উদ্বিগ্ন হলেও আলোচনা চালিয়ে যাবে বাংলাদেশ

দুই দেশের মধ্যে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতা ও যোগাযোগ অব্যাহত রাখতে আগ্রহী বাংলাদেশ।

ছবি: সংগৃহীত

মানবাধিকার লঙ্ঘনের গুরুতর অভিযোগে র‍্যাব এবং সংস্থাটির সাবেক ও বর্তমান সাত কর্মকর্তার ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা বাংলাদেশকে উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। এরপরও দুই দেশের বিদ্যমান ‘বহুমাত্রিক সম্পর্ক’ অব্যাহত রাখার বিষটিকে বিবেচনায় নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে নানা পর্যায়ে আলোচনা অব্যাহত রাখার বিষয়ে মনোযোগ রয়েছে বাংলাদেশের।

গতকাল রোববার বিকেলে রাজধানীতে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক আলোচনা অনুষ্ঠান শেষে পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন। মার্কিন নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে পররাষ্ট্রসচিব বলেন, ‘এ সিদ্ধান্ত আমাদের উদ্বিগ্ন করে তুলেছে।’ এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা তাদের সঙ্গে নানা পর্যায়ে আরও আলোচনা চালিয়ে যাব।’

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট (রাজস্ব বিভাগ) ও পররাষ্ট্র দপ্তর র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) এবং সংস্থাটির সাবেক ও বর্তমান সাত কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা ঘোষণার পর গত শুক্রবার রাতেই মার্কিন রাষ্ট্রদূত আর্ল মিলারকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে ফোন করা হয়। গত শনিবার তাঁকে তলব করে বাংলাদেশ অসন্তোষ প্রকাশ করে।

একটা বিষয়ে প্রতিবন্ধকতা এলে সহযোগিতার বাকি বিষয়ে মুখ ফিরিয়ে নেওয়ার সুযোগ নেই। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক গুরুত্বপূর্ণ। দেশটির সঙ্গে অনেক বিষয়ে আমাদের নানা স্বার্থ জড়িত। এটা ধরে রাখতে হবে।
মো. তৌহিদ হোসেন, সাবেক পররাষ্ট্রসচিব

রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় পররাষ্ট্রসচিব ও মার্কিন রাষ্ট্রদূতের মধ্যে প্রায় ৪৫ মিনিট কথা হয়। ঢাকা ও ওয়াশিংটনে কর্মরত কূটনীতিকেরা প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, এ সময় দুই দেশের মধ্যে ভবিষ্যতে আলোচনা বাড়ানোর প্রসঙ্গ টেনে মার্কিন রাষ্ট্রদূত আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থার (ইউএসএআইডি) প্রশাসক সামান্থা পাওয়ারের বাংলাদেশ সফরের বিষয়টি উল্লেখ করেন। এ ছাড়া আগামী বছরের শুরুতে ঢাকায় দুই দেশের মধ্যে অংশীদারত্ব সংলাপ আয়োজনের বিষয়ে প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। এপ্রিলে ওয়াশিংটনে নিরাপত্তা সংলাপের আগে অর্থাৎ ফেব্রুয়ারি বা মার্চের মধ্যেই বাংলাদেশ ঢাকায় অংশীদারত্ব সংলাপ আয়োজনের কথা ভাবছে।

আরও পড়ুন

কূটনৈতিক একাধিক সূত্র গতকাল এই প্রতিবেদককে জানান, সাধারণত এ ধরনের তলবের ঘটনায় কূটনৈতিক পত্র দেওয়া হয়ে থাকে। তবে শনিবার আর্ল মিলারের হাতে কোনো কূটনৈতিক পত্র বাংলাদেশের পক্ষ থেকে দেওয়া হয়নি। ফলে অসন্তোষ জানিয়ে বাংলাদেশ যা বলেছে, আর্ল মিলার তা ওয়াশিংটনে প্রতিবেদনের মাধ্যমে জানাবেন।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা এই প্রতিবেদককে জানান, নিষেধাজ্ঞার বিষয়টিকে বাংলাদেশ গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে বলেই মার্কিন রাষ্ট্রদূতের কাছে এ নিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান স্পষ্ট করেই জানানো হয়েছে। পাশাপাশি দুই দেশের মধ্যে বিভিন্ন ক্ষেত্রে যে সহযোগিতা ও যোগাযোগ রয়েছে, তা বাংলাদেশ অব্যাহত রাখতে আগ্রহী, সেটিও জানানো হয়েছে। ভবিষ্যতে বাংলাদেশ এই যোগাযোগ ও আলোচনা আরও বাড়াতে চায়।

মার্কিন নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে শনিবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক আলোচনা শেষে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের কাছে সাংবাদিকেরা জানতে চেয়েছিলেন, ওই সিদ্ধান্ত ভূরাজনৈতিক প্রতিযোগিতার কারণে হয়েছে কি না। জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছিলেন, হতে পারে।

এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, বাংলাদেশ বিভিন্ন দেশের সঙ্গে ভারসাম্যমূলক পদক্ষেপের যে নীতি অনুসরণ করে আসছে, তাতে কোনো পরিবর্তন আসবে না। কারণ, সম্পর্ক যখন বহুমাত্রিক, একটি বিষয়কে সামনে এনে কোনো দূরত্ব তৈরি হোক, এটা বাংলাদেশ চাইছে না। তবে যুক্তরাষ্ট্রকেও বুঝতে হবে, দুই দশক আগের বাংলাদেশ এবং এখনকার বাংলাদেশ এক নয়। অব্যাহত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, ১৬ কোটি মানুষের দেশের বাজার এবং ভূরাজনৈতিক অবস্থান—এসব কারণে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও জোটের কাছে বাংলাদেশের গুরুত্ব বাড়ছে।

আরও পড়ুন

এদিকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, গতকাল সকালে পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেনের সভাপতিত্বে তাঁর দপ্তরে লিহেই আইনসংক্রান্ত বিষয়ে এক আন্তমন্ত্রণালয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও সংস্থার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। প্রসঙ্গত, যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষায়িত আইন হচ্ছে লিহেই আইন। এর আওতায় মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর ও প্রতিরক্ষা বিভাগ কোনো বিদেশি নিরাপত্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘন সত্ত্বেও দায়মুক্তির চর্চা করে থাকে, এমন বাহিনীকে সামরিক সহায়তা দেওয়া বন্ধ করতে বাধ্য হয়।

আরও পড়ুন

মার্কিন নিষেধাজ্ঞা এবং বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক পররাষ্ট্রসচিব মো. তৌহিদ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘এ ধরনের পদক্ষেপে বাংলাদেশের প্রতিবাদ জানানোটাই স্বাভাবিক। একটা বিষয়ে প্রতিবন্ধকতা এলে সহযোগিতার বাকি বিষয়ে মুখ ফিরিয়ে নেওয়ার সুযোগ নেই। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক গুরুত্বপূর্ণ। দেশটির সঙ্গে অনেক বিষয়ে আমাদের নানা স্বার্থ জড়িত। এটা ধরে রাখতে হবে।’