সুপারবার্ড

অলংকরণ: আরাফাত করিম
অলংকরণ: আরাফাত করিম

আশ্চর্য! কে যেন খাঁচাটা খুলে রেখেছে। টুক টুক করে ছোট ছোট লাফ দিয়ে খাঁচা থেকে বেরিয়ে এল পাখিটা। তোমরা হয়তো ভাবছ, এটি একটি সত্যিকারের পাখি। তা কিন্তু নয়! এটি একটি রোবট পাখি। পাখিটা এত সুন্দর করে তৈরি করা হয়েছে, কেউ দেখলে বুঝতেই পারে না এটা সত্যিকারের পাখি নয়।

এবার হয়তো তোমরা ভাবছ এটা যেহেতু রোবট পাখি, এটাকে নিশ্চয়ই যখন খুশি তখন সুইচ অফ করে রেখে দেওয়া যায়। তাহলে ওকে খাঁচায় রাখার প্রয়োজন হলো কেন? কারণটা জানতে হলে তোমাদের একটু অপেক্ষা করতে হবে।

রোবটটি তৈরি করেছেন আমার আতাউল মামা। তিনি ঢাকায় ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ছেন। মামা এলে আমি খুব দুষ্টুমি করি। তাই আমি যখন মামাকে পাখি বানিয়ে দেওয়ার আবদার করলাম, তখন মামা বললেন, তিনি একটি দুষ্টু পাখি বানিয়ে দেবেন। সেটা অফ করার কোনো সুইচ থাকবে না। তাই পাখিটা যেকোনো সময় উড়ে চলে যেতে পারে, হারিয়ে যেতে পারে।
ব্যাপারটা নিয়ে আমি প্রথমে মাথা ঘামাইনি। কিন্তু পরে এই পাখি নিয়ে রীতিমতো বিপদে পড়ে গেলাম। রোবট পাখিটা কিছুতেই অফ করা যায় না। সব সময় ওকে দেখেশুনে রাখতে হয়। তাই যখন আমি কোনো কাজে ব্যস্ত থাকি কিংবা স্কুলে যাই, তখন ওকে খাঁচার ভেতর ভরে রাখি।

পাখিটার জন্য আমাকে একটু ঝামেলায় পড়তে হয় সেটা ঠিক, কিন্তু ও আমার অনেক কাজও করে দেয়। উড়তে পারে, কথা বলতে পারে, এমনকি আমার হোমওয়ার্কও করতে পারে। অঙ্ক স্যার যেসব কঠিন অঙ্কের সমাধান করতে গাইড বইয়ের সাহায্য নেন, সেগুলোও রোবট পাখিটা নিমেষেই সমাধান করে ফেলে। তাই আমি পাখিটার নাম রেখেছি সুপারবার্ড। আমার যদি ক্ষমতা থাকত, তাহলে সুপারবার্ড আবিষ্কারের জন্য আতাউল মামাকে আমি একটা নোবেল পুরস্কার দিয়ে দিতাম।

এদিকে দিনে দিনে আমার পড়ালেখার অবস্থার অবনতি হতে থাকল। পাখিটার মুখে কলম ধরিয়ে দিয়ে আমি কার্টুন দেখতাম আর সুপারবার্ড আমার হোমওয়ার্ক করে দিত। কিন্তু শেষ পর্যন্ত যা হওয়ার তা-ই হলো। আমি টেস্ট পরীক্ষায় খুবই খারাপ রেজাল্ট করলাম। মামা খবরটা জেনেই বাড়িতে চলে এল। আমাকে ডেকে বলল, ‘কী হলো ঐশ্মীতা? তোমাকে পাখিটা দেওয়া তাহলে আমার ভুল হয়ে গেল?’ আমি কান্নায় ভেঙে পড়লাম। রেগে গিয়ে বললাম, ‘সব তোমার দোষ। তুমি তো আমাকে পাখির বদলে একটা রোবট জ্যামিতি বক্স বানিয়ে দিতে পারতে। তাহলে তো আমি সেটা পরীক্ষার হলে নিয়ে যেতে পারতাম। আমার রেজাল্টও খারাপ হতো না।’

মামা বলল, ‘তুমি তো জানো, পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বন করা ঠিক নয়। এভাবে ভালো রেজাল্ট করে কী লাভ? তুমি শুধু সার্টিফিকেটগুলো সাজিয়ে রাখতে পারবে। তুমি কি শুধু ভালো রেজাল্ট পাওয়ার জন্যই পড়ালেখা করো, বলো?’

আমি বললাম, ‘তো আর কিসের জন্য? আমার শুধু ভালো রেজাল্টই চাই।’ মামা এবার রেগেই গেল। বলল, ‘সব ছাত্রদের চিন্তাভাবনা তোমার মতো বলেই দেশে বেকারের সংখ্যা এত বেড়ে গেছে। ঐশ্মীতা, জানার জন্য শেখো। দেখবে তুমি সহজেই ভালো রেজাল্ট করতে পারবে। তোমাকে আর কাজের জন্য ঘুরতে হবে না।’

মামার কথা শুনে আমি ভাবনায় পড়ে গেলাম। চুপচাপ বসে কিছুক্ষণ ভাবলাম। তারপর বললাম, ‘ঠিক আছে মামা, এখন থেকে আমি মন দিয়ে পড়ব। শুধু জানার জন্য, শেখার জন্য পড়ব। রেজাল্টের জন্য না।’

মামা খুশি হয়ে বলল, ‘গুড গার্ল! আমি আপাতত সুপারবার্ডকে নিয়ে যাচ্ছি। তুমি যখন বড় হবে, তখন আমি তোমাকে এটা ফেরত দিয়ে দেব। তুমি যখন বড় বড় গবেষণার কাজ করবে, নতুন কিছু আবিষ্কার করবে, তখন সুপারবার্ড তোমাকে সাহায্য করবে।’

রোবট হলেও সুপারবার্ডের জন্য আমার কেমন যেন মায়া জন্মে গিয়েছিল। ওকে ছেড়ে থাকতে হবে ভেবে কী যে মন খারাপ হলো! চোখের পানি আড়াল করে তাড়াতাড়ি পড়তে বসে গেলাম। আমাকে যে অনেক বড় হতে হবে...

দশম শ্রেণি, মুরাদনগর নুরুন্নাহার বালিকা উচ্চবিদ্যালয়, কুমিল্লা