এক্সিম ব্যাংক-অন্যদিন হুমায়ূন আহমেদ সাহিত্য পুরস্কার পেলেন দুজন

বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে পুরস্কার দেওয়া হয়।
বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে পুরস্কার দেওয়া হয়।

‘নন্দিত নরকে’ উপন্যাসের মধ্য দিয়ে লেখক হিসেবে আত্মপ্রকাশ। পরের চার দশক বহুমাত্রিক সৃষ্টিশীলতায় আচ্ছন্ন করে রেখেছেন কোটি বাঙালি পাঠককে। তিনি বরেণ্য কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ। বাংলা সাহিত্যের বরপুত্র হিসেবে তাঁকে আখ্যায়িত করেছেন সাহিত্য সমালোচকেরা। আপন দ্যুতিতে উদ্ভাসিত এই লেখকের স্মরণে দেশের কথাসাহিত্যিকদের শিল্প সৃষ্টিতে প্রেরণা জোগাতে প্রবর্তিত হয়েছে ‘হুমায়ূন আহমেদ সাহিত্য পুরস্কার’। এক্সিম ব্যাংকের সহযোগিতায় পুরস্কারটি প্রবর্তন করেছে জনপ্রিয় পাক্ষিক ‘অন্যদিন’। 

মূলত কথাসাহিত্যে অবদানের জন্যই ‘হুমায়ূন আহমেদ সাহিত্য পুরস্কার’। সামগ্রিক অবদানের জন্য প্রতিবছর একজন প্রবীণ ও একজন নবীন কথাসাহিত্যিককে এই পুরস্কার দেওয়া হচ্ছে। এবার এক্সিম ব্যাংক-অন্যদিন হুমায়ূন আহমেদ সাহিত্য পুরস্কার-২০১৮ পেয়েছেন সামগ্রিক অবদানের জন্য কথাসাহিত্যিক রিজিয়া রহমান, নবীন সাহিত্য শ্রেণিতে তরুণ লেখক ফাতিমা রুমি। কাল মঙ্গলবার হুমায়ূন আহমেদের ৭০তম জন্মদিন। এ উপলক্ষে আজ সোমবার বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে জমকালো অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে তাঁদের হাতে এই পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়।
অনুষ্ঠানে সাহিত্যে সামগ্রিক অবদানের জন্য রিজিয়া রহমান এবং নবীন সাহিত্য শ্রেণিতে (অনূর্ধ্ব চল্লিশ বছর বয়স্ক লেখক) ‘সাঁঝবেলা’ উপন্যাসের জন্য ফাতিমা রুমিকে হুমায়ূন আহমেদ সাহিত্য পুরস্কার প্রদান করা হয়েছে। পুরস্কার হিসেবে রিজিয়া রহমানকে পাঁচ লাখ ও ফাতিমা রুমিকে এক লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে।
‘হুমায়ূন আহমেদ নেই, হুমায়ূন আহমেদ আছেন। আমরা যাঁরা তাঁর সাহচর্য লাভ করেছিলাম, তাঁদের স্মৃতিতে তিনি রয়েছেন। যাঁরা তার সান্নিধ্যে আসার সুযোগ পাননি, তাঁরা তাঁর সাহিত্যকর্মকে ভালোবেসে তাঁর নৈকট্য লাভ করেছেন। হুমায়ূন আহমেদ এখনো সর্বত্র বিরাজিত।’ অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে হুমায়ূন আহমেদকে স্মরণ করে কথাগুলো বলছিলেন জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। বিচারকমণ্ডলীর সভাপতি ও জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর ও এক্সিম ব্যাংকের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক সিরাজুল ইসলাম। শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন হুমায়ূন আহমেদের স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন ও স্বাগত বক্তব্য দেন অন্যদিনের সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম। অনুষ্ঠানে রিজিয়া রহমানের শংসাবচন পাঠ করেন কথাসাহিত্যিক অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম এবং ফাতিমা রুমির শংসাবচন পাঠ করেন ‘কালি ও কলম’ সম্পাদক আবুল হাসনাত। এর আগে রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যার কণ্ঠে হুমায়ূন আহমেদের প্রিয় দুটি রবীন্দ্রসংগীত ‘মাঝে মাঝে তব দেখা পাই’ ও ‘আজ জ্যোৎস্না রাতে সবাই গেছে বনে’ পরিবেশনার মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হয়।
আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, ‘হুমায়ূন আহমেদ আমাদের জীবনে ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করেন। তাঁকে ছাড়া বাংলা সাহিত্য চিন্তা করা যায় না। তাঁর বড় কৃতিত্ব ঢাকায় তিনি একটি বিশাল পাঠক শ্রেণি তৈরি করেছেন। যার ফল এখনো রয়েছে। সাহিত্যচর্চার পাশাপাশি আধুনিক, প্রগতিশীল চিন্তাধারার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।’
আসাদুজ্জামান নূর বলেন, ‘প্রিয় মানুষেরা চলে গেলেও তাঁকে প্রিয়জনেরা স্মরণ করলে চিরকাল বেঁচে থাকেন। হুমায়ূন আহমেদ তেমনই একজন। তিনি চিরকাল বেঁচে থাকবেন।’
মেহের আফরোজ শাওন বলেন, একজন সাহিত্যিকের জীবন পরিপূর্ণতা পায় যখন তাঁর নামে পুরস্কার প্রবর্তিত হয়। এ পুরস্কার প্রবর্তনের মধ্য দিয়ে হুমায়ূন আহমেদের সাহিত্য জীবন পরিপূর্ণ হয়েছে, এ মন্তব্য করে তিনি বলেন, নবীন কথাসাহিত্যিকদের জন্য এ পুরস্কার তীব্র কামনার পুরস্কার হবে একদিন।
অনুভূতি প্রকাশ করে রিজিয়া রহমান বলেন, এ পুরস্কার প্রাপ্তি তাঁর জন্য সম্মানের, গর্বের, দুঃখের ও বেদনার। কারণ, হুমায়ূন আহমেদ তাঁর চেয়ে বয়সে অনেক ছোট। তাঁর স্মৃতি হয়ে যাওয়ার কথা আর হুমায়ূন আহমেদের বেঁচে থাকার কথা। তাঁর স্মৃতির স্মারক হিসেবে পাওয়া এ পুরস্কার অনেক গর্বের ও সম্মানের।
ফাতিমা রুমি বলেন, হুমায়ূন আহমেদের নামাঙ্কিত এ পুরস্কার একজন নবীন লেখকের জন্য অনেক বড় পাওয়া। সেই সঙ্গে অনেক বেশি উৎসাহ, যা একজন তরুণ লেখকই উপলব্ধি করতে পারেন।
হুমায়ূন আহমেদ স্মরণে ২০১৫ সালে প্রবর্তিত হয় ‘এক্সিম ব্যাংক-অন্যদিন হুমায়ূন আহমেদ সাহিত্য পুরস্কার’। ২০১৫ সালে শওকত আলী ও সাদিয়া মাহ্জাবীন ইমাম, ২০১৬ সালে হাসান আজিজুল হক ও স্বকৃত নোমান এবং ২০১৭ সালে জ্যোতিপ্রকাশ দত্ত এবং মোজাফ্ফর হোসেন এ পুরস্কার পেয়েছিলেন।