আগের অপরাধে পার পেয়ে বেপরোয়া ঢাবির ছাত্রলীগ কর্মী সিফাত

সিফাত উল্লাহ
ছবি: সংগৃহীত

আগের অপরাধে পার পেয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টারদা সূর্য সেন হল শাখা ছাত্রলীগের কর্মী সিফাত উল্লাহর বেপরোয়া হয়ে ওঠার অভিযোগ পাওয়া গেছে। সবশেষ গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় ছাত্রলীগের কর্মসূচিতে অংশ না নেওয়ার অভিযোগ তুলে হলের প্রথম বর্ষের এক শিক্ষার্থীকে মারধর করেছেন তিনি।

গতকাল সন্ধ্যায় সিফাতের মারধরের শিকার হয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ফরাসি ভাষা ও সংস্কৃতি বিভাগের (ফ্রেঞ্চ ল্যাঙ্গুয়েজ অ্যান্ড কালচার) ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র কাজী পরশ মিয়া। তিনি সূর্য সেন হলে ছাত্রলীগ নিয়ন্ত্রিত কক্ষে থাকেন।

সিফাত বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র। তিনি সূর্য সেন হলে ৩৫১ নম্বর কক্ষে থাকেন।

২০১৮ সালের জুলাইয়ে একটি মারধরের ঘটনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কৃত হয়েছিলেন সিফাত। তাঁর সেই বহিষ্কারাদেশ পরে প্রত্যাহার হয়।

গত ৭ নভেম্বর রাতে ছাত্রলীগের কর্মসূচিতে অংশ না নেওয়ার অভিযোগ তুলে সিফাত ও তাঁর এক বন্ধু তৃতীয় বর্ষের দুই শিক্ষার্থীকে ঘুম থেকে ডেকে নিয়ে মারধর করেন। এ ঘটনায় তাঁর কোনো বিচার হয়নি।

গতকালের ঘটনার ভুক্তভোগী কাজী পরশ সূর্য সেন হলের ২৪৯ নম্বর কক্ষে থাকেন। তিনি প্রথম আলোর কাছে অভিযোগ করে বলেন, ‘গতকাল সন্ধ্যা সাতটার দিকে সিফাত আমাকে হলের ৩৫১ নম্বর কক্ষে ডেকে পাঠান। ওই কক্ষে যাওয়ার পর তিনি আমাকে ছাত্রলীগের কর্মসূচিতে না যাওয়ার ব্যাপারে জেরা করতে থাকেন। আমি তাঁকে খুব বিনয়ের সঙ্গে জানাই যে পরীক্ষা থাকায় কর্মসূচিতে যেতে পারিনি। এ কথা বলার সঙ্গে সঙ্গে সিফাত আমার কলার চেপে ধরেন। তিনি আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। সঙ্গে চলে মারধর। এ সময় সিফাত আমাকে হল থেকে বের করে দেওয়ার হুমকিও দেন।’

আগের অপরাধে পার পেয়ে সিফাত বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন বলে হলের একাধিক শিক্ষার্থী অভিযোগ করেছেন।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে সিফাতের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হয়। তবে তিনি ফোন ধরেননি।

সিফাত সূর্য সেন হল শাখা ছাত্রলীগের শীর্ষ পদপ্রত্যাশী ইমরান সাগরের সক্রিয় কর্মী হিসেবে পরিচিত। ইমরান প্রথম আলোর কাছে দাবি করেন, ‘সিফাত হল শাখা ছাত্রলীগের কেউ নন। নভেম্বরের ঘটনার জেরে তাঁকে ছাত্রলীগ থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। এখন তাঁর কোনো কর্মকাণ্ডের দায় ছাত্রলীগের নয়।’

সিফাতের বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘ছাত্রলীগের পরিচয় ব্যবহার করে কেউ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করলে তাঁর বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিশ্ববিদ্যালয় ও হল কর্তৃপক্ষকেও এ ধরনের ঘটনায় ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানাই।’

মারধরের অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সূর্য সেন হলের প্রাধ্যক্ষ মোহাম্মদ মকবুল হোসেন ভূঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি ঘটনাটি শুনেছি। খোঁজ নিয়ে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছি।’

আগের নির্যাতনের ঘটনায় সিফাতের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে কি না, জানতে চাইলে মোহাম্মদ মকবুল হোসেন ভূঁইয়া বলেন, ‘ওই ঘটনায় হলের পক্ষ থেকে যা করার দরকার ছিল, তা আমরা করেছি। ঘটনাটির তদন্ত করে প্রতিবেদন প্রক্টর কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে।’