ঈদ আনন্দে বাড়ছে পারিবারিক বন্ধন

জাজিরা প্রান্ত থেকে পদ্মা সেতুছবি: সাজিদ হোসেন

সুমাইয়া আফরোজার বিয়ে হয়েছে প্রায় সাত বছর। শ্বশুরবাড়ি ফরিদপুর জেলায়। পদ্মার ওই পারে হওয়ার কারণে কখনোই নিজের মা–বাবাকে নিয়ে যাওয়া হয়নি। কারণ, সুমাইয়ার বৃদ্ধ মা-বাবার পক্ষে লঞ্চ, ফেরি বা স্পিডবোটে উত্তাল পদ্মা নদী পাড়ি দেওয়া সম্ভব ছিল না। প্রমত্ত পদ্মার ওপর সেতু হওয়ার পর এবার শ্বশুরবাড়িতে সবাই মিলে ঈদ করবে। সুমাইয়া আফরোজা বলেন, ‘আমার বাবার পরিবারের সবাই ঢাকাতেই থাকে। কিন্তু শ্বশুর-শাশুড়ি গ্রামের বাড়ি ফরিদপুরে থাকেন। তাই প্রতি ঈদে স্বামীর সঙ্গে গ্রামের বাড়ি যেতে হতো আমার।’

বিয়ের সাত বছর হয়ে গেলেও মেয়ের শ্বশুরবাড়িতে যাওয়া হয়নি সুমাইয়ার মা–বাবার। নদী পার হতে ভয় পাওয়ায় নিজের মা-বাবাকে কখনোই বেড়াতে নিয়ে যাওয়া হয়নি ফরিদপুর। কিন্তু এবার সেই আফসোস আর অতৃপ্তিগুলো পূরণ হতে চলছে। সুমাইয়া আফরোজ এবার আপনজনের টানে, আপনজনদের নিয়ে স্বপ্নের ঈদ উদ্‌যাপন করতে পারবেন নিশ্চিন্তে।

পদ্মা সেতু পাড়ি দিয়ে এবার মা–বাবাকে নিয়ে ফরিদপুরে যাবেন সুমাইয়া। দীর্ঘদিনের ইচ্ছা পূরণ হবে তাঁর। দুই পরিবার একসঙ্গে ঈদ করবেন। কতটা খুশি সুমাইয়া? বলতে গিয়ে ঝলমল করে ওঠে তাঁর চোখ-মুখ, ‘এ অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না। আমার মা-বাবার খুব শখ ছিল একবার আমার শ্বশুরবাড়িতে সবাই মিলে ঈদ করার। কিন্তু উত্তাল পদ্মা পাড়ি দেওয়ার ভয় আর অনিশ্চয়তার কারণে সেটা সম্ভব হয়নি। পদ্মা সেতু হওয়ার কারণে এবার আমাদের সেই আশা পূরণ হবে।’

সুমাইয়ার মতো টুম্পা-সাগর জুটিরও দীর্ঘদিনের স্বপ্ন আর আশা পূরণ হবে এবার। সদ্য বিয়ে হওয়ায় এই দম্পতি প্রথমবার পদ্মা সেতু পার হয়ে ঈদ করতে যাবে পরিবারের সঙ্গে। বিয়ের পর এত দিন শ্বশুর-শাশুড়ির সঙ্গে ভিডিওকলেই বেশি কথা হয়েছে টুম্পার। নিজের মতো করে আদর-যত্ন করা হয়নি তাঁদের।

টুম্পা বলেন, ‘শ্বশুর-শাশুড়ির আদর-ভালোবাসা সেভাবে পাওয়া হয়নি আমার। বিয়ের সময় এক দিন থেকেই গ্রামের বাড়ি মাদারীপুরের চলে এসেছিলেন তাঁরা। এবার ঈদের সময়টা শ্বশুর-শাশুড়ি কাছে থেকেই কাটাতে পারব। এই ভালোলাগা অন্যরকম।’

সুমাইয়া কিংবা টুম্পার মতো অসংখ্য হাসি-আনন্দের গল্প এবার ঈদে পাড়ি দেবে পদ্মা সেতু। আপনজনের টানে বাড়ি যাওয়ার এই ঈদযাত্রা তাই অনেকের কাছেই স্বপ্নের মতো।