লেখকরঙ্গ

কাজী নজরুল ইসলাম অলংকরণ: তুলি
কাজী নজরুল ইসলাম অলংকরণ: তুলি

নজরুলের ‘বড় কুটুম্ব

কাজী নজরুল ইসলাম ইংরেজ–রাজের রোষানলে পড়ে জেলে গিয়েছিলেন। কিন্তু জেল থেকে আদালতের আদেশে মুক্তি পাওয়ার পরও সরকারি গোয়েন্দারা তাঁর পিছু ছাড়েনি। বরং তারা মাঝেমধ্যেই ছদ্মবেশে তাঁর চলাফেরার দিকে নজর রাখত। সুফিয়া কামাল যখন ছোট, তখন নজরুল তাঁদের বরিশালের শায়েস্তাগঞ্জের বাড়িতে প্রায়ই আসতেন। সেটা পুলিশের নজরে পড়ে যায়। নজরুলকে দেখতে তখন বরিশালের অনেকেই সুফিয়া কামালদের বাড়ি ভিড় জমাতেন, গোয়েন্দারা সেই সুযোগে ভিড়ের মধ্যে মিশে গিয়ে তাঁর ওপর নজর রাখার চেষ্টা করত। কিন্তু তারাও কবির কাছে ধরা পড়ে যায়। একদিন ভরা মজলিশে কবি বসে আছেন। এক পরিপাটি পোশাকের ভদ্রলোক তাঁর পাশে এসে দাঁড়ালেন। নজরুল তাঁকে দেখেই তৎক্ষণাৎ মৃদু হেসে বলে উঠলেন, ‘তুমি টিকটিকি, জানি ঠিকঠিকই!’ ধরা পড়ার পর গোয়েন্দাপ্রবর মুখ লাল করে দ্রুত প্রস্থান করলেন। পরে সুফিয়া কামাল কবিকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, ‘কী করে তুমি চিনলে, দাদু?’ হেসে নজরুল জবাব দিয়েছিলেন, ‘গায়ের গন্ধে। বড় কুটুম্ব যে!’ সূত্র: রফিকউল্লাহ খান ও সৌরভ শিকদার সম্পাদিত স্মৃতিকথায় কাজী নজরুল ইসলাম

শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় অলংকরণ: তুলি
শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় অলংকরণ: তুলি

নামের বিপাকে শরৎচন্দ্রের দাড়ি বিসর্জন

শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় তখন খ্যাতির মধ্যগগনে। ওই সময়ই তাঁর সামনে এল এক নতুন বিপত্তি। জানা গেল, তখনকার স্বল্প প্রচারিত একটি সাময়িকী গল্পলহরীর সম্পাদক, ঘটনাক্রমে তাঁরও নাম ছিল ‘শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়’। তিনিও তখন একাধিক উপন্যাস লিখে ছেন এবং সেগুলো বেরও হচ্ছে। এমনকি চাঁদমুখ ও বিদূষক নামের দুটি উপন্যাস ‘আসল’ শরৎচন্দ্রের লেখা ভেবে অনেকে নাকি কিনছেনও! কিনে পড়ার পর সবাই যথারীতি হতাশ। শরৎচন্দ্র তো মুসিবতে পড়ে গেলেন। মহা চিন্তিত। এ সময় তাঁর শুভানুধ্যায়ী বাতায়ন পত্রিকার সম্পাদক অবিনাশ ঘোষাল হাজির হলেন এক বুদ্ধি নিয়ে। তিনি প্রস্তাব দিলেন, আদি ও প্রকৃত কথাশিল্পী শরৎচন্দ্রকে চিহ্নিত করার জন্য এখন থেকে তাঁর বইয়ের গোড়ায় লেখকের আলোকচিত্র ছাপা হোক। কিন্তু সে জন্য শরৎচন্দ্রকে তাঁর বাহারি ফ্রেঞ্চকাট দাড়ি ছেঁটে ফেলতে হবে, কারণ ‘নকল’ শরৎচন্দ্রও একগাল দাড়ির অধিকারী। দাড়ি বিসর্জনের এহেন প্রস্তাব শুনে শরৎচন্দ্র প্রথমে মুষড়ে পড়েছিলেন। কারণ, ফরাসি কথাসাহিত্যিকদের প্রতি তাঁর প্রীতির নিদর্শনস্বরূপ ওই বিলাসী ফ্রেঞ্চকাট দাড়ি তিনি রেখেছিলেন। কিন্তু কী আর করা, পরিচয়সংক্রান্ত সংকট নিরসনের খাতিরে দাড়ি শেষমেশ বিসর্জন দিলেন তিনি। ছবিও তোলালেন। বইয়ের শুরুতে তাঁর ছবি ছাপাও হতে থাকল। সূত্র: সাগরময় ঘোষের সম্পাদকের বৈঠকে

গ্রন্থনা: মুহিত হাসান