১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসে ক্লাস নেওয়ার অভিযোগে এক মাসের ছুটিতে পাঠানো কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ভারপ্রাপ্ত প্রধান মাহবুবুল হক ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে নেওয়া সিদ্ধান্ত অবশেষে প্রত্যাহার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও গণমাধ্যমে কঠোর সমালোচনা এবং শিক্ষক সমিতি ও বঙ্গবন্ধু পরিষদের আন্দোলনের মুখে উপাচার্য অধ্যাপক মো. আলী আশরাফ ওই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।

আজ সোমবার বিকেল চারটায় ওই চিঠি প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। তবে তদন্ত কমিটির ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মো. মজিবুর রহমান মজুমদার বিকেলে প্রথম আলোকে জানান, শিক্ষক সমিতির দাবি ও উদ্ভূত পরিস্থিতি বিবেচনা করে উপাচার্য মহোদয় ১৭ আগস্টের চিঠি প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। তদন্ত কমিটি নিয়ে কোনো কথা হয়নি।

তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় মাহবুবুল হক ভূঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘কোনো ধরনের প্রক্রিয়া অনুসরণ না করে উপাচার্য এক মাসের ছুটি দিয়েছেন। আবার তিনি নানামুখী চাপে পড়ে সেটি প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়েছেন। ভবিষ্যতে তদন্ত কমিটি দিয়ে আমার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারেন। তাই আমি তদন্ত কমিটিও বাতিলের দাবি জানাচ্ছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা অনিয়ম ও দুর্নীতি এবং বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণে অনিয়ম ও দুর্নীতি নিয়ে কথা বলায় উপাচার্য ব্যক্তিগত আক্রোশ থেকে আমার বিরুদ্ধে সেদিন (১৭ আগস্ট) ওই সিদ্ধান্ত নেন, যা অনভিপ্রেত, দুঃখজনক।’

এ প্রসঙ্গে উপাচার্য মো. আলী আশরাফের মোবাইলে একাধিকবার ফোন করা হলেও সেটি বন্ধ পাওয়া যায়। তবে তাঁর দপ্তরের সেকশন অফিসার হোসাইন মোরশেদ ফরহাদ বলেন, স্যার শারীরিকভাবে অসুস্থ। তাই ক্যাম্পাসে আসেননি। বাসায় বসে তিনি ফাইলে ও চিঠিতে সই করেন।

শিক্ষক সমিতির সভাপতি মো. আবু তাহের বলেন, একই ঘটনায় এক মাসের ছুটি ও তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কিন্তু ছুটি প্রত্যাহার করা হয়েছে। কিন্তু তদন্ত কমিটি প্রত্যাহার করা হয়নি। এ অবস্থায় কিছুক্ষণের মধ্যে শিক্ষক সমিতি বৈঠকে বসবে। ওই বৈঠক থেকে যা সিদ্ধান্ত আসে, তা পরবর্তী সময়ে জানানো হবে।

১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসের দিনে ক্লাস নেওয়ার অভিযোগ তুলে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে গত বৃহস্পতিবার এক মাসের ছুটিতে (২০ আগস্ট থেকে ১৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত) পাঠানো হয় গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ভারপ্রাপ্ত বিভাগীয় প্রধান মাহবুবুল হক ভুঁইয়াকে (তারেক)। একই সঙ্গে সিন্ডিকেট সদস্য মোসলেহ উদ্দিন আহমেদকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। এ ঘটনায় গত বৃহস্পতিবার রাত নয়টা পর্যন্ত উপাচার্য মো. আলী আশরাফকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবরুদ্ধ করে রাখে শিক্ষক সমিতি। উপাচার্য তিন ঘণ্টা গাড়িতে বসে থাকার একপর্যায়ে গাড়ি থেকে নেমে হেঁটে বাঙলোতে চলে যান। গত রোববার উপাচার্যকে বেলা ১১টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত অবরুদ্ধ করে রাখে শিক্ষক সমিতি ও বঙ্গবন্ধু পরিষদ। ওই কারণে রোববার নিজ কার্যালয়ে প্রবেশ করতে পারেননি উপাচার্য। এতে করে বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ কমিটির সভাও হয়নি। আজ সোমবার উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয়ে যাননি। তবে বাসায় বসে তিনি ছুটির সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে নেন।