রহস্য উন্মোচনের টানটান কাহিনি

.
.

গোয়েন্দা কিশোর মুসা রবিন সিরিজের সাত নম্বর এ বইয়ের ঘটনার স্থল লেখকের ভাষায়, ‘ডেথ সিটি। আমেরিকার একটা অতি প্রাচীন শহর। আসল নাম গোল্ডেন ডোর সিটি। ডাইনি, ভূত-প্রেত, দৈত্য-দানব আর অদ্ভুত সব বিপজ্জনক জিনিসের বাস এখানে, বিশেষ করে ছোটদের জন্য বেশি বিপজ্জনক। ছোটরা নাম বদলে “ডেথ সিটি” রেখেছে। শহরটাকে তিন পাশ থেকে ঘিরে রেখেছে ছোট-বড় পাহাড়, এক পাশে আটলান্টিক মহাসাগর।’
ওপরে বর্ণিত এমন যে শহর, সেই শহরেই ঘটছে এমন সব ঘটনা, যার কিনারা করতে গিয়ে হিমশিম খেতে হয় যে কাউকে। গোয়েন্দা কিশোর, মুসা, রবিন এবং ওদের দুই বন্ধু কারিনা আর রোডাকেও অচিরেই আমরা দেখব, কী ভয়ানক বিপদের জটাজালে জড়িয়ে পড়ছে ধীরে ধীরে।
গোলকরহস্য নামের বইয়ের ঘটনার শুরু হচ্ছে ‘শনিবারের এক অলস বিকেলে’। সেদিন ওই পাঁচ বন্ধু মিলে বেড়াতে বেরিয়ে পরিচিত হলো যোরা নামের একটা মেয়ের সঙ্গে। ‘ওর লাজুক ভঙ্গি, অমায়িক ব্যবহার ভালো লাগল সবারই।’ যোরা নামের এই মেয়েটাই ওদের নিয়ে আসে ডেথ সিটির বিখ্যাত সেই দিঘিটার কাছে, যেখানে আসার পর তারা দেখতে পেল ‘মাটির ৩০-৩৫ ফুট ওপরে রয়েছে কতগুলো গোলক। আকারে ফুটবলের দ্বিগুণ। কোনোটা সাদা রঙের, কোনোটা হলুদ। এত উজ্জ্বল, মনে হয় জ্বলছে। ধীরে ধীরে ভেসে চলেছে।’ গোলকগুলো অবাক হয়ে দেখতে থাকে তারা। একটু পরেই আমরা জেনে উঠব, দেখতেও পাব, গোলকগুলো আসলে বিপজ্জনক কিছু। যোরাসহ ওরা যেখানে দাঁড়িয়ে ছিল, সেখানে হঠাৎ করে ‘একটা বল এগোতে শুরু করল। যোরার কাছাকাছি এসে থামল বলটা। তারপর রবিনের দিকে সরতে লাগল। বিষয়টা ভালো লাগল না কিশোরের। লাফ দিয়ে ধাক্কা মেরে রবিনকে সরিয়ে দিল ও। বলটা ছুঁয়ে ফেলল কিশোরকে।’
তারপর? তারপর থেকেই ঘটতে শুরু করল অদ্ভুত সব ঘটনা। কিশোর পরিণত হলো এক অস্বাভাবিক মানুষে। মুসা, রবিন, রোডা ও কারিনা ঘটনার মুখে হয়ে উঠল যেমন সন্দেহবাতিকগ্রস্ত, তেমনি রহস্য উদ্ঘটনেও মরিয়া। রহস্যের জট খোলার চেষ্টায় ঘুম হারাম হলো তাদের। নতুন পাওয়া বন্ধু যোরাকেও সন্দেহের তালিকাভুক্ত করে ফেলল তারা। অবশ্য এর কারণও আছে। যোরা নিজেই নিজের সম্পর্কে একবার বলছে, ‘আমার একটা অংশ এই সাগরের মতো পুরোনো, আরেকটা অংশ তোমার বয়সী। আমার দেহের বয়স বাড়ে না। হাজার হাজার বছরেও বাড়বে না।’
এরপর থেকে মরিয়া হয়ে উঠল মুসা, রবিন, কারিনা ও রোডা। মুসা ছুটল ডেথ সিটির ডাইনি এরিকা মুনের কাছে। ভয়ভীতির তোয়াক্কা না করেই। ডাইনি এরিকা মুনই জানাল সেই রহস্যের কথা—গোলকগুলো আসলে কী! জানাল, এদের কোনো নাম নেই। ‘নিজেদের দেহ নেই’। ‘অন্যের দেহ দখল করে চলাফেলা করে’। এরা ‘আত্মা’। ভিনগ্রহ থেকে আসা।
ঘটনা আধিভৌতিক হলেও কিশোরকে যেভাবে ‘আসর’ করা অবস্থা থেকে উদ্ধার করে মুসা, রবিন, কারিনা ও রোডা, ঘটনাটিকে তা বৈজ্ঞানিক কল্প-কাহিনির তুল্য করে তোলে। মি. গানকে সঙ্গে নিয়ে কিশোর ও রোডা হট এয়ার বেলুনে চড়ে কীভাবে রাসায়নিক গুঁড়ো ছিটিয়ে বজ্র, বিদ্যুৎ সৃষ্টি করে গোলকরূপী এসব আসরকারী ভিনগ্রহের আত্মাগুলোকে ডেথ সিটি-ছাড়া করল, সে কাহিনির পাঠ রীতিমতো রোমাঞ্চকর। এবং পরিশেষে, যোরার স্বরূপে ফিরে আসার ঘটনা সত্যিই মুগ্ধতার শেষ সীমায় নিয়ে যায় আমাদের। বিদেশি কাহিনি অবলম্বনে রচিত রকিব হাসানের এই উপন্যাসটি যেমন হৃদয়গ্রাহী, তেমনি তাঁর ভাষাটিও অসম্ভব ঝরঝরে। একনাগাড়ে পড়তে গিয়ে একটুও বেগ পেতে হয় না। শেষ করার পর অনাবিল আনন্দে ভরে ওঠে মন।
গোলকরহস্য
রকিব হাসান
প্রচ্ছদ ও অলংকরণ: ধ্রুব এষ
প্রকাশক: প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা
প্রকাশকাল: আগস্ট ২০১৫
৮০ পৃষ্ঠা
দাম: ২০০ টাকা।