সাকিব আল হাসান মাঠে মাইন্ড গেম খেলেন

চলার পথে আমার অনেক প্রশ্নের উত্তর সুবর্ণা মুস্তাফা খুঁজে পান রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গল্পগুচ্ছ বইয়ে। ছবি: প্রথম আলো
চলার পথে আমার অনেক প্রশ্নের উত্তর সুবর্ণা মুস্তাফা খুঁজে পান রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গল্পগুচ্ছ বইয়ে। ছবি: প্রথম আলো

সুবর্ণা মুস্তাফা। মঞ্চ, টেলিভিশন, চলচ্চিত্র—তিন মাধ্যমেই অভিনয় করেন দাপটের সঙ্গে। সম্প্রতি তাঁর অভিনয়জীবনের সুবর্ণজয়ন্তী হলো। তিনি লিখেছেন তাঁর প্রিয় ৫ নিয়ে।

১. বই
বিচিত্র বিষয়ের এনসাইক্লোপিডিয়া ‘গল্পগুচ্ছ’
ছোটবেলা থেকে বেড়ে উঠেছি বইয়ের ভেতর দিয়ে। মনে আছে, খুব ছোটবেলায়ই—আমি যখন তৃতীয় শ্রেণিতে পড়তাম—পড়ে ফেললাম বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের পথের পাঁচালী। সে সময় কি আর এ বইটি অত বুঝেশুনে পড়েছি? অপু-দুর্গার গল্প হিসেবেই পড়েছিলাম। পড়ে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলাম সবাইকে। এরপর কতবার যে পড়েছি অসাধারণ এই বইটি! আদতে একজীবনে কত কত বই যে পড়েছি, কত বই যে আমার প্রিয়! এককথায় এর উত্তর দেওয়া কঠিন। তারপরও বলতে পারি, আমার সার্বক্ষণিক সঙ্গী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, তাঁর গল্পগুচ্ছ আমার সব সময়ের সঙ্গী। এটা এমন এক মহার্ঘ্য বই, যেখানে আছে মানুষ, আছে মানুষের সম্পর্ক, প্রকৃতি, জীবন-জগৎ। সব মিলিয়ে গল্পগুচ্ছ যেন মানবজীবনের বিচিত্র বিষয়ের এনসাইক্লোপিডিয়া। চলার পথে আমার অনেক প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পাই এই বইয়ে। তা ছাড়া ‘গীতবিতান’ আর ‘সঞ্চয়িতা’ও সারাক্ষণ আমার কাছে থাকে।

২. অভিনয়শিল্পী
সবার কাছ থেকে শেখা
আমার বাবা গোলাম মুস্তাফা আমার সবচেয়ে প্রিয় শিল্পী। তবে এই তালিকায় আরও কয়েকটি নাম বলতে হবে—ফেরদৌসী মজুমদার, হুমায়ুন ফরীদি, ওয়াহিদা মল্লিক জলি, সানজিদা প্রীতি, অপি করিম। শিল্পী হিসেবে এঁদের কাছ থেকে অনেক কিছু গ্রহণ করেছি আমি। শিল্পীর জন্য এটা খুবই সহজাত ব্যাপার। গতিশীল থাকার জন্য এভাবে গ্রহণ করে যেতে হয়। এখানে আমি বলতে চাই জলির কথা। সৌদ (বদরুল আনাম সৌদ) যখন আবার গ্রন্থিকগণ কহে বানানোর পরিকল্পনা করল, তখন সেখানে আমি অভিনয় করব কি না, তা নিয়ে দ্বিধায় ছিলাম। কারণ, নাটকের মূল চরিত্রটির বয়স ছিল আমার চেয়ে অনেক কম। এ সময় জলি আমাকে বলল, শিল্পীর কাছে বয়স বলে কিছু নেই। চরিত্র ধারণের নিষ্ঠাটাই খুব জরুরি। এভাবেই প্রত্যেক প্রিয় শিল্পীর কাছ থেকে আমি শিখেছি, শিখছি প্রতিনিয়ত।

এ আর রহমানে মুগ্ধ তিনি
এ আর রহমানে মুগ্ধ তিনি

৩. প্রিয় গান
এ আর রহমানের গান বৈশ্বিক
নিয়মিত যাঁরা গান শোনেন, তাঁদের কাছে নির্দিষ্টভাবে কোনো একটা প্রিয় গানের নাম জানা যাবে না কখনোই। ধরন, শিল্পী, সময়, ঘরানা—এসব ভেদে গানের এই মাধ্যম অনেক বিস্তৃত। প্রচুর গান শুনি আমি। তাই কোনো একটা গানের নাম বলা কঠিন। তবে এ ক্ষেত্রে গান নয়, প্রিয় শিল্পী হিসেবে বলতে পারি এ আর রাহমানের নাম। তাঁর গানের এক একটি নোটে কত না কারুকাজ! এ আর রহমানের গান বৈশ্বিক, সব সময়ের জন্য। আদতে সব সময় নানা ধরনের গান শুনি আমি, এখন যেমন শুনছি ‘তুমি যাকে ভালোবাসো’, ‘ঘুড়ি তুমি কার আকাশে ওড়ো’ কিংবা বাপ্পার (বাপ্পা মজুমদার) গানগুলো একেক সময় একেক রকমভাবে আচ্ছন্ন করে।

৪. মঞ্চনাটক
চোখে লেগে আছে ‘কেরামতমঙ্গল’
নাগরিক নাট্যসম্প্রদায়ের দেওয়ান গাজীর কিসসা আমার খুব প্রিয় নাটক। তবে সবচেয়ে প্রিয় মঞ্চনাটকের কথা বললে অবশ্যই বলতে চাই সেলিম আল দীনের লেখা কেরামতমঙ্গল-এর নাম। এই নাটকের ব্যপ্তি বিশাল। ‘মঙ্গল’ শব্দটি মনে এলেই আমাদের মনে পড়ে মনসামঙ্গল-এর কথা। এই নাটকের ‘মঙ্গল’ শব্দটি মঙ্গলকাব্য থেকে নেওয়া হলেও এখানে কেরামতমঙ্গল কিন্তু কেরামতের জীবনপ্রবাহের মধ্য দিয়ে তুলে ধরেছে আমাদের দেশের ইতিহাস। ব্রিটিশ শাসন, পাকিস্তান পর্ব ও বাংলাদেশ—এই ভূখণ্ডের তিনটি পর্যায়ই আছে নাটকটির অঙ্গে-উপাঙ্গে। সেলিম আল দীনের নাটকগুলো বরাবরাই বিশদ ব্যাপ্তির হয়, ভালো লাগার হয়; তবে কেরামতমঙ্গল যেন সবকিছুকে ছাপিয়ে যায়। এটা ঢাকা থিয়েটারের অসাধারণ এক প্রযোজনা। পুরো প্রযোজনাতেই ছিল এক যজ্ঞ—এখানে একটা বৃত্তের মধ্যে কেরামতের জীবনচক্র যেভাবে দেখানো হয়েছে, সেটা অভূতপূর্ব; মঞ্চে বৃত্তের ভাঙাগড়ার সঙ্গে সেই জীবনের ইতিহাস, তার সঙ্গে দেশের ইতিহাস জুড়ে দেওয়া—সে এক ঘটনাই ছিল বটে। আজ এত বছর পরও কেরামতমঙ্গল–এর দৃশ্যাবলি চোখে লেগে আছে!

নাম্বার ওয়ান সাকিব আল হাসান
নাম্বার ওয়ান সাকিব আল হাসান

৫. ক্রিকেটার
নাম্বার ওয়ান সাকিব আল হাসান
আমার অন্য এক ভালোবাসার নাম ক্রিকেট। কিন্তু আমার প্রিয় ক্রিকেটার কে? এমন প্রশ্ন হলে অবশ্যই নির্দ্বিধায় আমাদের জাতীয় দলের সাকিব আল হাসানের নাম বলতে চাই আমি। এখন স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন আসবে, কেন প্রিয়? সম্প্রতি বাংলাদেশ-ওয়েস্ট ইন্ডিজের সর্বশেষ ম্যাচে সাকিবের অধিনায়কত্ব দেখলেই মিলে যাবে উত্তর। তিনি ‘ক্রিকেট জিনিয়াস’। এই সারিতে অবশ্যই আরও কয়েকজনের নাম নেওয়া যাবে, যেমন দেশের বাইরের ক্রিকেটারের নাম বললে শচীন টেন্ডুলকার বা ডি ভিলিয়ার্সকেও ‘জিনিয়াস’ বলতে হবে। কিন্তু আমাদের সাকিব আল হাসান মাঠে মাইন্ড গেম খেলেন। তিনি নাম্বার ওয়ান। মাশরাফি, মুশফিক, মোস্তাফিজ, মিরাজ—এঁদের খেলাও নিঃসন্দেহে আমাকে মুগ্ধ করে; তবে একটা প্রিয় নাম নিতে হলে অবশ্যই সেটা সাকিব।