বল্টুর টাইম ট্রাভেল

বল্টু স্কুলের বারান্দায় চুপচাপ বসে আছে। টিফিন খেতে একটুও ইচ্ছে করছে না। তার ধারণা আজ টিফিন বানিয়ে দিয়েছে কিংপিং। টিফিন মুখে দেওয়া যাচ্ছে না। কিংপিং হলো বল্টুর মায়ের রোবট। মাকে কাজে সাহায্য করে। যেমন আজ মা বল্টুকে বলেছেন, ‘বল্টু, আজ থেকে কিংপিং তোমাকে স্কুল থেকে আনা-নেওয়া করবে।’ শুনেই মনটা খারাপ হয়ে গেছে। কারণ মায়ের এই রোবটটাকে বল্টুর একটুও ভালো লাগে না। কেমন যেন!

সারা দিন মুখটা গম্ভীর করে রাখে। নিজেও হাসতে পারে না, আর কাউকে হাসাতেও পারে না। পিংপং এর থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন। মা বলেন, ‘পিংপং ছোটদের জন্য বানানো, সে জন্য ও হাসতে পারে আর হাসাতেও পারে। কিন্তু পিংপংয়ের মতো বড়দের রোবটগুলো গম্ভীর হলেও বুদ্ধিমান হয়।’ মা-বাবা সারা দিন ব্যস্ত থাকেন বলে দিনের বেশির ভাগ সময়ই বল্টুকে তার রোবট বন্ধু পিংপংয়ের সঙ্গে কাটাতে হয়। ওর সঙ্গে সময় কাটাতে অবশ্য বল্টুর ভালো লাগে। এ ছাড়া অন্য কারণ নিয়েও বল্টুর মন খারাপ। ওর প্রায় সব বন্ধুই মঙ্গল গ্রহে বেড়াতে গেছে। এলিয়েনদের সঙ্গে গল্প করেছে, সেলফি তুলেছে, আরও কত মজা করেছে। বল্টুর যাওয়া হয়নি।

এই তো আজকেই মিঠু সবাইকে ওর মঙ্গল গ্রহে যাওয়ার, ঘুরে বেড়ানোর গল্প বলছিল। ও নাকি আবার একটা এলিয়েনকে বলেছে, যদি সে কখনো পৃথিবীতে আসে, তবে যেন তাদের বাড়িতে ঘুরে যায়। এসবের মধ্যে মিঠু জিজ্ঞাসা করল, ‘বল্টু, তুই মঙ্গল গ্রহে বেড়াতে গেছিস?’ ও জানে বল্টু এখনো যায়নি। তবুও খোঁচা মারার জন্য এ কথা জিজ্ঞাসা করা আর কি।

বল্টু বলল, ‘না, যাইনি।’ বলতে গিয়ে ওর গলা ধরে এল।

বল্টু মা-বাবাকে অনেকবার বলেছে মঙ্গলে যাওয়ার কথা। একবার তো সব ঠিক হয়ে গিয়েছিল। বল্টুও আনন্দে আটখানা, কী মজা মঙ্গলে যাব! কিন্তু শেষে বাবা কোনো একটা কাজে আটকে যাওয়ার কারণে আর যাওয়া হলো না। বল্টু মাঝে মাঝে বোঝে না যে বাবা এত কাজ কীভাবে করেন, অবশ্য কিংপিং তাকে কাজে সাহায্য করে।

দাদির কাছে বল্টু গল্প শুনেছে, আগের দিনে নাকি মানুষ অফিস ও বাসার সব কাজ একাই করত, তাদের সাহায্য করার জন্য কিংপিংয়ের মতো কেউ ছিল না। বল্টু মাঝেমধ্যে ভাবে, ইশ্‌, যদি আগের দুনিয়ায় ফিরে যেতে পারতাম তাহলে কিংপিংকে সহ্য করতে হতো না। সেখানে পিংপং থাকবে না—এই ভেবে অবশ্য একটু খারাপ লাগে। তাই বল্টু আগের দুনিয়ায় যায় না। না হলে কবেই টাইম ট্রাভেলের মাধ্যমে চলে যেত।

বল্টু একবার টাইম ট্রাভেল করেছিল, অতীতে গিয়ে দেখেছে অনেক কিছু। বাংলাদেশে গিয়ে দেখেছে, বাচ্চারা অনেক বই নিয়ে স্কুলে যাচ্ছে। আবার অল্প কিছুক্ষণ স্মার্টফোনে গেমস খেললেই মা-বাবা ছোটদের বকা দিচ্ছেন। তবে বল্টুর একটা জিনিস খুব ভালো লেগেছে যে, সেখানে কিংপিং নেই। মানুষগুলোর কষ্ট দেখে খুব মায়া লেগেছে। তখন আবার মনে হয়েছে, কিংপিং থাকলে খুব একটা খারাপ হতো না।

বল্টু সোফিয়া নামে একটা রোবটের কথা শুনেছে। সে নাকি অনেকটা মানুষের মতো দেখতে। বল্টু দেখেছে, মানুষগুলো খুব আগ্রহ নিয়ে সোফিয়াকে দেখছে, তার ইন্টারভিউ নিচ্ছে। সে বুঝতে পারছিল না, একটা রোবটকে এত আগ্রহ নিয়ে দেখার কী আছে! মাকে জিজ্ঞেস করতেই মা বললেন, ‘ওরা তো রোবট আগে দেখেনি। আর ওরা রোবট সচরাচর দেখতেও পায় না তাই।’ এ ছাড়া ও দেখেছে, মানুষগুলো জীবনকে সহজ করার পদ্ধতি খুঁজছে। ওরা কর্মঠ, বুদ্ধিমান। এসব ভাবতে ভাবতেই বেল পড়ে গেল। মনে হয় সেকেন্ড বেল। কারণ সিস্টার রোবট বল্টুকে দেখেই তাড়াতাড়ি ক্লাসে যেতে বললেন।

বল্টু তাড়াতাড়ি ক্লাসে যেতে যেতে ভাবল, আজই বাসায় গিয়ে মাকে বলবে, কিংপিংকে দিয়ে যেন আর রান্না না করায়। আর করালেও যেন ভালো করে রেসিপিগুলো ওর মেমোরিতে সেট করে দেয়।

নবম শ্রেণি, ওয়াইডব্লিউসিএ উচ্চমাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়, ঢাকা।