ঈদে হবে নিরাপদ ও স্বস্তির আনন্দযাত্রা

জনসাধারণের চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়ার পর পদ্মা সেতুছবি: সাজিদ হোসেন

রোববার ঈদ। তাই বৃহস্পতিবার অফিস শেষ করার পরই গ্রামের বাড়ির উদ্দেশে রওনা দেন তামান্না ইয়াসমিন। সদ্য বিশ্ববিদ্যালয় পাস করা তামান্নার চোখে-মুখে বাড়ি যাওয়ার আনন্দ। পরিবারের সঙ্গে ঈদ উদ্‌যাপনের নানা পরিকল্পনা মাথায়। কিন্তু সেই আনন্দ বিষাদে পরিণত হতে বেশি সময় লাগেনি।

কেন? শোনা যাক তামান্নার মুখেই, ‘প্রথম ধাক্কা খাই বাসকাউন্টারের গিয়ে। দীর্ঘ সময় টিকিট কাউন্টারে দাঁড়িয়ে থেকে নড়াইলে যাওয়া-আসার সরাসরি বাসের কোনো টিকিট পাইনি। তাই বাধ্য হয়ে লোকাল বাসে যাত্রা শুরু করি ফেরিঘাটের দিকে। কিছু সময় পর পর লোক ওঠানো আর রাস্তায় জ্যামের কারণে মাওয়া ফেরিঘাটে পৌঁছাতে প্রায় তিন ঘণ্টা লেগে যায়। ঘাটে তো মানুষের সমুদ্র। যে যার মতো ছুটছে। ছুটে চলার ওই যুদ্ধে নিজেকে শামিল করে অবশেষে একটি ফেরিতে জায়গা হয় আমার।’ বলেই একটু বিরতি নেন তামান্না।

ততক্ষণে বোঝা যায়, তামান্নার সেই আপনজনের টানে বাড়ি যাওয়ার স্বপ্ন পরিণত হয়েছিল দুঃস্বপ্নে। তামান্না বলেন, ‘পদ্মার ওই পারে, কাঁঠালবাড়ি ফেরিঘাটে নামতে নামতে মাঝরাত। এরই মধ্যে বাড়ি থেকে কিছুক্ষণ পর পর ভিডিওকলে মাকে আপডেট জানানো তো চলছেই। দিনের আলো যখন ফুটতে থাকে, কোনোমতে নড়াইলের একটা বাসে ক্লান্ত শরীরটার একটু ঠাঁই হয়।’

শুধু তামান্না নয়, এমন ঝুঁকি আর ভোগান্তি নিয়েই এতদিন পদ্মা নদী পাড়ি দিতে হয়েছে পদ্মার দুই পারের মানুষদের। যাত্রাপথের এই অনিশ্চিয়তা আর ভোগান্তির কারণেই গত পাঁচ বছরে কোনো উৎসবে বাড়ি যাননি তামান্না রহমান। বাড়ি যাওয়ার কথা মনে হলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে সেই দুঃসহ স্মৃতি।

এবারের চিত্র ভিন্ন। পাঁচ বছর পর আপনজনের টানে স্বপ্ন নিয়ে বাড়ি যাবেন তামান্নার মতো লাখ লাখ চাকরিজীবী। উচ্ছ্বাসটাও তাই ধরা পড়ল তামান্নার কণ্ঠে, ‘এবার ঈদে ফুরফুরে মনে আনন্দ নিয়ে বাড়ি যাব। যাত্রাপথে কোনো ঝামেলা নেই। অফিস শেষে রওনা দিয়ে অল্প সময়ের মধ্যেই বাড়ি পৌঁছাতে পারব। পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পরদিন থেকেই বাড়ি যাওয়ার জন্য মনটা উতলা হয়ে ছিল। মাও প্রতিদিন ফোন করে জানতে চান কবে বাড়ি আসব।’

দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের জীবনে আশীর্বাদ হয়ে এসেছে পদ্মা সেতু। ঈদের সময় ফেরি, লঞ্চ বা স্পিডবোটের ঝক্কিঝামেলা ছাড়াই অতি অল্প সময়েই এখন গ্রামের বাড়িতে যাতায়াত করতে পারবেন তাঁরা। উপভোগ করতে পারবেন নিরাপদ ও স্বস্তির ঈদযাত্রা।