অন্য পৃথিবীর খবর

রেস্ট, শিল্পী: সৈয়দ জাহাঙ্গীর
রেস্ট, শিল্পী: সৈয়দ জাহাঙ্গীর

সৈয়দ জাহাঙ্গীর প্রকৃতি আঁকেন৷ কখনো রঙের সঙ্গে হাজির করেন আলো আর ছায়া৷ আবার অন্য ছবিতে শুধু কালো কালি ও খাগের কলম৷ এ প্রদর্শনীর কাজের মধ্যে রেখাপ্রধান স্পেস-বিন্যাসের নিরীক্ষা আছে৷ শিল্পীর ৪১তম একক প্রদর্শনীতে গিয়ে আমরা হয়তো এমন উপসংহারে পৌঁছাতে পারি, জাহাঙ্গীর আলোছায়া, জলকাদার মানব অবয়ব নিয়ে ক্যানভাস গড়েছেন৷
কালি-কলম ও অ্যাক্রিলিক—এ দুই মাধ্যমে মোট ৩৬টি কাজ আছে প্রদর্শনীতে৷ আর ছবিগুলোতে দৃষ্টিগ্রাহ্য রঙের পরিবর্তে আছে নির্দিষ্ট তিনটি রং—ইয়েলো অকার, আলট্রামেরিন ব্লু ও সেপিয়া গ্রিন৷ আচ্ছা, এতক্ষণে প্রদর্শনীর শিরোনামই তো জানানো হয়নি! প্রদর্শনীর শিরোনাম ‘অফ ম্যান অ্যান্ড আর্থ’৷ নিসর্গের সঙ্গে মানুষের উপস্থিতিই এখানে মুখ্য৷ কখনো মাছ ধরা, নদীর পাড় থেকে ঘরফিরতি মানুষ, কাজের অপেক্ষায় থাকা লোকজন, ধানের উঠানে কিষানি—এমন মুহূর্তকে শিল্পী ছবির বিষয় করে তুলেছেন আধা বিমূর্ত ঢঙে৷
একটি উল্লেখযোগ্য ছবি ‘সেলিব্রেশন’-এর কথা বলি এবার: চলতি বছরে আঁকা এ ছবিতে রয়েছে সবুজ, নীল ও কমলা রঙের জ্যামিতিক ছন্দময় আকৃতি৷ উৎসবের মুহূর্তকে মনে করে দেয় এ ছবি৷
‘ইকুয়াল স্ট্রেংথ’ নামের ছবিতে দেখা যায়, ইটের ঝাঁকা মাথায় দুজন নারীর মুখ৷ ক্যানভাসের ওপরের অংশ নীল আকাশ আর নিচের অংশে সবুজ জমিন৷ শিল্পী এখানে দুজন মানুষের দেহাবয়ব গড়েছেন চড়া ব্রাশের বুনটে৷ ইমপ্রেশনিস্ট শিল্পীদের মোটা রঙের প্রলেপের আবহ এ কাজে স্পষ্ট৷
পরিশীলিত টানটান ক্যানভাসে সরল সারফেস গড়ার যে ভঙ্গি, অনেক ক্ষেত্রে সৈয়দ জাহাঙ্গীরের সেটি নেই৷ তাঁর ছবি দেখে বরং দর্শক ছবিকে অনুভবও করতে পারবেন৷ প্রতিটি ছবিতেই ছক বাঁধা চিত্র নির্মাণের রীতি ভেঙে দর্শকের কাছে তুলে ধরেছেন অন্য এক পৃথিবী৷ সেই পৃথিবীর আরেকটি ছবির কথা তবে জানাই: ‘ম্যাডোনা’ নামে এ ছবির বিষয় মায়ের কোলে শিশু৷ বিষয়ে তেমন বৈচিত্র্য নেই; তবে ছবিতে বৈচিত্র্য সৃষ্টি হয়েছে মোটা রঙের ব্রাশের প্রয়োগে৷
একদল কিষানি ধান মাড়াই শেষে তুলে আনছে—‘হাসকিং’ ছবির বিষয়বস্তু এমন৷ ছবিতে উজ্জ্বল রঙের ব্যবহার লক্ষণীয়৷ এ ছাড়া বিষয় ও বর্ণের সম্মিলনে দর্শকের চেতনায় যোগ হয়েছে ফসলের চিরায়ত ঘ্রাণ৷
‘মুনলাইট নাইট’ ছবিটি একটু ব্যতিক্রম৷ পুরো ক্যানভাসে নীল জলের আবহ৷ চাঁদের আলোয় আলোকিত নদীপাড়ে দাঁড়িয়ে থাকা তিনজন মানুষ৷ এ ছবিতে রেখাচিত্রের মাধ্যমে শিল্পী গতি নির্মাণ করেছেন৷
কিছু ছবিতে শিল্পী মনোযোগ দিয়েছেন রেখা ও কাগজের স্থান ব্যবস্থাপনার দিকে৷ উদহারণ হিসেবে বলা যায় ‘ওয়েটিং ফর ডেজ ওয়ার্ক’-এর কথা: কাগজের এক কোণে একদল শ্রমিক৷ কাজের বাসনা তাদের চোখেমুখে৷ ওপরে শূন্য স্পেস৷ পুরো ছবিটি ভারসাম্য রক্ষা করেছে এক কোণে থাকা মানুষের রেখার সাহায্যে৷ সব মিলিয়ে ছবিটিতে আছে নিরীক্ষার ছোঁয়া৷
আগেই বলেছি সৈয়দ জাহাঙ্গীরের এ প্রদর্শনীর ছবিগুলোতে আছে ভিন্ন এক পৃথিবীর খবর৷ প্রতিটি ছবিতেই সেই পৃথিবী দর্শকের সামনে দাঁড়ায় নিজস্ব ঢঙে৷ বেঙ্গল আর্ট লাউঞ্জে গত ৩১ মে শুরু হওয়া প্রদর্শনীটি শেষ হবে ২১ জুন৷