উদ্বোধনের প্রায় সাড়ে সাত মাস পর নীলফামারীর ডোমার উপজেলার চিলাহাটি ও ভারতের হলদিবাড়ির মধ্যে পণ্যবাহী ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে। রোববার চিলাহাটি রেলস্টেশনে এসে পৌঁছায় ভারতীয় পণ্যবাহী একটি ট্রেন। ৪০টি পণ্যবাহী ওয়াগনে ২ হাজার ২৮৫ দশমিক ২০ মেট্রিক টন পাথর আসার মধ্য দিয়ে এ রেলপথে নিয়মিত আমদানি-রপ্তানির কার্যক্রম শুরু হলো।
হলদিবাড়ি রেলস্টেশন থেকে পণ্যবাহী ট্রেনটি বিকেল পাঁচটার দিকে বাংলাদেশের সীমান্তে এসে পৌঁছায়। সেখানে আনুষ্ঠানিকতা সেরে ট্রেনটি চিলাহাটি রেলস্টেশনে এসে পৌঁছায় বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে। উৎসুক জনতা করতালি দিয়ে ট্রেনটিকে স্বাগত জানায়।
২০২০ সালের ১৭ ডিসেম্বর এ রেলপথে পণ্যবাহী ট্রেন চলাচল উদ্বোধন করা হয়। এরপর এটিই চিলাহাটি স্থলবন্দর দিয়ে রেলপথে প্রথম পণ্য আমদানি-রপ্তানির কার্যক্রম।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রথম দিনের পাথর আমদানি থেকে বাংলাদেশ রেলওয়ে ভাড়া বাবদ ১৫ লাখ টাকা পেয়েছে। পাথরগুলো চায়না সেভেন ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠানের। তাদের পক্ষে সেগুলো আমদানি করেছে দিনাজপুরে সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট খান অ্যান্ড সন্স। এই পাথর আমদানি থেকে সরকারের কাস্টমস বিভাগ ১১ লাখ ১ হাজার ২৭৫ টাকার রাজস্ব আদায় করেছে।
ট্রেনটিতে পণ্যের সঙ্গে আসে ভারতীয় একটি প্রতিনিধিদল। তাঁদের মধ্যে ছিলেন ভারতীয় রেলওয়ের জ্যেষ্ঠ গার্ড মুকেশ কুমার সিং এবং লোকোমাস্টার সঞ্জিত পাল চৌধুরী ও অরজিৎ রায়। চিলাহাটি রেলস্টেশনে তাঁদের ফুল দিয়ে বরণ করে নেন পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন উপসহকারী প্রকৌশলী সুলতান মৃধা, বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তা নাসির উদ্দিন ও আনোয়ার হোসেন, বিভাগীয় লোকোমোটিভ প্রকৌশলী আশীষ কুমার, চিলাহাটি-হলদিবাড়ি রেলসংযোগ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক আবদুর রহীম, রাজস্ব কর্মকর্তা তুষার কান্তি রায়, রেলওয়ের ট্রাফিক পরিদর্শক লুৎফর রহমান, ডোমার উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) জাহিদ হাসান, চিলাহাটি স্টেশনমাস্টার আশরাফুল ইসলাম প্রমুখ।
রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, চিলাহাটি ও হলদিবাড়ি রেলপথটি স্বাধীনতা–পূর্ব সময়ে চালু ছিল। ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের জেরে ১৯৬৫ সালের ৬ সেপ্টেম্বর সেটি বন্ধ হয়ে যায়। রেলপথটি আবার চালুর উদ্যোগ নেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। উভয় দেশে রেলপথ নির্মাণের কাজ শেষে গত বছরের ১৭ ডিসেম্বর ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে পণ্যবাহী ট্রেন চলাচল উদ্বোধন করেন দুই প্রধানমন্ত্রী।
প্রথম দিনে আসা পাথরবোঝাই ট্রেনটিতে ৪০টি ওয়াগন রয়েছে। এর মধ্যে ২০টি ওয়াগনের পাথর সৈয়দপুর রেলস্টেশনে এবং বাকি ২০টির পাথর যশোরের নওয়াপাড়া রেলস্টেশনে খালাস হবে।
চিলাহাটি স্টেশনমাস্টার আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘ভারত থেকে পাথর নিয়ে ট্রেনটি আমাদের চিলাহাটি রেলস্টেশনে এসেছে। ৪০টি ওয়াগনের প্রতিটিতে ৫৯ মেট্রিক টন করে পাথর রয়েছে।’ তিনি জানান, নিয়মিত পণ্য পরিবহন শুরু হলে চিলাহাটি স্থলবন্দর থেকে রেলওয়ে প্রতিদিন ৬ লাখ থেকে ১৮ লাখ টাকা পর্যন্ত আয় করতে পারবে।