ার সাক্সনি রাজ্যের রাজধানী হ্যানোভার শহরে রানি ভিক্টোরিয়ার বংশধরদের ঐতিহ্যবাহী যে সুউচ্চ রাজবাড়ি, সেটি এখন হ্যানোভারের টাউন হল। প্রদর্শনীটি চলছে ওই ভবনের নিচতলার বিশাল মিলনায়তনে। তবে সেখানে শুধু কি ছবির প্রদর্শনী চলছে? স্থান পেয়েছে অভিবাসী শিল্পীদের জীবনসংগ্রামের কাহিনিও। এই প্রদর্শনীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন প্রদেশের সংস্কৃতিমন্ত্রী গাব্রিয়েলে হায়নে চিলিক এবং হ্যানোভার শহরের মেয়র স্টেফান সস্টক।

বাংলাদেশ ছাড়াও ‘নতুন শিকড়’ প্রদর্শনীতে আছে ক্যামেরুন, মেক্সিকো, ইরান, তুরস্ক, কসোভো, থাইল্যান্ড, ভারত, মরক্কো, ইউক্রেন, জিম্বাবুয়ে, সিরিয়া, পোল্যান্ড, পেরু, আফগানিস্তান, ভিয়েতনাম, জর্জিয়া, ইরাক, আর্মেনিয়া, রাশিয়া, রোমানিয়া, ঘানা, আজারবাইজান, নাইজেরিয়া প্রভৃতি দেশের অভিবাসীদের ছবি। ছবির সঙ্গে রয়েছে তাঁদের জীবনবৃত্তান্ত এবং জার্মানির স্ব-স্ব ক্ষেত্রে তাঁদের গৌরবগাঁথার কাহিনি।

নিজের জন্মভূমি থেকে দূর প্রবাসে এসে কীভাবে সংগ্রাম করে নিজেদের জীবনকে এগিয়ে নিচ্ছেন এসব অভিবাসী, আলোচ্য প্রদর্শনীর ছবিতে বলা হয়েছে সেই গল্প। যেমন বাংলাদেশের সরাফ আহমেদের ছবিতে পাওয়া যায় তাঁর জীবনসংগ্রামের ইতিবৃত্ত। জার্মানির হ্যানোভার শহরে ৩০ বছরের বেশি সময় ধরে বাস করা সরাফ এ দেশে এসেছিলেন ১৯৮৫ সালে। লোয়ার সাক্সেনি প্রদেশের অধীনে একটি স্কুলে চাকরি করছেন ৪০ বছর। পাশাপাশি জার্মানিতে আন্তসাংস্কৃতিক সমাজ বিনির্মাণ, মানবাধিকার ও বাংলাদেশ-বিষয়ক নানা কার্যক্রমেও জড়িত আছেন তিনি। তাঁর স্ত্রী লিপি আহমেদ হ্যানোভারের একটি অভিবাসী ও শরণার্থী-বিষয়ক কেন্দ্রের পরিচালক; আর একমাত্র মেয়ে পিয়া নন্দিতা আহমেদ পড়াশোনা করছেন রাষ্ট্রবিজ্ঞানে।

সরাফের মতো অন্য শিল্পীদের জীবন আর জীবনসংগ্রামের আখ্যানও উঠে এসেছে ছবিগুলোর পরতে পরতে।

প্রদর্শনীর সঙ্গে বের হয়েছে একটি স্মারক-পুস্তক। যার মধ্যে রয়েছে অংশ নেওয়া ২৯ অভিবাসীর সাক্ষাৎকার ও ছবি। অভিবাসীদের সাক্ষাৎকারগুলো নিয়েছেন ক্যাথরিনা সিকম্যান, ছবি তুলেছেন মিশা নয়েগেবার।

 হ্যানোভার শহরের পর এটি ধারাবাহিকভাবে প্রদেশের বিভিন্ন শহরে প্রদর্শিত হবে বলে জানা গেছে।