আদালত চত্বরে হোঁচট খেয়ে পড়ে গেলেন পরীমনি
তৃতীয় দফায় আরও এক দিনের রিমান্ড মঞ্জুর হওয়ার পর এজলাস থেকে বেরিয়ে আসার সময় আদালত চত্বরে হোঁচট খেয়ে পড়ে যান চিত্রনায়িকা পরীমনি। পরে পুলিশের নারী সদস্যরা পরীমনিকে সেখান থেকে হাজতখানায় নিয়ে যান।
ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে আজ বৃহস্পতিবার পরীমনির রিমান্ড শুনানি হয়। বনানী থানার মাদক মামলায় তৃতীয় দফায় আদালত এক দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। রিমান্ড শুনানির দিন থাকায় চিত্রনায়িকা পরীমনিকে আজ সকাল সাড়ে আটটার দিকে কাশিমপুর মহিলা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ঢাকার সিএমএম আদালতে হাজির থানায় আনা হয়। পরে তাঁকে রাখা হয় হাজতে। বেলা ১১টা ২৫ মিনিটে পরীমনিকে আদালতের এজলাসকক্ষে তোলা হয়। তখন ওই কক্ষে আইনজীবীতে কানায় কানায় ঠাসা ছিল।
প্রায় ৪৫ মিনিট শুনানি হয়। এরপর পুলিশ পরীমনিকে আদালত থেকে হাজতে নিয়ে যাওয়ার উদ্যোগ নেয়। প্রথমে তাঁকে সাততলা থেকে পুলিশের নারী সদস্যদের কড়া প্রহরায় লিফটে করে নিচে আনা হয়। তারপর আদালতের প্রধান ফটক থেকে তাঁকে হাজতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। একপর্যায়ে পরীমনি হোঁচট খেয়ে পড়ে যান। তখন পুলিশের নারী সদস্যরা তাঁকে উঠিয়ে হাজতখানার ভেতর নিয়ে যান।
এদিকে রিমান্ড শুনানি শেষে চিত্রনায়িকা পরীমনির আইনজীবী মুজিবুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, পরীমনির সঙ্গে তাঁর আজ কথা হয়েছে। পরীমনি বলেছেন, তিনি খুবই অসুস্থ। তিনি ভার্টিগো রোগে আক্রান্ত। তাঁকে নিয়মিত ওষুধ খেতে হচ্ছে।
আদালত ঠাসা আইনজীবীতে:
শুনানির সময় এজলাসকক্ষে বিপুলসংখ্যক আইনজীবী ছিলেন। এত উপস্থিতির কারণে যে আইনজীবীরা শুনানি করছিলেন, তাঁদের বক্তব্য ঠিকমতো শুনতে পারছিলেন না আদালত। অন্য আইনজীবীদের অনেকেই তখন নিজেদের মধ্যে কথা বলছিলেন। একপর্যায়ে বিরক্ত হয়ে উপস্থিত আইনজীবীদের উদ্দেশে আদালত বলেন, ‘যেসব আইনজীবীর এই আদালতে মামলার শুনানি নেই, তাঁরা দয়া করে এজলাসকক্ষ ত্যাগ করেন। কেউ যদি পরীমনিকে দেখার উদ্দেশ্যে এসে থাকেন, তাহলে তিনিও দয়া করে বের হবেন।’ এরপর চিত্রনায়িকা পরীমনির মামলায় রিমান্ড শুনানি শুরু হয়।
পরীমনির এক দিনের রিমান্ড:
শুনানির শুরুতে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতের প্রধান পাবলিক প্রসিকিউটর আবদুল্লাহ আবু পরীমনিকে রিমান্ডে নেওয়ার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন। তিনি আদালতকে বলেন, পরীমনির বাসা থেকে বিদেশি মদসহ নতুন ধরনের মাদক আইস ও এলএসডি পাওয়া গেছে। ভয়াবহ এই মাদকের উৎস জানার জন্য পরীমনিকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা জরুরি। এর আগে পরীমনি বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়েছেন। এরপর আদালত মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার বক্তব্য জানতে চান।
তদন্তকারী কর্মকর্তা তখন আদালতকে বলেন, এই মাদকের উৎস কোথায়, অর্থ কোথায়, সেটি জানার জন্য পরীমনিকে রিমান্ডে নেওয়া দরকার। রাষ্ট্রপক্ষের বক্তব্য শেষ হলে পরীমনির আইনজীবী মুজিবুর রহমান আদালতকে বলেন, ইতিমধ্যে পরীমনিকে দুই দফায় মোট ছয় দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ। নতুন করে জিজ্ঞাসাবাদ করার কিছু নেই। কেন তাঁকে বারবার রিমান্ডে নিতে হবে? যদি জিজ্ঞাসাবাদ করার প্রয়োজন হয়, তাহলে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদ করার সুযোগ রয়েছে। এরপর তিনি পরীমনির জামিনের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন। তিনি আদালতে বলেন, পরীমনি একজন নারী। তিনি অসুস্থ। পলাতক হবেন না। নারী বিবেচনায় তাঁকে জামিন দেওয়া হোক। আদালত উভয় পক্ষের বক্তব্য শুনে পরীমনিকে তৃতীয় দফায় এক দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি দেন এবং তাঁর জামিন আবেদন নাকচ করেন।
এদিকে বেলা সাড়ে ১১টার পর চিত্রনায়িকা পরীমনির নানা শামসুল হক দ্বিতীয় দিনের মতো ঢাকার সিএমএম আদালতের সামনে আসেন। পরীমনির আরেক আইনজীবী নীলাঞ্জনা রিফাত প্রথম আলোকে বলেন, পরীমনির সঙ্গে তাঁর নানার কথা হয়নি। তবে দূর থেকে পরীমনিকে তিনি একনজর দেখেছেন। পরীমনির রিমান্ড শুনানি শেষ হলে তিনি আদালত চত্বর ত্যাগ করেন।
৪ আগস্ট চিত্রনায়িকা পরীমনিকে তাঁর বনানীর বাসা থেকে বিদেশি মদসহ গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে দাবি করে র্যাব। এরপর দুই দফায় তাঁকে মোট ছয় দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। সর্বশেষ গত শুক্রবার তাঁকে দুই দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আদালতে হাজির করে সিআইডি। সেদিন আদালত চিত্রনায়িকা পরীমনির জামিন আবেদন নাকচ করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
গত সোমবার চিত্রনায়িকা পরীমনির জামিন চেয়ে আদালতে আবেদন করেন তাঁর আইনজীবীরা। গতকাল সেই জামিন আবেদনের শুনানির দিন ধার্য ছিল। গতকাল পরীমনির আইনজীবীরা জামিন শুনানির জন্য আদালতে হাজির হলে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে জানানো হয়, পরীমনিকে আবারও পাঁচ দিন রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করা হয়েছে। ওই আবেদনের শুনানি শেষে আদালত আজ পরীমনির এক দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন।