আঞ্চলিক সহযোগিতার মাধ্যমে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত হতে পারে। তাই জ্বালানি খাতে এই অঞ্চলে সহযোগিতার যে বাতাবরণ সৃষ্টি হয়েছে তা এগিয়ে নিতে হবে। দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনীতি ও মানুষের জীবনমান উন্নয়নে এর বিকল্প নেই।
দক্ষিণ এশিয়ায় জ্বালানি নিরাপত্তা নিয়ে রাজধানীতে শুরু হওয়া আন্তর্জাতিক এক সেমিনারে এই অভিমত দিয়েছেন রাজনীতিক, পেশাজীবী ও বিশেষজ্ঞরা। জাপান ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায় বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্রাটেজিক স্ট্যাডিজ (বিআইআইএসএস) দুই দিনের এই সেমিনারের আয়োজন করেছে। গতকাল বুধবার সকালে বিআইআইএসএস মিলনায়তনে এই সেমিনার শুরু হয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ার ছয়টি দেশ—বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল, ভুটান, শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তান ছাড়াও মিয়ানমার ও জাপানের প্রতিনিধিরা সেমিনারে অংশ নিচ্ছেন।
সেমিনারের উদ্বোধনী অধিবেশনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী বলেন, টেকসই জ্বালানি নিরাপত্তা এখন বিশ্বব্যাপী একটি প্রধান আলোচ্য বিষয়। জ্বালানি নিরাপত্তার জন্য প্রযুক্তি উন্নত করা হচ্ছে। জ্বালানি বহুমুখীকরণ হচ্ছে। পাশাপাশি গড়ে তোলা হচ্ছে আঞ্চলিক, উপ-আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতার বাতাবরণ। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে জ্বালানি খাতে সহযোগিতার সম্পর্ক সৃষ্টি হয়েছে। নেপাল-ভুটানের সঙ্গেও হচ্ছে। এই ক্ষেত্র ও পরিধি আরও বাড়াতে হবে। জাপান এই অঞ্চলের প্রতিটি দেশকেই সহযোগিতা করে আসছে। আঞ্চলিক সহযোগিতার ক্ষেত্রেও তারা সহযোগিতা করতে পারে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী এই অঞ্চলের জ্বালানি বাজারকে আরও নমনীয় করা, বেসরকারি খাতের অংশগ্রহণ ও জ্বালানি সংরক্ষণের ওপর গুরুত্ব দেন। তিনি বলেন, জ্বালানি সংরক্ষণের বিষয়ে জাপানের কাছ থেকে সবারই অনেক শেখার আছে।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনীতি ও মানুষের সামগ্রিক জীবনমান উন্নয়নের জন্য স্বল্পমূল্যে জ্বালানির নিশ্চয়তা প্রয়োজন। নেপাল ও ভুটানে যে বিপুল পরিমান পানিবিদ্যুৎ উৎপানের সুযোগ আছে তা কাজে লাগিয়ে এই নিশ্চয়তার পরিবেশ সৃষ্টি করা সম্ভব। সে লক্ষ্যে বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল ও ভুটান কাজ করছে। এই সহযোগিতার ক্ষেত্র আরও বাড়ানো দরকার। তিনি জ্বালানি ব্যবহারে অগ্রাধিকার নির্ধারণের ওপর জোর দিয়ে বলেন, সরকার আবাসিক খাতে এলপি গ্যাসের ব্যবহার বাড়াতে মাস খানেকের মধ্যে এর মূল্য নির্ধারণ ও সরবরাহ বিষয়ে কিছু নীতিগত সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে। অদক্ষ সার কারখানাগুলো চালানো হবে কি না, সে সিদ্ধান্তও সরকারকে নিতে হবে। জ্বালানির সরবরাহ বাড়ানোর জন্য ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ ছাড়াও স্থলভাগে দুটি এলএনজি প্লান্ট স্থাপনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত মাসাতো ওয়াতানাবে বলেন, দক্ষিণ এশিয়ায় জ্বালানি খাতে সহযোগিতার বিশাল ক্ষেত্র ও বিপুল সম্ভাবনা বিদ্যমান। এ সম্ভাবনা কাজে লাগিয়ে এই অঞ্চলকে জ্বালানি নিরাপত্তার লক্ষ্যে অগ্রসর হতে পারে। জাপান এ ক্ষেত্রে সহযোগিতা করতে প্রস্তুত। তিনি বলেন, জ্বালানি বহুমুখীকরণ ও প্রযুক্তিগত উন্নয়নের মাধ্যমে তাঁর দেশ টেকসই জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে। একসময় জাপানে মোট ব্যবহৃত জ্বালানির ৪৩ শতাংশ ছিল তেল। এ ছাড়া ছিল কয়লা, গ্যাস ও পারমাণবিক জ্বালানি। এখন কয়লা ও নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বাড়িয়ে তেলের ব্যবহার ১০ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনা হয়েছে।
‘এনার্জি সিকিউরিটি ইন সাউথ এশিয়া প্লাস: রিলিভেন্স অব জাপানিজ এক্সপেরিয়েন্স’ শীর্ষক এই সেমিনারের উদ্বোধনী অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন বিআইআইএসএসের পরিচালনা পরিষদের চেয়ারম্যান রাষ্ট্রদূত মুন্সী ফয়েজ আহমেদ। স্বাগত বক্তব্য দেন প্রতিষ্ঠানের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল এ কে এম আবদুর রহমান।
উদ্বোধনী অধিবেশনের পর দুটি কর্ম অধিবেশন হয়। প্রথমটিতে সভাপতিত্ব করেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ম. তামিম। এ অধিবেশনে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ভারতের জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মহেন্দ্র পি লামা এবং জাপানের ইনস্টিটিউট অব এনার্জি ইকোনমিকসের সহকারী পরিচালক ইচিরো কোটানি।
দ্বিতীয় কর্ম অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক নুরুল ইসলাম। এ অধিবেশনে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ভারতের সাবেক বিদ্যুৎসচিব আর ভি শাহী, মিয়ানমারের একটি এনার্জি কোম্পানির প্রধান নির্বাহী পি ওয়া তুন এবং বিআইআইএসএসের মহাপরিচালক।
আজ বৃহস্পতিবার সেমিনারের দ্বিতীয় দিনেও দুটি কর্ম অধিবেশন ও শেষে সমাপনী অধিবেশন হবে।