দুপুরের কলমগুলো

দুপুর খুব অগোছালো মেয়ে। ওদের ঘরের প্রায় সব জিনিসপত্র ভাঙার অভিজ্ঞতাই দুপুরের হয়েছে। অন্যেরটা তো বটেই, সে নিজের জিনিসও ভাঙে। সবকিছুই সমানতালে ভেঙে দুপুরের দিনকাল চলছিল।

তো একদিন হলো কী, হঠাৎ করেই দুপুরের প্রতিনিয়ত কলম হারিয়ে যেতে লাগল। প্রতিদিন যে একটা করে হারায়, তা নয়। দু-তিনটা করেও হারায়। দুপুর পড়ল মহাদুশ্চিন্তায়। সে ভাবতে লাগল, কী হতে পারে কলম হারানোর রহস্য? অনেক ভেবেচিন্তেও সে কোনো কুলকিনারা খুঁজে পেল না। কী আর করবে বেচারি? কলম হারানোর দুঃখ নিয়ে সে প্রতিদিন নতুন নতুন কলম কিনতে লাগল।

এমনি করে কেটে গেল অনেক বছর। দুপুর শৈশব, কৈশোর, যৌবন পেরিয়ে এখন বৃদ্ধপ্রায়। বয়স প্রায় আশি। কলমের প্রয়োজন এখনো ফুরায়নি। এখনো প্রতিনিয়ত তার কলম হারাচ্ছে।

দুপুরের ছেলেমেয়ে বড় হয়েছে। বিয়ে করেছে। নাতি-নাতনি নিয়ে সুখেই কেটে যায় দাদি দুপুরের সময়। একদিন রাতে ঘটল এক আশ্চর্য ঘটনা।

দুপুরের হারানো সব কলম এক রাতে ফিরে এল! হারানো কলমগুলো একা নয়, তারা তাদের ছেলেমেয়ে-নাতিপুতি সবাইকে নিয়ে হাজির! যতগুলো কলম হারিয়েছিল, সব চার গুণ হয়ে ফিরে এসেছে। দুপুর যখন ক্লাস ফোরে পড়ত, তখন থেকে কলম হারানো শুরু। অর্থাৎ, ১০ বছর বয়স থেকে। পাটিগণিতের হিসাবে ব্যাপারটা এমন—

 ১ দিনে কলম হারায় ৩টি

অতএব, ৩৬৫ দিনে কলম হারায় ৩ x ৩৬৫ বা ১০৯৫টি।

দুপুর কলম হারিয়েছে মোট (৮০-১০) বা ৭০ বছর ধরে।

অতএব,

১ বছরে কলম হারায় ১০৯৫টি

৭০ বছরে কলম হারায় ১০৯৫ x ৭০ বা ৭৬৬৫০টি।

 কলমেরা তো আবার ছেলেমেয়ে, নাতি-নাতনি মিলে ৪ গুণ হয়ে ফিরে এসেছে।

অতএব ৭৬৬৫০টি কলমের ছেলেমেয়ে, নাতি-নাতনি মিলে তাদের সংখ্যা ৪ x ৭৬৬৫০ বা ৩০৬৬০০টি

 তো এবার ৩ লাখ ৬ হাজার ৬০০ কলম মিলে দুপুরকে বলল, ‘দুপুর, তুমি সেই ছোটবেলা থেকে আমাদের দিয়ে লিখেছ। তাই তুমি আমাদের ভালোবাসো কি না, সেটা পরীক্ষা করার জন্য আমরা তোমার সঙ্গে লুকোচুরি খেলতাম। ইচ্ছা করে ধরা দিতাম না। তবু তুমি আমাদের ওপর রাগ না করে বরং আমাদের ভালোবেসেছ। আমাদের দিয়ে লিখেছ তোমার পড়া। দরখাস্ত করেছ চাকরির জন্য। সই করেছ কত-না ফাইল! লিখেছ তোমার সংসারের হিসাব, প্রিয়জনের চিঠিপত্র এবং তোমার গত সত্তর বছরের জীবনের কথা। এবং আজও লিখে যাচ্ছ। আর তাই তোমায় আমরা খুব ভালোবেসে তোমার সঙ্গে থাকতে এসেছি। বিনিময়ে তোমাকে কিছু দিতেও এসেছি।’

দুপুর খুশি হয়ে জানতে চাইল, ‘কী?’

কলমেরা একসঙ্গে চিৎকার করে বলল, ‘আমাদের কালি!’

দুপুর ‘না’ বলার সুযোগও পেল না। সবগুলো কলম মিলে কালি ছড়াতে লাগল। সেদিন থেকে কলমের কালিতে কালিময় হয়ে উঠল দুপুরের শহর। আজও সেই শহরে কেউ জন্ম নিলে কলমেরা তাকে ভালোবেসে কালি মাখিয়ে দেয়। কালো ছাড়া অন্য কোনো রঙের মানুষ পাওয়া যায় না দুপুরের কালির শহরে।

 নবম শ্রেণি, টিঅ্যান্ডটি আদর্শ বালিকা উচ্চবিদ্যালয়, ঢাকা