অবৈধ বিলবোর্ড আর নেই!
চট্টগ্রাম শহরে আর কোনো অবৈধ বিলবোর্ড নেই বলে দাবি করেছে সিটি করপোরেশন। এ কারণে উচ্ছেদ অভিযানের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়েছে।
১৬ নভেম্বর থেকে ৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলা অভিযানে মাত্র ৩১টি অবৈধ বিলবোর্ড উচ্ছেদ করা হয়েছে। এ হিসাব করপোরেশনের। তবে অভিযান শুরু হওয়ার আগে নভেম্বর মাসে সিটি করপোরেশন ৪২২টি অবৈধ বিলবোর্ডের তালিকা করেছিল।
সিটি করপোরেশনের দাবি অনুযায়ী, নগর পুলিশের সঙ্গে যৌথ অভিযান শুরু হওয়ার আগেই বিচ্ছিন্নভাবে ওই তালিকার ৬৮টি বিলবোর্ড উচ্ছেদ করা হয়েছে। তালিকায় থাকা বাকি বিলবোর্ডগুলো যৌথ অভিযান শুরু হওয়ার পর ব্যবসায়ীরা সরিয়ে নিয়েছেন বলে দাবি করেছেন করপোরেশনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নাজিয়া শিরিন। তাঁর নেতৃত্বেই বিলবোর্ড উচ্ছেদে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালিত হয়।
বাংলাদেশ প্ল্যানার্স ইনস্টিটিউট চট্টগ্রাম চ্যাপ্টারের সভাপতি নগর পরিকল্পনাবিদ আলী আশরাফ বলেন, সিটি করপোরেশন বলছে তারা সব অবৈধ বিলবোর্ড উচ্ছেদ করেছে। তাহলে রাস্তাঘাটে যে অসংখ্য বিলবোর্ড দেখি, সেগুলো কাদের। এগুলো কি বৈধ? সিটি করপোরেশনের হঠাৎ করে হাল ছেড়ে দেওয়া উচিত হয়নি।
এ বিষয়ে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নাজিয়া শিরিন বলেন, ‘এক মাসের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে যে অভিযান শুরু করেছিলাম, তা আপাতত শেষ করেছি। আমরা নগরের বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে পরিদর্শন করে দেখেছি, সেখানে অবৈধ বিলবোর্ড নেই। ধারণা করছি, অভিযানের চাপের কারণে ব্যবসায়ীরা অবৈধ বিলবোর্ড সরিয়ে নিয়েছেন।’
নাজিয়া শিরিন বলেন, ‘এখন আমরা নীতিমালা ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার চিন্তা করছি। এ জন্য নীতিমালা ভঙ্গকারী বিলবোর্ড ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করে সংশোধনের প্রস্তাব দেওয়া হবে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সংশোধন না হলে অভিযান চালানো হবে।’
করপোরেশন সূত্র জানায়, যৌথ অভিযানে তালিকার বাইরেও ছোট-বড় ৫২টি বিলবোর্ড উচ্ছেদ করা হয়েছে।
করপোরেশনের রাজস্ব কর্মকর্তা শামসুল ইসলাম বলেন, অভিযানে অবৈধ তালিকায় থাকা ৩১টি বিলবোর্ড উচ্ছেদ করা হয়েছে। আর বাকি বিলবোর্ডগুলো বৈধ কিংবা অবৈধ, কোনো তালিকায় ছিল না।
সিটি করপোরেশনের মেয়র মন্জুর আলম গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে তাঁর কার্যালয়ে প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রথম দফার অভিযান শেষ হয়েছে। এখন নীতিমালা না মেনে স্থাপন করা বিলবোর্ড উচ্ছেদে দ্বিতীয় দফা অভিযান চালানো হবে।’
‘রাস্তাঘাট ঠিক করেছি, আপনি বিলবোর্ড ঠিক করুন’: ‘আমি চিল্লাচিল্লি করে রাস্তাঘাট ঠিক করে ফেলেছি। আপনি বিলবোর্ডগুলো ঠিক করেন’—চট্টগ্রামের সৌন্দর্য ফিরিয়ে আনতে মেয়র এম মন্জুর আলমকে ঘরোয়া আড্ডায় একথা বলেছেন সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
মন্ত্রী ঠাট্টা করে মেয়রকে বলেন, ‘সবাই আপনাকে ভালো মানুষ বলে। আপনি তো আমাদের লোক ছিলেন। চলে গেলেন। মেয়রও হলেন। কিন্তু আপনাকে একটু সতর্ক থাকতে হবে। বিলবোর্ডের আগ্রাসনে চট্টগ্রাম নগরের সৌন্দর্য ঢেকে গেছে। চট্টগ্রামের সৌন্দর্য আগের মতো ফিরিয়ে আনেন।’
গতকাল সকালে সীতাকুণ্ডে এক্সেললোড কন্ট্রোল (গাড়ির ওজন পরিমাপক যন্ত্র) স্টেশন উদ্বোধন করার জন্য যাওয়ার পথে সিটি গেট এলাকায় স্থানীয় সাংসদ দিদারুল আলমের বাসায় যান ওবায়দুল কাদের। সেখানে মন্ত্রীর সঙ্গে মনজুর আলম সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন।
আওয়ামী লীগের সাংসদ দিদারুল আলম বিএনপি-সমর্থিত মেয়র মনজুর আলমের বড় ভাইয়ের ছেলে। সাংসদের আমন্ত্রণে মন্ত্রী ওই বাড়িতে যান। সকাল সাড়ে নয়টায় সাংসদের বাসায় যান মন্ত্রী। সেখানে ১০ মিনিট অবস্থান তিনি। ওই আড্ডার শুরুতেই ঠাট্টা করে মন্ত্রী মেয়রকে বলেন, ‘আপনার তো চাকরি থাকবে না।’
ওবায়দুল কাদের মেয়রকে বলেন, বিলবোর্ড চট্টগ্রাম নগরের সৌন্দর্য নষ্ট করছে। মেয়র হিসেবে এ বিষয়ে তাঁকে কঠিন ব্যবস্থা নেওয়ার পরামর্শ দেন।
সিডিএর বিলবোর্ড অপসারণ কার্যক্রমে আদালতের নিষেধাজ্ঞা: চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) বিলবোর্ড উচ্ছেদ কার্যক্রমে চার মাসের অন্তর্বর্তীকালীন নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন হাইকোর্ট।
চট্টগ্রামের বিজ্ঞাপনী সংস্থা এডফ্রেম ও ডিজিটাল কনসেপ্টের কর্ণধার আরশাদুল আলম গত ২৩ নভেম্বর হাইকোর্টে রিট করেন। এই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিচারপতি মির্জা হোসেন হায়দার ও বিচারপতি আতাউর রহমান খানের বেঞ্চ গত ৩০ নভেম্বর অন্তর্বর্তীকালীন নিষেধাজ্ঞা জারি করেন।
বাদীপক্ষের আইনজীবী মহিবুল এইচ চৌধুরী বলেন, ‘আদালত সিডিএর বিলবোর্ড অপসারণ কার্যক্রমে চার মাসের অন্তর্বর্তীকালীন নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন।’
সিডিএর চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম বলেন, নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি আইনগতভাবে মোকাবিলা করা হবে।