তিথিঙ্কর সঙ্গে দেখা

এখন ২১১৮ সাল। পৃথিবীটা প্রযুক্তির চাদরে ঢাকা। এই তো কিছুক্ষণ আগেই গিয়েছিলাম চাঁদে। মহাকাশে রকেটগুলোর সে কী জ্যাম! মাত্র পাঁচ হাজার কিলোমিটার পার হতেই প্রায় তিন মিনিট লেগে গেল!

ইতিহাস বইয়ে পড়েছি, আগে আমাদের ঢাকায় এর চেয়ে বড় জ্যাম লাগত। তখন নাকি এক কিলোমিটার যেতে ১৫-২০ মিনিট লাগত। আমার তো এই কথা বিশ্বাসই হয় না। তখন মানুষ কাজকর্ম করত কী করে! যা-ই হোক, এখন আমরা রোবট ছাড়া চলতে পারি না। পুরো পৃথিবীটাই প্রযুক্তির রাজ্য হয়ে উঠেছে। বিজ্ঞানীরা অনেক আজব, অদ্ভুত আবিষ্কার করেছেন। তবে মহাজাগতিক প্রাণী বা এলিয়েনের দেখা মানবজাতি এখনো পায়নি। আমার খুব ইচ্ছা, একদিন আমার একটা এলিয়েন বন্ধু হবে।

তো বলছিলাম চাঁদ থেকে ফিরে আসার পরের কথা। সেদিন রাতে আমি ছাদে বসে ছিলাম। হঠাৎ কি জানি কী একটা উড়ে এসে আমাদের ছাদে পড়ল। বস্তুটি গোলাকার। আমি ভয়ে শিউরে উঠলাম। আচমকা দেখি বস্তুটি দুভাগ হয়ে গেল। তার ভেতর থেকে একটি জন্তু লাফিয়ে লাফিয়ে আমার দিকেই আসছে। আমি দুই পা পেছনে সরে গেলাম। ভয়ে আমার দুই পা কাঁপছে। আলোর নিচে আসতেই আমার চোখের ইউভি লেন্স চালু হয়ে গেল। দেখলাম, একটি সবুজ গোলগাল প্রাণী। সে বিচিত্র শব্দ করে আমাকে কী যেন বলছে। আমি তার কোনো কথা বুঝতে না পেরে আমার কানে লাগানো ট্রান্সলেটরটি চালু করলাম।

এবার আমি তার ভাষা বুঝতে পারছি। সে বলছে, সে নাকি ইআর৩৩৭ গ্রহ থেকে এসেছে। তার নাম তিথিঙ্ক। সে আমার সাহায্য চায়। আমাদের পৃথিবীর ওপর একটি গবেষণার অংশ হিসেবে এখানে এসেছে। কিন্তু পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করার পর তার যানটি কাজ করা বন্ধ করে দেয়। সে পরীক্ষা করে বুঝতে পারে, পৃথিবীর বাতাসে এত কার্বন ডাই-অক্সাইড যে তার অক্সিজেনচালিত যানটি অকার্যকর হয়ে যায়। নিরুপায় হয়ে সে আমার বাড়ির ছাদে অবতরণ করে। আমার সাহায্য চায়।

তিথিঙ্ক বলল, ওর সবুজ গাছে ভরা একটা জায়গা দরকার, যেখানে সে তার যানটির ইঞ্জিনে জ্বালানি ভরবে।

কী হাস্যকর কথা! এই ঢাকা শহরে এসে প্রাণীটা গাছ খুঁজছে! সে কি ঢাকা সম্পর্কে কিছু জানে না? এই ঢাকা যে গাছহীনতার জন্য বহু পদক পেয়েছে!

তাকে আমি কম্পিত গলায় এ কথা বলতেই সে কাঁদো কাঁদো হয়ে আমার হাত দুটো ধরল। ভারী গলায় তার সবুজ গ্রহে ফিরে যেতে সাহায্য করার আকুতি জানাল। বলল, ‘চলো না এই পৃথিবীটা আবার সবুজ করে তুলি। তবেই আমি দেশে ফিরে যেতে পারব। এ কাজে তুমি যদি সাহায্য করো, তাহলেই তোমার সঙ্গে, মানুষের সঙ্গে আমার বন্ধুত্ব হতে পারে।’

শুরুতে ওর কথা শুনে আমি ঘাবড়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু এই কথার পর সাহস ফিরে পেলাম। তাকে সঙ্গে নিয়ে গেলাম সাধারণ মানুষের কাছে। তারা প্রথমে অবাক হলেও পরে সব বুঝতে পারল। সবাই সাহায্য করতে রাজি হলো।

আমরা গাছ লাগানো শুরু করলাম। একদিন আবার আমাদের ঢাকা সবুজে ভরে উঠল। তিথিঙ্ক ফিরে গেল তার গ্রহে। তবে এখন আমরা খুব ভালো বন্ধু। সুযোগ পেলেই আমি নানা দেশ ঘুরে মানুষকে গাছ লাগানোর ব্যাপারে সচেতন করি।


 ষষ্ঠ শ্রেণি, নওগাঁ জিলা স্কুল