ঈদে বাসে বাড়ি যেতে গুনতে হবে বাড়তি ভাড়া
জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির পর বাসমালিকদের চাপে ভাড়া বাড়িয়েছে সরকার। যার ফলে এবার ঈদুল ফিতরে বাড়ি যেতে বাড়তি ভাড়া গুনতে হবে যাত্রীদের। এর মধ্যেই আবার ঈদ সামনে রেখে বাড়তি ভাড়া আদায়ের অভিযোগ উঠেছে বাসমালিকদের বিরুদ্ধে। যাত্রীদের অভিযোগ, এসি বাসগুলোর ভাড়া চাওয়া হচ্ছে প্রায় দ্বিগুণ। তবে বাসমালিকেরা বলছেন, সরকারনির্ধারিত বাসভাড়াই নেওয়া হচ্ছে যাত্রীদের কাছ থেকে। আর এসি বাসের ভাড়া চাহিদা অনুযায়ী নির্ধারণ করেন মালিকেরা।
আজ শুক্রবার ঈদের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু করেছে কয়েকটি বাস। রাজধানীর গাবতলীতে বাসের টিকিট কিনতে এসেছেন রুহুল আমিন নামের এক ব্যক্তি। তিনি যাবেন দিনাজপুরের খেতাবগঞ্জে। রুহুল আমিন হানিফ পরিবহনের ২৮ এপ্রিলের টিকিট কেটেছেন ৮৫০ টাকায়। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘মাসখানেক আগে সর্বশেষ বাড়িতে গিয়েছিলাম। তখন ভাড়া ছিল ৮০০ টাকা। কিন্তু টিকিট বিক্রেতারা বলছেন, ৮৫০ টাকাই নাকি স্বাভাবিক ভাড়া। অন্য সময় তাঁরা কম রেখেছেন যাত্রী কম থাকার কারণে।’
রুহুল আমিন আরও জানান, গত বছর কোরবানির ঈদেও তিনি খেতাবগঞ্জ গিয়েছিলেন ৬০০ টাকা ভাড়া দিয়ে। তেলের মূল্যবৃদ্ধির পর থেকে ৮০০ টাকা ভাড়া নেওয়া হয়। এখন আবার ৮৫০ টাকা নিচ্ছেন বাসমালিকেরা। অনেকটা ক্ষোভ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এখন মড়ার উপর খাঁড়ার ঘার মতো অবস্থা। পরিবারের সবার যাতায়াতেই চলে যাবে ৮ হাজার টাকার মতো।’
বাড়তি ভাড়া আদায়ের অভিযোগ অস্বীকার করছেন বাসমালিকেরা। তাঁদের দাবি, অন্য সময় সরকারনির্ধারিত ভাড়ার ওপর যাত্রীদের ছাড় দেওয়া হয়। ঈদে সেটা হচ্ছে না। তাই যাত্রীদের কেউ ভাবছেন, বর্ধিত ভাড়া নেওয়া হচ্ছে।
রাজধানীতে উত্তরবঙ্গ ও দক্ষিণাঞ্চলগামী বেশির ভাগ বাসের টিকিট বিক্রি হয় গাবতলী ও কল্যাণপুরে। আজ দুপুরে এই দুটি বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা যায়, বাসের অগ্রিম টিকিট বিক্রির প্রথম দিনে যাত্রীদের খুব একটা ভিড় নেই। অনেক পরিবহন টিকিট বিক্রি শুরু করছে অনলাইনে। টিকিট বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রথম দিন ২৮ ও ৩০ এপ্রিলের টিকিটের চাহিদা বেশি।
তবে অনেক পরিবহন এখনো অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু করেনি। গ্রীন বাংলা পরিবহনের কাউন্টারের টিকিট বিক্রেতা মাসুদ পারভেজ প্রথম আলোকে বলেন, এখনো কেউ অগ্রিম টিকিটের জন্য আসেননি। তাই টিকিটের চাহিদা বোঝা যাচ্ছে না। সে কারণেই তাঁরা অগ্রিম টিকিট বিক্রির সিদ্ধান্ত এখনো নেননি।
অগ্রিম টিকিট বিক্রি করা কয়েকজন বাসমালিকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শুক্রবার বেলা তিনটা পর্যন্ত শ্যামলী পরিবহন প্রায় ২০ শতাংশ, সোহাগ পরিবহনের প্রায় ৬০ শতাংশ (এসি বাস) ও প্রায় ৪০ শতাংশ (নন-এসি), হানিফ পরিহনের ২০ শতাংশের মতো টিকিট বিক্রি হয়েছে।
রাজধানীর কয়েকটি টার্মিনাল ঘুরে দেখা গেছে, এসি বাসগুলোর ভাড়া তুলনামূলক বেশি রাখা হচ্ছে। যাত্রীদের অভিযোগ, স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে এসি বাসের ভাড়া নেওয়া হচ্ছে প্রায় দ্বিগুণ।
আনিস মোহাম্মদ নামের এক যাত্রী প্রথম আলোকে বলেন, স্বাভাবিক সময়ে রংপুর পর্যন্ত এসি বিজনেস ক্লাসে ১ হাজার ৪০০ টাকার বেশি কেউ নিত না। কিন্তু আজ সহজ ডটকমে (অনলাইনে বাসের টিকিট বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠান) এসি বিজনেস ক্লাসে এস আর ট্রাভেলস, নাবিল পরিবহন, শাহ আলী পরিবহনে ভাড়া দেখাচ্ছে ২ হাজার ২০০ টাকা। তাই এসি বাদ দিয়ে পরিবারের চার সদস্যের জন্য নন-এসি বাসের টিকিট কিনতে এসেছেন।
এসব অভিযোগের বিষয়ে কথা হয় বাংলাদেশ বাস-ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান রমেশ চন্দ্র ঘোষের সঙ্গে। শ্যামলী পরিবহনের এই মালিক প্রথম আলোকে বলেন, যাত্রীদের অনেকেই অতিরিক্ত ভাড়ার কথা বলছেন। আসলে বাসমালিকেরা সারা বছরই নানা রকম ছাড় দিয়ে থাকেন। কিন্তু ঈদে পিক আওয়ার বলে দেন না। আর গাড়ি যাওয়ার সময় পুরো ভরে যায়, ঢাকা ফেরার সময় যাত্রী পাওয়া যায় না।
এসি বাসে ভাড়া বেশি রাখার বিষয়ে রমেশ চন্দ্র ঘোষ বলেন, এসি বাসে সরকারনির্ধারিত ভাড়া নেই। মালিকেরা নিজেদের মতো ভাড়া ঠিক করে নেন।
এই বাসমালিকের দাবি, স্বাভাবিক সময়ে নির্ধারিত এলাকার বাসে চলাচলের সময় আগে নেমে গেলে সে অনুসারেই ভাড়া রাখা হতো। কিন্তু নির্ধারিত অঞ্চলের বাসে চড়লে যাত্রী যেখানেই নামুক, পুরো ভাড়া রাখা হচ্ছে। উদাহরণ হিসেবে তিনি জানান, টেকনাফের বাসে করে কেউ কক্সবাজার গেলে টেকনাফের ভাড়াই দিতে হবে। যাত্রীদের বোঝানো হচ্ছে বিষয়টি। মালিকদের দিকটাও তো দেখতে হবে।