আমি ও সাব্রিনা এবং রফিক

অলংকরণ: মাসুক হেলাল
অলংকরণ: মাসুক হেলাল

সাব্রিনা আমার সঙ্গে প্রেমের ছল করে, রফিকের সঙ্গে শোয়। কিন্তু কী করবেন? আমি নভেম্বরে ৪০ ছুঁচ্ছি আর রফিক ৩২ বছরের টগবগে যুবক। দেবদারুগাছের মতো সুঠাম, প্রায় ছয় ফুট লম্বা, আবলুশ কাঠের মতো কালো। সাব্রিনা কালোই পছন্দ করে কারণ আমি কালো নই; পাঁচ ফুট সাড়ে পাঁচ ইঞ্চি শরীরটা আমার যে ত্বকে মোড়া তার রং রোদে পোড়া এঁটেল মাটির মতো। স্বাস্থ্য অবশ্য ভালো; ভোরে চন্দ্রিমা উদ্যানে এক ঘণ্টা হাঁটি, দশ মিনিট দৌড়াই। বাসায় শবাসন করি। শীর্ষাসনও করতে পারি, যদি জানতে চান।
সাব্রিনা বলে, ‘ইউ আর পারফেক্টলি ফিট, শার!’ (ও নিজের নাম বলে শাবরিনা শুলতানা, রাজশাহীকে বলে রাজসাই।) আমি খুব বুঝি, সাব্রিনা ‘পারফেক্টলি ফিট’ বলে আমার প্রশংসা করে কেন। আমার বউ তো বলে ঠিক উল্টা: ‘তুমি কিন্তু বুড়া হয়ে যাচ্ছ!’ আই ডোন্ট মাইন্ড; আমার বউ সতী। তার বিচারে মিথ্যা প্রশংসা করা একধরনের দুর্নীতি, যেমন ঘুষ দেওয়া। সাব্রিনা আমার বউয়ের অজান্তে আমার সঙ্গে সেই দুর্নীতি করে। মুখের ওপর আমাকে বলে, ‘আপনি শার এত ভালো...ইউ আর রিয়েলি এ লাভেবল ম্যান!’
এ সংসারে লাভের তো নানা প্রকারভেদ, ওকে জিজ্ঞাসা করি, আমার জন্য ওর লাভটা কোন প্রকারের। সাব্রিনা আমার মুখের দিকে চেয়ে খিল খিল হেসে বলে, ‘ওহ শার! ইউ আর শো কিউট!’
‘নেক্সট উইকে হিল ট্র্যাকটসে আমার টুর। তুমি যাবে আমার সঙ্গে?’
‘দরকার হলে কেন যাব না, শার?’
কিন্তু ওর মায়ের জ্বর আসে। মহিলা বিধবা, চারটি কন্যার জননী। সাব্রিনাই সবার বড়, এবং একমাত্র উপার্জনকারী। ওর তিনটি বোন বিদ্যালয়-মহাবিদ্যালয়-বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়া-আসা করে। ওদের খরচ জোগায় সাব্রিনা একাই। ওদের বাড়ি নাই, অন্যের বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকে; দুটি মাত্র ঘরে পাঁচজন মানুষ, বাড়িভাড়াও সাব্রিনাকেই জোগাতে হয়; বাজার খরচ, পানি, গ্যাস, বিদ্যুৎ...আপনারা তো সবই জানেন, স্ট্রাগলিং ফ্যামিলি। সাব্রিনাই একমাত্র ভরসা।
আমি হিল ট্র্যাকটসের টুর বাতিল করলাম। সাব্রিনা এক দিন অফিস কামাই দিয়ে সোমবারেই হাজির (নইলে মূল্যবান অর্জিত ছুটি কাটা যাবে)।
‘একি শার! আপনি টুরে যাননি?’
‘তোমার মার শরীর এখন কেমন?’
‘শিরিয়াশ কিছু না, শার, ভাইরাশ।’
‘টুরটা তাহলে নেক্সট উইকেই সেরে আসি, কী বল?’
ধরা-খাওয়া ভাবটা দিব্যি সামলে নিয়ে সাব্রিনা বলে, ‘ঠিকাছে, শার।’
ঘরে ফিরে বউকে বলি, ‘তোমাকে ভালোবাসি’। ওর দুই চক্ষু একটা চক্কর খেয়ে উঠে যায় কপালে, নাচানাচি শুরু করে দুই ভুরু: ‘কী ব্যাপার? মদ খেয়ে আসছ নাকি?’ আমি ঠোঁট সরু করে ওর মুখের ওপর ঝুঁকে পড়ি, ও শিকারি কুকুরের মতো গন্ধ শোঁকে। কিন্তু অ্যালকোহলের গন্ধ না পেয়ে অবাক ও খুশি হয়ে দুই হাতে বেড় দিয়ে জাপটে ধরে আমাকে, ঠোঁটে ঠোঁট রাখে, মনে হয় বলবে ‘আমিও তোমাকে ভালোবাসি’। কিন্তু এহেন মিথ্যা কথা ওর মুখ থেকে বের হয় না; ও আমার দুই ঠোঁট কামড়াতে আরম্ভ করে। আমি ব্যথা পেয়ে ‘আউ’ আর্তনাদ করে উঠলে ও খিলখিল হেসে বলে, ‘তোমার আজ কী হইছে?’

দুই
কলম্বোর এক নারী অধিকার সংস্থার চিঠি আসে; সেখানে সেমিনার হবে। আমাদের সংস্থা থেকে একজন কর্মীকে ওরা চায়। সাব্রিনার সামনে আমি একটা মুলা দোলাতে আরম্ভ করি: ‘শ্রীলঙ্কা যাবে?’
কখনো বিদেশ যাওয়ার সুযোগ পায়নি যে মেয়ে, তার বড় বড় সুন্দর চোখ দুটি আরও বড় হয়ে ওঠে: ‘আমি? শ্রীলঙ্কা!...আমি শার..., আমাকে শার, পাঠাবেন? আমার ইংলিস প্রনানশিয়েশান যা খারাপ!’ ওর ঠোঁট কাঁপে।
আমি বলি, ‘আজ বাসায় ফেরার সময় এক হালি আনারস কিনে নিয়ে যাবে। ব্লেন্ডার আছে বাসায়? জুস বানিয়ে মাকে খাওয়াবে। আবার যেন জ্বর না আসে।’
সাব্রিনা লজ্জা পেয়ে বাসায় ফিরে যায়।
কিন্তু সাব্রিনা সুলতানার পাসপোর্ট নাই। সেমিনার শুরু হতে বাকি মাত্র তিন দিন। সাব্রিনা এক দৌড়ে পাসপোর্ট অফিসে যায়। গিয়ে জানতে পারে, এক দিনের মধ্যে পাসপোর্ট পেতে হলে নগদ সাড়ে ছয় হাজার টাকা দরকার। ফিরে এসে রণে ভঙ্গ দেওয়ার ভান করে আমাকে বলে, ‘থাক শার, আমার ভাগ্যে নাই।’
তখন আমি তার ভাগ্যবিধাতা সাজি। আমার টেলিফোনে দৌড়ে চলে আসে পাসপোর্ট অফিসের এক দালাল। আমি তাকে সাত হাজার টাকা দিই। পরদিন বেলা তিনটার মধ্যে সাব্রিনা সুলতানার পাসপোর্ট নিয়ে সে হাজির। আমি তাকে আরও ৫০০ টাকা বকশিশ দিলে সে আপাদমস্তক সালাম ঠুকে নিঃশব্দে পালায় (আমার ধারণা, বেটা সাব্রিনার সঙ্গে আমার ব্যাপার টের পেয়েছিল)। সাব্রিনা জীবনে প্রথম নিজের পাসপোর্ট হাতে পেয়ে আমার মুখের দিকে এমন চোখে তাকায়, যেন আমার গলা জড়িয়ে ধরে কান্না শুরু করে দেবে।

তিন
আমার জন্য গ্রিন টি নিয়ে কলম্বো থেকে ফিরে আসে সাব্রিনা: ‘আপনি শার, এমনিতেই সবুজ। গ্রিন টি আপনাকে চিরসবুজ করে দিবে!’
আমি বলি, ‘এইবার কক্সবাজার যাওয়া যাক।’
সাব্রিনা এমন চোখে আমার চোখের দিকে তাকায়, যেন আমি একটা বাঘ আর ও হরিণের বাচ্চা।
তবু সে আমার সঙ্গে কক্সবাজার রওনা করে। তার পাশে বসে শীতাতপ-নিয়ন্ত্রিত বাসেও গরম লাগে আমার। কক্সবাজারে বাস থেকে নেমে দুজনে রিকশায় উঠলে সমুদ্র থেকে দমকা বাতাস এসে ঝাপটা মারে চোখে-মুখে।
আমি বলি, ‘বাতাসে জ্বালা।’
সাব্রিনা হেসে ভুরু নাচিয়ে বলে: ‘কিসের জ্বালা, শার?’
হোটেলে আমাদের দুজনার জন্য বরাদ্দ কক্ষ একটি, কিন্তু খাটের সংখ্যা দুই। একটি খাটের কিনারে বসে সাব্রিনা বলে, ‘এটা কি ঠিক হলো, শার? এক রুমে দুই বেড?’ আমি বিভ্রান্ত: তবে কি এক বেডের রুম নিলেই ও খুশি হতো? সাব্রিনা বলে চলে, ‘রিশিপসানের লোকেরা কী ভাবল, বলেন তো? হাজবেন্ড-ওয়াইফ কি আলাদা বেডে সোয়?’ আমি ওর গা ঘেঁষে বসে ওর ঠোঁটের একদম কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলি, ‘কে কী ভাবল তাতে কী এসে যায়?’ সাব্রিনা সরে বসে সাপের মতো ফণা তুলে বলে, ‘আলাদা রুম নিলে কী ক্ষতি ছিল বলেন তো?’ আমি কৌশলী নেউলের মতো ওর পাশ থেকে উঠে এসে বসি অন্য খাটটির কিনারে। তাকাই ওর দিকে, আমার চোখে চোখ পড়তেই ও মুখ নামিয়ে নেয়। নিচের দিকে চেয়ে মোজাইকের মেঝেতে পায়ের বুড়ো আঙুলে মাটি খোঁড়ার চেষ্টা করে।

চার
সন্ধ্যায় আমরা সৈকতে যাই। উত্তাল ফেনিল ঢেউ সবেগে ছুটে আসতে দেখে কোনো দিন সমুদ্র-না-দেখা সাব্রিনা সভয়ে আমার একটা হাত চেপে ধরে বলে, ‘উফ্্ শার! এ কী শিন!’ ঢেউ ফিরে গেলে সে আমার হাতের মুঠি থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে নিতে চায়, কিন্তু আমি ছাড়ি না। জোড়া হাত দোলাতে দোলাতে বলি, ‘চলো হাঁটি।’ সাব্রিনা তার মরাল গ্রীবা দুলিয়ে সায় দিয়ে শুভ্র দাঁতের সারি বিকশিত করে হাসে; ফিরে যাওয়া শেষ ঢেউয়ের স্মৃতিধর ভেজা বালুরেখা ধরে আমরা পাশাপাশি হেঁটে চলি। সাব্রিনা আবছায়া সমুদ্রের দিকে চেয়ে বলে, ‘এত সব্দ কী করে হয়, শার?’ সমুদ্রের নিনাদ কথাটা আমার মনে পড়ে, কিন্তু আমি কিছু বলি না। জানি, এমন অনেক মুহূর্ত আসে যখন কিছু একটা বলা দরকার বলে মনে হয়, তখন আমরা সবাই এ রকম কথা বলি, এমন প্রশ্ন তুলি যার উত্তর জানতেই হবে এমন কোনো কথা নাই।
সমুদ্রের বাতাস আমাদের ক্ষুধার্ত করে। আমরা দ্বিতীয়বারের মতো খেতে যাই। রেস্টুরেন্টে পূর্ণ চাঁদের মতো বড় বড় রুপচাঁদা ভাজা হয়, আমরা হাউমাউ করে খাই। রাত্রি ১১টা বাজে, আমি হোটেলে ফিরতে চাই কিন্তু সাব্রিনা আবার সৈকতে। সেখানে গিয়ে ওর হাত ধরে কাব্য করে বলি, ‘চলো জলে নামি।’ শিউরে ওঠে সাব্রিনা, ‘উউউ, আমার ভয় করে!’
‘ভয় কিসের? আমি আছি না?’ আমি ওর দুই কাঁধে দুহাত রেখে মুখের দিকে তাকাই: ওর ধবধবে পরিপাটি দাঁতের সারি দেখে আমার আপন বউয়ের কথা মনে পড়ে যায়। ‘তোমার দাঁতগুলি ভীষণ সুন্দর,’ বলি আমি, ‘আমার মন চাচ্ছে ওই দাঁতগুলি আমার দুই ঠোঁট কামড়ে কামড়ে খেয়ে ফেলুক!’
‘ওহ্্ শার, আপনি এত দুষ্টু!’

পাঁচ
সাব্রিনা যখন সারাটা রাত সৈকতেই কাটিয়ে দেওয়ার ফন্দি আঁটে, তখন আমি ওকে পাকড়াও করে ফিরে আসি হোটেলে। কক্ষে ঢুকি ওর কোমর জড়িয়ে ধরে। সাব্রিনা বলে, ‘শার, যা হওয়ার যথেষ্ট হয়েছে, এখন কিন্তু সংযম দরকার।’ আমি দুই হাতে ওকে জাপটে ধরে একটি খাটে দড়াম করে শুয়ে পড়ে আমার হাতঘড়ি ওর চোখের সামনে ধরে বলি, ‘দ্যাখো, সংযমের বারোটা বেজে গেছে!’
আমার প্রবল বেষ্টনী থেকে নিজেকে মুক্ত করতে সচেষ্ট সাব্রিনা কঠিন স্বরে বলে, ‘আপনি কি সত্যিই আমার সর্বনাস করতে চান?’ আমি ওর ওষ্ঠাধরের দিকে আমার চঞ্চু বাড়িয়ে বলি, ‘না, আমি চাই তুমিই আমার সর্বনাশ কর!’ সাব্রিনা মুখ সরিয়ে নিয়ে বলে, ‘আমার সম্পর্কে আপনার ধারণা একদমই ঠিক না কিন্তু!’ আমি ওর লম্বাটে থুতনিতে মৃদু কামড় বসিয়ে বলি, ‘কিন্তু আমার সম্পর্কে তোমার ধারণা হান্ড্রেড পার্সেন্ট নির্ভুল।’ সাব্রিনা ঠান্ডা স্বরে বলে, ‘তাহলে কি আপনি জোর খাটাবেন?’
আমার বলতে ইচ্ছা করে, ‘হ্যাঁ, দরকার হলে অবশ্যই জোর খাটাব। কেন তুমি আমার সঙ্গে প্রেমের ভাব কর, আর রফিকের সঙ্গে শোও?’
কিন্তু আমার বুকের ভেতর থেকে এই কথাগুলো বের হতে পারে না। আমার শরীর ঠান্ডা হয়ে আসে। সাব্রিনাকে ছেড়ে দিয়ে উঠে গিয়ে এসির সুইচটা অফ করি। তারপর শুয়ে পড়ি অন্য খাটটিতে। ওর দিকে আর ফিরেও তাকাতে ইচ্ছা করে না।
কিছুক্ষণ পর ঘরের বাতি নিভে যায়।
অনেকক্ষণ পর শুনতে পাই সাব্রিনার তরল স্বর, ‘শার কি রাগ করলেন?’
আমি সাড়া দিতে পারি না, নিঃসাড় পড়ে থাকি, চোখ বন্ধ।
‘শার? ও শার! শাআর!’ সাব্রিনার স্বর এবার ফিসফিসানির মতো শোনায়। এর মধ্যে হঠাৎ অন্ধকারে ঝংকার দিয়ে সচল হয়ে ওঠে শীতাতপ-নিয়ন্ত্রণযন্ত্র। সেই মিহি যান্ত্রিক শব্দের গভীরে থেমে থেমে বেজে চলে সাব্রিনার কণ্ঠনিঃসৃত শা শা শা ধ্বনি; ক্রমে তা কাছে আসে, যেন হামাগুড়ি দিয়ে এগিয়ে আসে আরও কাছে, তারপর আমার চোখ-মুখ পুড়ে যায় গরম নিঃশ্বাসে। ঝট করে খুলে যায় আমার দুই চোখ, দেখতে পাই আমার মুখের ওপর ঝুঁকে আছে সাব্রিনার মুখ, আঁধারে জ্বলছে ওর বড় বড় দুটি চোখ, নাক-মুখ দিয়ে একযোগে বেরিয়ে আসছে লু হাওয়া।
আমার শীতল গালে তপ্ত গাল পেতে সে বলে, ‘শার, ইউ আর শো কিউট!’
আমি নীরব।
‘বাব্বাহ! এত রাগ!’ আমার ঠান্ডা কপালে গরম কপাল রেখে বলে সে, ‘রাগটা একটু সামলানো যায় না?’
আমি কিছু বলি না। সাব্রিনার টিকোল নাকের ডগা মৃদু ঠোকর মারে আমার ভোঁতাটে নাকের ডগায়, ‘এত্ত অভিমান বাবুর!’
আমি কাত হয়ে দেয়ালের দিকে পাশ ফিরি, সে এক হাতে জড়িয়ে ধরতে চায় আমার গলা। আমার একটা হাত সরিয়ে দেয় তার ছলাকলাকুশলী হাতটাকে।
‘আমার চাকরিটা কি চলে যাবে, শার?’
আমি চমকে উঠলাম। পাশ ফিরে তাকালাম ওর দিকে: ওর চোখে-মুখে বিষ। আমি বললাম, ‘রাত অনেক হলো। এখন ঘুমানো যাক।’
‘ও মা, কেন?’
‘কেন মানে?’
‘কিছু হবে না?’
‘কী হবে?’
‘কেন, শেক্শ্্?’
‘ফাজলামো শুরু করেছ আমার সঙ্গে?’ ছোটখাটো একটা হুংকার বেরিয়ে এল আমার গলা থেকে, ‘যাও, শুয়ে পড়ো।’

ছয়
দরজায় ধাক্কার শব্দে ঘুম ছুটে গেল। বাইরে ভোর। দরজায় ধপ্ ধপ্ বেড়ে উঠলে অন্য খাটে হুড়মুড় শব্দ করে উঠে বসল সাব্রিনা: চোখে-মুখে আতঙ্ক ও বিস্ময়।
আমি উঠে গিয়ে দরজার কাছে দাঁড়াই। ‘কে?’
দরজায় আবার ধপ্্ ধপ্্, যেন কেউ ঘুষি মারছে। আমি রেগে দরজা খুলি: সামনে দাঁড়িয়ে রফিক। কোনো কথা না বলে সে আমার কপাল বরাবর এমন প্রবল এক ঘুষি বসিয়ে দিল যে আমি ছিটকে পড়লাম তিন হাত দূরে গিয়ে। চৌঁওও শব্দ করে একটা আলু গজিয়ে উঠল আমার ডান ভুরুর ঠিক ওপরে।

সাত
‘ডেকেছেন কেন?’
ঢাকায়, অফিসে আমার টেবিলের সামনে এক পায়ে ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে, কোমরে একটা হাত রেখে অন্য হাতের তর্জনীতে কপালের একগাছি চুল পেঁচাতে পেঁচাতে জিজ্ঞাসা ছুড়ে দিল সাব্রিনা। তার কণ্ঠে এখন আর ‘শার’ সম্বোধন নেই।
আমি ধমকের সুরে জিজ্ঞাসা করলাম, ‘আমরা কোন হোটেলে কত নাম্বার রুমে উঠেছিলাম, রফিক সেটা জানতে পেরেছিল কীভাবে?’
‘আমিই জানিয়েছিলাম।’
‘তুমি? কীভাবে, কখন? কেন?’
‘মোবাইলে। আপনি তখন বাথরুমে ছিলেন...’
‘আশ্চর্য! অন্য এক পুরুষের সঙ্গে হোটেলে উঠেছ, এক রুমে তার সঙ্গে রাত কাটাচ্ছ—এটা তুমি জানিয়ে দিলে তোমার প্রেমিককে? তোমার মাথায় কি কিছু আছে?’
‘ভাবতাম যে আছে। কিন্তু এখন দেখছি নাই।’
হঠাৎ আমার মেজাজ আরও তিরিক্ষি হয়ে উঠল। ইচ্ছা হলো গেট আউট বলে চেঁচিয়ে উঠি। কিন্তু নিজেকে সামলে নিয়ে বললাম, ‘ঠিক আছে। এখন যাও।’
‘ডেকেছিলেন কি এই জন্যেই?’
‘তো? আবার কী জন্যে?’
‘আচ্ছা।’
সাব্রিনা বেরিয়ে যাওয়ার জন্য দরজার দিকে পা বাড়াল। তারপর হঠাৎ থেমে ঘাড় ফিরিয়ে তাকাল আমার দিকে।
‘আবার কী?’ আমি ধমক দিয়ে উঠলাম। ওকে আর আমার সহ্যই হচ্ছিল না।
‘রফিক আর আপনার মধ্যে কোনো পার্থক্য নাই!’ বিষাক্ত কণ্ঠে বলল সে।
‘মানে?’
‘দুজনই শেইম টাইপের ইতর!’
মেঝেতে গুড়ি মেরে গট গট করে হেঁটে বেরিয়ে গেলেন মিস সাব্রিনা সুলতানা।