গোয়েন্দা টিকটিকি ও হারানো ডিম

অলংকরণ: তুলি
অলংকরণ: তুলি

ককক কররর।
ডিম পেড়েই একটা হাঁক ছাড়ল করকরানি। হলুদ-কালোয় মেশানো মুরগি ও। ডিম পেড়েই পাখাদুটো টান টান করে আবার হাঁক ছাড়ল—কররর ককক।
উফ! এই ঠান্ডায় অমন চেঁচামেচি করছে কে?
ঘুলঘুলির ভেতর থেকে মাথা বের করে উঁকি দিল গোয়েন্দা। গোয়েন্দা টিকটিকি।

তখনই মা টিকটিকি ওর মাথাটা আবার টেনে ঢুকিয়ে দিল কাঁথার ভেতরে। বললেন, ‘শুয়ে থাক তো। এই সকালে খবরদার বাইরে যাবি না। ঠান্ডা লেগে যাবে। খুব শীত পড়েছে।’
সত্যি বেশ শীত পড়েছে। বাইরে তাকাল গোয়েন্দা টিকটিকি। এ কী! বাইরে একটা কাঁঠালগাছ আর একটা আমগাছ ছিল। নেই! একটা রাস্তাও ছিল। সেটাও নেই! রাস্তার ওপারে কয়েকটা উঁচু উঁচু ভবনও ছিল। সেগুলোও দেখছি বেমালুম হাওয়া! কিছুই দেখা যাচ্ছে না। কোথায় গেল ওসব?
ভাবতে লাগল গোয়েন্দা টিকটিকি। মা টিকটিকি বললেন, ‘আর যদি একবার কাঁথার ভেতর থেকে মাথা বের করেছিস তো...’
পুরো কথাটা শেষ করলেন না মা টিকটিকি। গোয়েন্দা টিকটিকি বলল, ‘তাহলে কী করবে মা?’
তখনই হঠাৎ হইচই চেঁচামেচি। ‘ক কক কক ক। কররর রররক। আমার ডিম কোথায়? আমার ছানা কোথায়? কক ক ক কক।’
করকরানির গলা। নিশ্চয়ই কিছু একটা হয়েছে। কখনো তো এভাবে চেঁচামেচি করে না করকরানি। এবার দেখতেই হয় কী হয়েছে।

আশপাশে তাকাল। মা নেই। নিশ্চয়ই রান্নাঘরে। ওর জন্য মশার স্যুপ বানাতে গেছেন।
চট করে গা থেকে কাঁথা সরিয়ে ফেলল গোয়েন্দা টিকটিকি। এক ঝটকায় উঠে বসল। তারপর পিল পিল করে এগিয়ে গেল করকরানির দিকে।
করকরানির চারপাশে ভিড় জমে গেছে। তিনটা মুরগি আর দুটো মোরগ। গোয়েন্দা টিকটিকিকে দেখে সবাই সরে জায়গা করে দিল। কেবল লাল ঝুঁটির মোরগটা জায়গা ছাড়ল না। কটমট করে তাকাল টিকটিকির দিকে।
বাকি সবাই বিড় বিড় করতে লাগল, ‘এই তো গোয়েন্দা টিকটিকি এসে গেছে। এবার নিশ্চয়ই করকরানির ডিম খুঁজে দেবে।’
করকরানির কাছে জানতে চাইল গোয়েন্দা টিকটিকি, ‘কেমন করে ডিম হারাল?’
কাঁদতে কাঁদতে করকরানি বলল, ‘ডিম নয়, ওটা আমার ছানা। আমার ছানাটাকে খুঁজে দাও।’

লাল ঝুঁটির মোরগ বলল, ‘ওটা তো ডিম, তুমি ছানা বলছ কেন?’
‘বা রে! ডিম ফুটে তো ছানাই হতো। আমি ওর নামও রেখেছি। ময়না। আমার ময়নাকে খুঁজে দাও গোয়েন্দা!’
আবার জানতে চাইল গোয়েন্দা টিকটিকি, ‘ডিম...থুক্কু তোমার ছানাটা কোথায় ছিল?’
‘এই যে এখানে।’ জায়গাটা দেখাল করকরানি। জায়গাটা একদম লাল ঝুঁটি মোরগের ডান পায়ের কাছে।
গোয়েন্দা বলল, ‘এখান থেকে নিশ্চয়ই কেউ ডিমটা সরিয়েছে। আচ্ছা, তুমি তখন কোথায় ছিলে?’
করকরানি বলল, ‘আমি গিয়েছিলাম খাবার খেতে। একটু খেয়েই ফিরে আসি। আর এসেই দেখি আমার ছানা নেই।’
বলেই কাঁদতে শুরু করল করকরানি।

‘কাউকে এখানে আসতে দেখেছ?’
কাঁদতে কাঁদতেই জবাব দিল করকরানি, ‘না।’
‘কাউকে বেরোতে দেখেছ?’
‘না।’

‘হুম।’ মাথা নাড়ল গোয়েন্দা। তারপর সবার মুখের দিকে তাকাল। বলল, ‘যেহেতু কেউ আসেওনি, বেরও হয়নি, তাহলে এখানকার কেউ সরিয়েছে। কে সরিয়েছে?’
গলা ফুলিয়ে আর ঝুঁটি টান টান করে লাল ঝুঁটির মোরগ বলল, ‘কে সরিয়েছে জানলে তো আমরাই ডিম খুঁজে বের করে ফেলতাম। তোমাকে আর দরকার ছিল না। ধ্যাত! কিসের গোয়েন্দা তুমি? ও রকম দু-চারটা গোয়েন্দা টিকটিকি আমি পেটে পুরে রাখতে পারি। দেখবে?’
বলেই বিশাল হা করল লাল ঝুঁটি। ভয় পেয়ে গেল গোয়েন্দা টিকটিকি। ভয় পেয়ে ঢুকে পড়ল খড়ের ভেতর। ওই খড়ের ওপরই ডিম পেড়েছিল করকরানি। আর ভেতরে ঢুকেই গোয়েন্দা টিকটিকি অবাক! আরে! ওটা কী?

তখনই মুখে হাসি ফুটে উঠল গোয়েন্দা টিকটিকির। ওটাই তো করকরানির ডিম। খড়ের ভেতর ঢুকে গেছে।
এবার খড়ের ভেতর থেকে ডিমটাকে ধাক্কা মারতে লাগল গোয়েন্দা।
‘মারো ধাক্কা হেঁইও। মারো ধাক্কা হেঁইও।’
ধাক্কাতে ধাক্কাতে খড়ের ভেতর থেকে ডিমটা বের করে আনল গোয়েন্দা।
ডিম পেয়ে করকরানি তো মহাখুশি।
লাল ঝুঁটি বলল, ‘ডিমটা খড়ের ভেতর ঢুকল কী করে?’
জবাবটা গোয়েন্দা টিকটিকিই দিল, ‘করকরানির পায়ে লেগে ভেতরে ঢুকে যেতে পারে।’

প্রতিবাদ করে উঠল করকরানি, ‘উঁহু। আমি অতটা বেহুঁশ নই।’
গোয়েন্দা টিকটিকি বলল, ‘খুব শীত পড়েছে, তাই হয়তো ডিমটাও ওমের জন্য খড়ের ভেতর ঢুকে পড়েছে।’
নাহ। আর দেরি করা যায় না। এবার সুড়সুড় করে দেয়াল বেয়ে উঠতে লাগল গোয়েন্দা টিকটিকি। যা ঠান্ডা পড়েছে! ঘুলঘুলির ভেতর নিজের ঘরে না গেলেই নয়। তারপর চটপট কাঁথার ভেতরে ঢুকে পড়তে হবে। নইলে...
একবার মাথা ঘুরিয়ে নিচে তাকাল গোয়েন্দা টিকটিকি। আর দেখল, ডিমটাকে ঠোঁট দিয়ে আদরে আদরে ভরিয়ে দিতে লাগল করকরানি। আর বলতে থাকল, ‘আমার দুষ্টু ছানা।’