গোল

অলংকরণ: তুলি
অলংকরণ: তুলি

নাহ্‌! শিমুলকে কোনোভাবেই বাগে আনা যাচ্ছে না। টিভির রিমোট হাতছাড়া করছেই না। কার্টুন চ্যানেল দিয়ে বসে আছে। ওর ডান পাশ দিয়ে রিমোট চাইলে বাঁ পাশে নিয়ে যায়। বাঁ পাশ দিয়ে চাইলে ডান পাশে নিয়ে যায়। আর খিকখিক করে হাসে। শিমুল হাসে আর বাকিদের গা জ্বলে যায়। জোর করে রিমোট নিতে গেলেই ওরে বাপ রে! এমন জোরে চেঁচিয়ে ওঠে, মনে হয় বাড়িটাই মাথায় তুলে ফেলবে। 
কী আর করা! মুখ ভার করে বসে থাকে বাকিরা। ওদিকে আশপাশের বাড়ি থেকে চিত্কারের শব্দ ভেসে আসে। অথচ জমজমাট খেলা চলছে। 
হঠাৎ কলবেলের শব্দ। কে এল? 
দরজা খুলে বকুল অবাক। আরে! বড় মামা যে! বড় মামার হাতে একটা বাক্স। 
ততক্ষণে বকুলের পেছনে আরও একটা মুখ উঁকি মারছিল। বড় মামা বললেন, ‘কি রে! খেলা দেখছিস না?’ 
শিউলি বলল, ‘আর খেলা! মেসির খেলা দেখব বলে সেই সকাল থেকে বসে আছি।’
‘তাহলে দেখছিস না কেন? জমাটি খেলা হচ্ছে তো!’ 
বকুল বলল, ‘শিমুল দেখতে দিচ্ছে না। রিমোট দখল করে বসে আছে।’ 
মামা মুচকি হাসলেন। সোজা চলে এলেন বসার ঘরে। শিমুল-বকুলদের টিভিটা ও ঘরেই থাকে।
মামাকে দেখেই খুশিতে আটখানা হয়ে উঠল শিমুল। চেঁচিয়ে উঠল, ‘মা-আ-মা-আ!’ 
তারপর ঝাঁপ দিয়ে মামার কোলে চড়ে বসল। এই সুযোগে শিমুলের হাত থেকে রিমোট নিতে চাইল বকুল। শিমুল শক্ত করে রিমোট ধরে আছে। 
মামা বললেন, ‘ওদের রিমোট দিয়ে দাও তো শিমুল।’ 
শিমুল বলল, ‘দেব না।’ 
মামা বললেন, ‘তোমাকে আমি এই বাক্সটা দেব।’ 
এবার বাক্সটা খেয়াল করল শিমুল। সুন্দর কাঠের একটা বাক্স। জানতে চাইল, ‘ওটার ভেতর কী আছে?’ 
মামা বললেন, ‘মজার কিছু। গোলও আছে।’ 
শিমুলের চোখ বড় বড় হয়ে গেল। ‘গো-ও-ল!’ 
‘হ্যাঁ গোল। তুমি গোল দিতে চাও?’ 
‘চাই।’ 
এই-ই সুযোগ! সুযোগ বুঝে রিমোট নিয়ে নিল বকুল। তারপর খেলা দেখতে লাগল। 
রিমোট হাতছাড়া হওয়াটা মেনে নিতে পারেনি শিমুল। এবার আবার ওর সঙ্গে মামার জোরও আছে। আরও জোরে চেঁচিয়ে উঠল ও। শিমুলের চেঁচানো থামলে মামা বললেন, ‘তুমি তো বেশ জোরে চেঁচাতে পারো! চলো তাহলে আমরা গোল গোল খেলি। গোল হলেই গোল বলে চেঁচাবে। ঠিক আছে?’ 
ওয়াও! গোল গোল খেলা! শিমুলের দুপাটি দাঁত বেরিয়ে গেল খুশিতে। বলল, ‘চলো মামা, চলো।’ 
শিমুলকে নিয়ে বসার ঘরের এক কোনায় গিয়ে বসলেন মামা। মামার ইচ্ছে শিমুলের সঙ্গেও খেলবেন, টিভিতে দেখানো খেলার দিকেও নজর দেবেন। 
শিমুলের হাতে বাক্সটা দিলেন মামা। বললেন, ‘বাক্সটা খোলো। এই বাক্সের ভেতরেই আছে খেলার মাঠ।’ 
শিমুল তো অবাক। বাক্সের ভেতরে খেলার মাঠ! শিমুল বাক্স খুলল। কিন্তু মামা তখন তাকিয়ে আছেন টিভির দিকে। মেসির পায়ে বল। 
এবার চেঁচাল শিমুল, ‘মামা, বাক্স খুলেছি।’ 
মামা বললেন, ‘বেশ! এবার গোল দিয়ে দাও।’ 
শিমুল মামার মুখের দিকে তাকাল। দেখল মামা টিভির দিকে তাকিয়ে আছেন। তখনো বলটা মেসির দখলে। ডি-বক্সের ভেতরে মেসি। কিন্তু বলের দখল আর মেসির পায়ে নেই। বিপক্ষ দলের পায়ে বল। 
শিমুল বলল, ‘এখন কী করব মামা?’ 
মামার নজর এবার শিমুলের দিকে। বললেন, ‘এটা একটা মজার বাক্স। এর ভেতর থেকে গোল খুঁজে বের করো তো শিমুল সোনা!’ 
হুম। খুবই গুরুত্বপূর্ণ কাজ। বাক্সের ভেতরে ঘাঁটাঘাঁটি করতে শুরু করল শিমুল। ওদিকে আবার মেসির পায়ে বল। আবার ডি-বক্সের ভেতরে মেসি। 
ততক্ষণে বাক্সের ভেতর থেকে একটা জিনিস বের করল শিমুল। বলল, ‘এই যে মামা। গোল।’ 
তখনই মেসি বলে কিক করল। কিন্তু বলটা বারপোস্টের অনেক ওপর দিয়ে চলে গেল। 
মামা বললেন, ‘হলো না।’ 

দুঃসাহসী টিনা: গত সংখ্যার উত্তর
দুঃসাহসী টিনা: গত সংখ্যার উত্তর

বলেই তাকালেন শিমুলের দিকে। বললেন, ‘হলো না। এটা তো গোল নয়। তুমি এখন যেটা বের করেছ এটা ত্রিভুজ। দেখো, এটার তিনটা কোণ। তিনকোনা সবকিছুই ত্রিভুজ। ত্রিভুজ নয়, তুমি গোল বের করো।’ 
ত্রিভুজটা পাশে রেখে আবার বাক্সের ভেতর ঘাঁটাঘাঁটি শুরু করল শিমুল। আবার খেলায় ডুবে গেলেন মামা। একটু পর আবারও মেসির পায়ে বল। ওদিকে আরেকটা জিনিস বের করল শিমুল। বলল, ‘এই যে মামা গোল।’
মামা বললেন, ‘হলো না! এটা তো চতুর্ভুজ। দেখো এটার চারটা বাহু। সবগুলো বাহু সমান। এ জন্যই এটা চতুর্ভুজ। চতুর্ভুজ নয় শিমুল, তুমি গোল বের করো।’ 
আবারও বাক্স ঘাঁটাঘাঁটি করতে লাগল শিমুল। ওদিকে বলের দখল আবার মেসির কাছে। গোলপোস্টে শট নিল মেসি। আর তখনই শিমুল চেঁচাল, ‘এই যে মামা গোল।’ 
নাহ্‌। এবারও হলো না। মেসির শট এবার ধরে ফেলল গোলকিপার। 
শিমুলের দিকে তাকিয়ে মামা বললেন, ‘এবারও হলো না। এটা আয়তাকার। দেখো এটারও চারটা বাহু। বড় দুটো বাহু একই রকম। আর ছোট দুটো বাহু এক রকম। আয়তাকার নয়, তুমি গোল বের করো শিমুল।’ 
আবার বাক্সের ভেতর ঘাঁটাঘাঁটি শুরু করল শিমুল। বেশ ত্যক্তবিরক্ত ও। 
ওদিকে মেসিকে ফাউল করা হয়েছে। ডি-বক্সের ঠিক বাইরে। ফ্রি-কিক। মামার পুরো মনোযোগ এখন টিভির দিকে। ফ্রি-কিকের জায়গা নির্দিষ্ট করে স্প্রে করে দিয়েছে রেফারি। বল বসিয়েছে মেসি। তুমুল উত্তেজনা। মেসি ফ্রি-কিক দিল। আর তখনই কান ফাটিয়ে শিমুল চেঁচাল, ‘গো-ও-ল।’ 
ঠিক তার পরপরই ঘরের সবাই চেঁচাল, ‘গো-ও-ল।’ 
আরে! গোল হয়ে গেছে। মেসি গোল দিয়েছে! ঘরজুড়ে নাচানাচি। শিমুলের দিকে তাকালেন মামা। আরে! শিমুলের হাতেও গোল। মানে একটা বৃত্ত। মামা এবার চেঁচিয়ে বললেন, ‘গো-ও-ল!’ 
সবাই অবাক হয়ে মামার দিকে তাকাল। তারপর তাকাল টিভির দিকে। কিন্তু কোথায় গোল! মেসিরা তখনো গোলের উল্লাসে মেতে আছে। এখনো খেলাই শুরু হয়নি। 
মামা বললেন, ‘তুমিও গোল দিতে পেরেছ শিমুল। তুমি গোল বের করতে পেরেছ। শাবাশ!’ 
বলেই শিমুলের পিঠ চাপড়ে দিলেন। আর শিমুল! গোল দেওয়ার গর্ব নিয়ে টিভির দিকে তাকাল। ভাবটা এমন, সবাই তো টিভির মানুষদের দেখে, এবার বরং টিভির মানুষেরাই ওকে দেখুক।