সরল আঁকিবুঁকিতে বাংলাদেশ

‘পারাপার’, শিল্পী: সুমন কুমার সরকার
‘পারাপার’, শিল্পী: সুমন কুমার সরকার

বৃক্ষরাজি, আকাশ-মাটি-জল আর জীববৈচিত্র্যের সরল-সৌন্দর্যে আবহমানকাল থেকে বাংলার মানুষ হয়ে উঠেছে সহজিয়া প্রেমিক। এ দেশে প্রাথমিকভাবে সুকুমার শিল্পের পাঠ শুরু হয় গ্রামবাংলার মাটি ও মানুষের অবিকল রূপদানের চেষ্টায়।¯স্রষ্টার মন নিয়ে চর্চিত এসব শিল্পকর্মে বহিঃদৃশ্যের বাইরে-ভেতরের রূপ-রস-গন্ধের আভাস নানান মাত্রায় ধরা দেয়। কথাগুলো লেখা হলো ‘মৃন্ময় বাংলা’ শিরোনামে একটি জলরং চিত্রপ্রদর্শনী দেখে। এ প্রদর্শনীতে অংশ নেওয়া চার শিল্পীই তরুণ।

প্রথমে কামরুজ্জোহার কথাই বলা যাক। তাঁর কাজে রয়েছে মেঘ-বৃষ্টি-রোদ্দুরের খেলা। আছে আকাশ, নদী, নৌকা ও জেলেদের কর্মময় জীবন। ‘জেলে নৌকা’ ও ‘স্মরণীয় যাত্রা’ শিরোনামের চিত্রে আলো-আঁধারের খেলা ও তুলির স্বতঃস্ফূর্ত টান-টোন বিষয়াতিরিক্ত ভাবনার জগতে নিয়ে যায়।

ক্ষুধা, দারিদ্র্য আর বেঁচে থাকার প্রয়োজনে বাংলার আদিবাসী সাওঁতালদের জীবনযাপন এবং বরেন্দ্র অঞ্চলের ভূ-প্রকৃতি উঠে এসেছে সুমন কুমার সরকারের কাজে। তাঁর কাজগুলোকে স্থানিক ডকুমেন্টেশনও বলা যায়।

ঝোটন চন্দ্র রায় খুঁজেছেন পুরান ঢাকার স্থাপত্যের সৌন্দর্য। অনুশীলনধর্মী এসব কাজে বস্তু প্রাণের সত্য উদ্ধার হয়নি। যা অনেকটা শব্দ ও গন্ধহীন; অর্থাৎ ফটোগ্রাফিক চর্চার ঊর্ধ্বে শিল্প-সত্যের প্রাণ আসেনি।

‘জেলে নৌকা-২’, শিল্পী: কামরুজ্জোহা
‘জেলে নৌকা-২’, শিল্পী: কামরুজ্জোহা

আর মানিক বণিকের কাজগুলোর কেন্দ্রবিন্দুতে জীবকুলের ছোটগল্প। গবাদিপশু, হাঁস-মুরগি, জলাধার ও নিসর্গের একান্ত কথোপকথন আছে।

এই প্রদর্শনীর অধিকাংশ কাজেই আছে প্রাণের ঘাটতি। দৃশ্য-অতিরিক্ত বিষয়ভাবনার অবকাশ নেই। অনেকটা নীরস তথ্যচিত্র বলা যায়। তবে প্রত্যেকের কাজে বাংলার ভূ-প্রকৃতি ও সহজিয়া মানুষের জীবনঘনিষ্ঠ সহজ পাঠ ধরা আছে।

গ্যালারি কসমসে ৭ সেপ্টেম্বর শুরু হওয়া প্রদর্শনীটি উন্মুক্ত থাকবে ২৫ তারিখ পর্যন্ত।