আক্কেলপুর পৌরসভার সাবেক মেয়র ও তাঁর স্ত্রীর নামে দুদকের পৃথক মামলা
জয়পুরহাট জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও আক্কেলপুর পৌরসভার সাবেক মেয়র গোলাম মাহফুজ চৌধুরী ওরফে অবসর চৌধুরী ও তাঁর স্ত্রী কামরুন্নাহার শিমুলের নামে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে সোমবার পৃথক দুটি মামলা করেন দুদক বগুড়া জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক নুর আলম।
মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দুদকের বগুড়া জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. মনিরুজ্জামান। তবে গোলাম মাহফুজ চৌধুরী দুদকের মামলার বিষয়টিকে তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হিসেবে দেখছেন। তিনি বলেন, ‘আমি জয়পুরহাট জেলা পরিষদের প্রশাসক পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছি। আমার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ আমাকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে হেয়প্রতিপন্ন করতে এই মামলা করিয়েছেন। আমার বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক মিথ্যা মামলা দিয়ে আমাকে জনগণের কাছ থেকে দূরে রাখা যাবে না। জয়পুরহাটের অনেক নেতা আছেন, যাঁদের কিছুই ছিল না। অথচ আজ তাঁরা কোটি কোটি টাকার মালিক, তাঁদের বিরুদ্ধে কেন মামলা হয় না?’
দুদকের একটি মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, গোলাম মাহফুজ ও তাঁর স্ত্রী কামরুন্নাহারের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে সম্পদ অর্জনের অভিযোগ ছিল। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তাঁকে সম্পদ বিবরণী দাখিল করতে বলা হয়। ২০১৯ সালের ৩১ জুলাই গোলাম মাহফুজ তাঁর স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ বিবরণী দাখিল করেন। তাঁর দাখিল করা স্থাবর সম্পদ দেখানো হয় ৭৬ লাখ ৭৭ হাজার ২৬৭ টাকা। অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ দেখানো হয় ৯২ লাখ ২৫ হাজার ৯৩১ টাকা। একই সঙ্গে তাঁর দেনা দেখানো হয় ৬৯ লাখ ৮৭ হাজার ৫০ টাকা। কিন্তু দুদক কর্মকর্তাদের অনুসন্ধানে গোলাম মাহফুজের স্থাবর সম্পদ ৭৮ লাখ ৪৩ হাজার ৮৮ টাকা বের হয়। এ হিসাবে তিনি ১ লাখ ৬৫ হাজার ৮২১ টাকা পরিমাণ স্থাবর সম্পদ অবৈধভাবে অর্জন করেন।
অপর মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, কামরুন্নাহার ২০১৯ সালের একই তারিখে সম্পদ বিবরণী দাখিল করেন। বিবরণীতে ৬৪ লাখ ৪২ হাজার ২৬৭ টাকা স্থাবর, ২৭ লাখ ৪ হাজার ২৫ টাকা অস্থাবর এবং ৩৫ লাখ ৬২ হাজার ৭৮৫ টাকা দেনা দেখানো হয়। বিবরণী যাচাই করে দুদক কর্মকর্তারা ৬৬ লাখ ৮ হাজার ৮৮ টাকার স্থাবর সম্পদ খুঁজে পান। তবে অস্থাবর ও দেনার পরিমাণ গরমিল পায়নি দুদক।
দুদক জানায়, গোলাম মাহফুজ ও তাঁর স্ত্রী কামরুন্নাহারের নামে জয়পুরহাটে একটি পাঁচতলা ভবন আছে। মূলত এই ভবনের আর্থিক মূল্য তাঁরা গোপন করেছেন। জেলা গণপূর্ত দপ্তর থেকে ওই ভবনের মূল্যায়ন করে তার আর্থিক হিসাব বের করা হয়েছে। প্রাথমিক তদন্তে অবৈধ সম্পদ অর্জন ও তথ্য গোপন করায় স্বামী-স্ত্রীর নামে পৃথক দুটি মামলা করা হয়েছে।
এর আগে ২০২০ সালের ২২ জুলাই সবজিবাহী ট্রাকে ১০টি বিদেশি অস্ত্র ও মাদকের চালান আটকের পর আলোচনায় আসেন গোলাম মাহফুজ চৌধুরী। ট্রাকটির মালিক ছিলেন তিনি। আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের সদস্যরা নওগাঁর বদলগাছি থেকে ঢাকাগামী সবজিবাহী একটি ট্রাক থামিয়ে তল্লাশি করে একটি স্কুলব্যাগ ও জুতার বাক্স পান। পরে স্কুলব্যাগ থেকে ১৩৬ বোতল ফেনসিডিল ও স্কচটেপ দিয়ে মোড়ানো জুতার বাক্স থেকে ১০টি ওয়ান শুটারগান পিস্তল জব্দ করা হয়।
এ ঘটনায় অস্ত্র বহনকারী জয়পুরহাট সদরের ভাদশা লালিপাড়া গ্রামের ছোটন (২০), ট্রাকচালক আক্কেলপুর উপজেলার কেশবপুর গ্রামের কাবিল হোসেন (৩০) ও চালকের সহকারী নওগাঁর বদলগাছি উপজেলার কার্তিকাহা গ্রামের সেভেন হোসেন (৩০) ও জনিকে (২৬) আটক করে পুলিশ।