মা সাফিয়া বেগমের কাছে আদুরির একটাই আবদার, ‘মা, আমি যদি ভালা হই, আমারে আর তুমি এইহানে থুইয়্যা যাবা না।’ মেয়ের এই আবদারের কথা জানিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়ে সাফিয়া বলেন, ‘আমি আর ভুল করুম না। মাইয়্যারে আর মানুষের বাড়িত কামে দিমু না।’
গতকাল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) কথা হয় আদুরির মায়ের সঙ্গে। সেখানেই চিকিৎসাধীন রয়েছে নির্যাতনের শিকার শিশু গৃহকর্মী আদুরি। নির্যাতনের পর বারিধারা ডিওএইচএস এলাকার একটি ডাস্টবিনে ফেলে দেওয়া হয়েছিল হাড় জিরজিরে আদুরিকে। ২২ সেপ্টেম্বর তাকে সেখানে অর্ধমৃত অবস্থায় খুঁজে পান দুই নারী। পরে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
ওসিসিতে দেখা যায়, মাথায় একটি হাড়ে চিড় থাকায় আদুরির মাথা ন্যাড়া করে দেওয়া হয়েছে। মাথায় ও হাতে ব্যান্ডেজ। মুখের চারপাশে ঘা। লিকলিকে শরীরে শুয়ে আছে বিছানায়।
সকালে মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ আদুরিকে দেখতে যান। তার জন্য জামা ও ফল নিয়ে যান। আদুরিকে দেখে বের হয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, আদুরির মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের আওতায় এনে বিচার করা প্রয়োজন। এ মামলায় দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হলে অন্যরাও গৃহকর্মী শিশুদের নির্যাতন করতে ভয় পাবে।
এ সময় মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব তারিক-উল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন এবং আদুরির শারীরিক অবস্থার খোঁজখবর নেন।
আদুরির মা জানান, তাঁর এখন একটাই চাওয়া—তাঁর মেয়েকে যেভাবে মেরেছে, তাদেরও যেন ঠিক একইভাবে মারা হয়, কঠোর শাস্তি দেওয়া হয়। ওসিসির সমন্বয়কারী চিকিৎসক বিলকিছ বেগম বলেন, আদুরির শারীরিক অবস্থা ধীরে ধীরে ভালো হচ্ছে।
আদুরির এক বোনের খোঁজ নেই: সাফিয়া বেগম জানান, অভাবের কারণে এলাকার চুন্নু মিয়ার মাধ্যমে তিনি আদুরি ও আরেক মেয়েকে ঢাকায় কাজ করতে পাঠিয়েছিলেন। তারা কোথায়, কার বাসায় কাজ করে তিনি জানেন না। আদুরির বেতনের ৫০০ টাকা চুন্নু মিয়া তাঁর হাতে দিতেন। আদুরির এই খোঁজ চুন্নু মিয়াই তাঁকে ফোনে দেন। তিনি শুনেছেন, অন্য মেয়ে নাকি এক জজ সাহেবের বাসায় কাজ করে। এখন চুন্নু মিয়ার ফোনও বন্ধ। প্রতিবেদককে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে আদুরির মায়ের আকুতি, ‘আমার আরেক মাইয়্যারেওআইন্যা দেন। দুই মাইয়্যারে নিয়া দেশে যামু।’