এই শরতের পদাবলি

মোহাম্মদ রফিক
সে
সে এসে দাঁড়াল বারান্দায়,
শারদীয় পূর্ণিমার চাঁদ
নেমে এল ভুঁয়ে, শেষ রাতে;
দুই পাশে পেছনে গোলাপ
রজনীগন্ধার ঝাড় যেন
নক্ষত্রের বাসন্তী উৎসব,
টোড়িভৈরবীতে বেজে ওঠে
এস্রাজ ও বীণা–পাখওয়াজ,
দোলনচাঁপার মৌ-মৌ ঘ্রাণ
কোন ফাঁকে ঢুকে যায় নাকে;
বাতাসে বাতাসে মৃদুকেশ
কখন যে উড়ে গেল পরনের
বেশবাস, প্রফুল্ল আশ্লেষে;
মধু জোছনায় উতরল
নগ্নতাও এমন বৈদেহী
মধুপের হূল প্রাকৃতিক;
কোন যক্ষপুরি থেকে তবে
মুক্তি পেল কালের যন্ত্রণা,
স্বাধীন শরীরে আবির্ভূতা
দমিত চেতনা কলাবতী;
জানি, মুহূর্তের উদ্ভাসন
কিংবা আবির্ভাব নয়, নয়
অপ্সরা উর্বশী বা মেনকা
নয় সে বিভ্রম, সর্পদেবী;
সুন্দরের মানবী প্রতিমা
যুগ থেকে যুগে যুগান্তরে;
ছানিপড়া চোখে নামে জল,
এ মুহূর্তে মৃত্যু তবে শুভ,
এরপর অতঃপর—পর
বুঝিবা সৃষ্টিও অবান্তর!

কামাল চৌধুরী
শরৎ
শরতের এই আকাশ আমাকে দিয়ে
লিখিয়ে নিচ্ছে কোথাকার মেয়েটিকে
আমি কাশবনে বাতায়ন খুলে দেখি
আদি উত্তাপ হৃদয়ের চারদিকে।
আমি ভালোবাসা মাটির প্রদীপে লিখি
নদীতীরে আমি যুগলশয্যা পাতি
সেখানে কুসুম কোথাকার নীলাকাশ
হাতে নিয়ে তুমি এখনো শবর জাতি।
তীর ধনুকের এই টংকার আমি
ঋতুবদলের প্রাচীন বঙ্গে শুনি
শরীরে আমার মাছের আঁশটে ঘ্রাণ
ভাতের গন্ধে চিরকাল জয়ধ্বনি
শুনতে শুনতে এখনো যাচ্ছি হেঁটে
কতটা অতীত হয়ে গেছে স্মৃতিকাল
শোন মেয়ে, তবু প্রত্নদিনের গৃহে
আমরা এখনো হৃদয়ের কাঙ্গাল।