আগেই রায় ফাঁসের অভিযোগ

সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর মানবতাবিরোধী অপরাধের চূড়ান্ত রায় ঘোষণার আগেই বেশ কয়েকটি অনলাইন সংবাদমাধ্যমে চূড়ান্ত রায় ফাঁস হয়ে গেছে। তবে এতে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে কী দণ্ড দেওয়া হয়েছে, সে বিষয়ে উল্লেখ করা হয়নি। ওই সংবাদমাধ্যমগুলো দাবি করেছে যে বেলজিয়ামভিত্তিক www.tribunalleaks.be সাইটে রায়-সংক্রান্ত তথ্য প্রথমে প্রকাশ করা হয়।
একটি সংবাদমাধ্যম দাবি করেছে, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ থেকে যে রায় ঘোষণা করা হয়েছে, সেটির অনুলিপি আইনসচিব আবু সালেহ শেখ মো. জহিরুল হকের অফিসের কম্পিউটারে রক্ষিত ছিল। দেখা গেছে, ঘোষিত রায়ের সঙ্গে ফাঁস হওয়া নথির কিছু অংশের মিল আছে। । ওই সংবাদমাধ্যমের সাইটে ১৭২ পৃষ্ঠার মধ্যে ১৬৭টি পৃষ্ঠা প্রকাশ করা হয়।
এ বিষয়ে আইনসচিব আবু সালেহ শেখ মো. জহিরুল হক বলেছেন, প্রথমত মামলার রায় হয় সংশ্লিষ্ট আদালত থেকে। মন্ত্রণালয় থেকে রায় লেখা হয় না, সুযোগ নেই এবং সংরক্ষণের প্রশ্নই আসে না। আপাতত যেটা ফেসবুকে দেখা যাচ্ছে, সেটা বেলজিয়ামভুক্ত একটি ব্লগ প্রকাশ করেছে। মন্ত্রণালয় থেকে এ ধরনের কোনো কিছু প্রকাশ হয়নি।
সামাজিক যোগাযোগের বিভিন্ন মাধ্যমে সাকা চৌধুরীর বিচারের রায়ের কথিত বিবরণী প্রকাশের বিষয়ে আইন প্রতিমিন্ত্রী কামরুল ইসলাম বলেছেন, রায়ের আগে এ ধরনের কথিত বিবরণী প্রকাশ ষড়যন্ত্রের অংশ। তাই এটি তদন্ত করতে বিটিআরসিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
রায়ের বিষয়বস্তু আগেই প্রকাশ হওয়া সম্পর্কে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের ব্যানারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে মওদুদ আহমদ বলেন, ‘কোর্টে ঘোষণার আগেই সেই রায় প্রকাশ হয়ে যাওয়াটা প্রত্যাশা করিনি। দেখিও নাই। নজিরবিহীন ঘটনা ঘটেছে বাংলাদেশে। আমরা মনে করি, ট্রাইব্যুনালের এই বিচার-প্রক্রিয়া প্রচলিত আইন ও আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন হয়নি। ট্রাইব্যুনালের রায় চূড়ান্ত রায় নয়। দুঃখের সঙ্গে বলতে হচ্ছে, রায় ঘোষণার আগেই ইন্টারনেটের মাধ্যমে পুরো রায়টাই পেয়ে গেছে মানুষ। অতীতে কোনোদিন শুনিনি, কোনো আদালতের রায় ঘোষণার আগে তা প্রকাশিত হয়েছে। আরও দুঃখের বিষয়, ইন্টারনেটে বলা আছে আইন মন্ত্রণালয়ে নাকি মে মাসে রায় লেখা শুরু হয়। মামলার সাক্ষ্য নেওয়া তখনো শেষ হয়নি। সুতরাং, আশা করি, এই সরকার ও ট্রাইব্যুনাল তাদের অবস্থান পরিষ্কার করবে। আর যদি না করতে পারে, মানুষের মনে এই বিচারকাজ সম্পর্কে সন্দেহ দেখা দেবে। বাংলাদেশে যারা আইনের শাসনে বিশ্বাস করেন—সাধারণ মানুষ বলেন, আদালত বলেন, আইনজীবী বলেন—আমরা কেউ এটা প্রত্যাশা করি না।’
এদিকে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেছেন, ‘এটি মিথ্যে কথা। আমি অ্যাটর্নি জেনারেল হয়ে জানতে পারলাম না; ওনারা পেলেন কীভাবে। এটি একটি মনগড়া কথা।’
তবে এ বিষয়ে আইনজীবী শাহদীন মালিক প্রথম আলো ডটকমকে বলেছেন, বিচার চলাকালে খসড়া চিন্তা, প্রাথমিক সিদ্ধান্ত বিচারকেরা লিখে রাখতেই পারেন। বিচার যখন মাসের পর মাস চলছে, অতএব চূড়ান্ত রায়ে সাহায্যের জন্য এ ধরনের খসড়া অন্যদের কম্পিউটারে কপি করে সেখান থেকে পাওয়া গেছে বলাটা কম্পিউটার নিরাপত্তার ব্যাপারে আদালতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সাবধানতার অভাব এবং ব্যাপারটি না বোঝা ইত্যাদি ধরনের অদক্ষতা ও অযোগ্যতা প্রমাণ করে। তিনি আরও বলেন, বিশেষ করে বিচারপতি নিজামুল হকের ঘটনার পর সরকারের এ ব্যাপারে আরও মনোযোগী হওয়া প্রয়োজন ছিল। কম্পিউটার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ না থাকায় ষড়যন্ত্রকারীরা রায়ের ব্যাপারে সন্দেহ সৃষ্টি করতে পারে।
রায়ের অনুলিপিতে দেখা যায়, ১৯৭১ সালের মানবতাবিরোধী মোট ২৩টি অপরাধে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়েছিল। ফাঁস হওয়া রায়ে দেখা যায়, ১৭টি অভিযোগের পক্ষে রাষ্ট্রপক্ষ সাক্ষ্যপ্রমাণ হাজির করে। এর মধ্যে মোট নয়টি অভিযোগে সাকা চৌধুরীকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে। আটটি অভিযোগ থেকে তাঁকে খালাস দেয়া হয়েছে। বাকি ছয়টি অভিযোগের সমর্থনে রাষ্ট্রপক্ষ কোনো সাক্ষ্যপ্রমাণ হাজির করেনি।